‘সময়মতো চিকিৎসা না হলে ৯৫ শতাংশ কালাজ্বর রোগীর মৃত্যু হয়’

0
80

সারাবিশ্বে কালাজ্বর একটি অবহেলিত রোগ। তবে সময়মতো চিকিৎসা না হলে কালাজ্বর আক্রান্ত প্রায় ৯৫ শতাংশ রোগীর মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় কালাজ্বর নির্মূলে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে সেন্টার অব এক্সিলেন্সের যাত্রা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

জাতীয় কালাজ্বর নির্মূল কর্মসূচি ড্রাগস ফর নেগলেকটেড ডিজিজ ইনিশিয়েটিভের যৌথ অংশীদারিত্বে এই সেন্টার অব এক্সিলেন্স প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, যা কালাজ্বর নির্মূলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) রাজধানীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে স্বাস্থ্য অধিদফতর আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সেন্টার অব এক্সিলেন্স কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এই সেন্টারের মাধ্যমে সকল রেফারেল কেন্দ্র ও চিকিৎসা কেন্দ্র দ্বারা রেফার করা রোগীদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা সেবা প্রদান করবে। এছাড়াও কালাজ্বর রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা জ্ঞান, দক্ষতা সংরক্ষণ ও অগ্রসর করবে। স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে দক্ষতা ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান ধরে রাখতে সাহায্য করবে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের ২৬টি জেলার ১০০টি উপজেলা কালাজ্বর প্রবণ। এসব এলাকায় বসবাসকারী প্রায় ৩৮ মিলিয়ন মানুষ কালাজ্বরের ঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশে জাতীয় কালাজ্বর নির্মূল কর্মসূচি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের কৌশলগত কাঠামো অনুসরণ করে জাতীয় কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। পরবর্তীতে বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে কালাজ্বর রোগের সংক্রমণ কমিয়ে এনেছে। এমনকি ২০১৭ সাল থেকে জাতীয় কালাজ্বর নির্মূল কর্মসূচি উপজেলা পর্যায়ে প্রতি ১০ হাজার জনসংখ্যার মধ্যে ১ জনের কম রোগী এই ধারা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ইমেরিটাস অধ্যাপক ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী কালাজ্বর একটি নেগলেকটেড ট্রপিক্যাল ডিজিজ হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। তবে এই কালাজ্বরকে কোনোভাবেই অবহেলা করা যাবে না। সময়মতো চিকিৎসা না হলে প্রায় ৯৫ শতাংশ কালাজ্বর রোগীর মৃত্যু হয়ে থাকে। ষাটের দশকে এই কালাজ্বরের চিকিৎসা হতো ব্রহ্মচারী ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে। এখন সারাদেশেই উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে। কালাজ্বর নির্মূলে শুধু চিকিৎসাই নয়, প্রিভেনশকেও আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে সচেতনতামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিতে হবে।

অধ্যাপক আবদুল্লাহ আরও বলেন, নারী মশার মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি সংক্রমক রোগ ছড়ায়। ডেঙ্গু, কালাজ্বর, চিকনগুনিয়াসহ বিভিন্ন রোগ মশার মাধ্যমে ছড়ায়। তাই সবার আগে আমাদেরকে মশা মারার দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। কালাজ্বর ছাড়াও অন্যান্য আরও কিছু সংক্রামক ব্যাধিগুলো বাড়ছে। আমাদেরকে সেগুলোর দিকে নজর দিতে হবে।

কালাজ্বর প্রতিরোধে নতুন অধ্যায় চালু হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কালাজ্বর সেন্টার অব অ্যাক্সিলেন্সের মাধ্যমে কালাজ্বর নির্মূলে দেশে নতুন একটি অধ্যায়ের সূচনা হচ্ছে। আমি আমার অবস্থান থেকে আপনাদের যতো ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন, আমি চেষ্টা করব। এ সময় কালাজ্বরসহ সংক্রামক ব্যধি হাসপাতালের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের পরিকল্পানার প্রস্তাবনা প্রণয়ণের অনুরোধ করেন তিনি এবং প্রস্তাবনটি বাস্তবায়নের জন্য সর্বোচ্চ মহলে কথা বলার আশ্বাস দেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশের এনপিও ডা. সাবেরা সুলতানা জানান, কালাজ্বর প্রোগ্রাম ও সেন্টার অব এক্সিলেন্সকে সার্বিক সহায়তা করে যাবে। এ সময় কালাজ্বর অধ্যুষিত এলাকা ময়মনসিংহ ও উত্তরবঙ্গে দিনাজপুর, রংপুর জোনে আরও ‍দুইটি সেন্টার অব এক্সিলেন্স প্রতিষ্ঠা করার বিষয়টি বিবেচনার জন্য অনুরোধ করেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আরিফুল বাশার। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা ও স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সহকারী পরিচালক ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এমএম আক্তারুজ্জামান। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ডিএনডিআইয়ের দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক ডা. কবিতা সিং।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here