বিচ্ছিন্ন হতে পারে ১১৬ বিহারি ক্যাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ

0
111

দেশের মধ্যে যেন আরেকটি দেশ বিহারি ক্যাম্পগুলো। যাদের ভাষা, আচরণ, পেশা এমনকি বিদ্যুৎ ব্যবহারের পদ্ধতিও অন্যদের চেয়ে ভিন্ন। এখন পর্যন্ত বিনামূল্যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে আসা এই জনগোষ্ঠীর ওপর আসতে পারে এবার বড় ধরনের চাপ। আইনি বাধা কেটে যাওয়ায় যেকোনো সময় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হতে পারে দেশের ১১৬টি উর্দুভাষী ক্যাম্প। এতে আতঙ্কে রয়েছেন ক্যাম্পে বসবাস করা ৫ লক্ষাধিক অবাঙালি।

১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের আগে ভারতে থাকতেন এই উর্দুভাষীরা। ভারত বিভাগের পর তদানীন্তন বাংলা, পরবর্তী সময়ে পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) অভিবাসী হয়ে আসেন। তাদের বসবাসস্থল হিসেবে গড়ে ওঠে ক্যাম্প। সেই থেকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিদ্যুৎ ব্যবহার করলেও বিল দেননি এক টাকাও। সারাদেশে ১১৬টি ক্যাম্প রয়েছে এই অবাঙালিদের।

শরণার্থী হয়ে আসা বিহারিদের বিদ্যুৎ বিল দেওয়া হতো জেনেভা কনভেনশনের সহযোগিতায়। বিল পরিশোধ করত বাংলাদেশ সরকারের ত্রাণ মন্ত্রণালয়৷

২০০৮ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পায় ক্যাম্প বাসিন্দারা। এরপর বন্ধ হয়ে যায় জেনেভা কনভেনশনের সহযোগিতা। ২০১৮ সালে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়ায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নের উদ্যোগ নেওয়া হয়৷ এতে আন্দোলনে নামে উর্দুভাষীরা। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়, পুড়িয়ে দেওয়া হয় পুলিশের গাড়িও।

এরপর উর্দুভাষী সংগঠন উর্দু স্পিকিং পিপলস ইউথ রিহ্যাবিলিটেশন মুভমেন্ট (ইউএসপিওয়াইআরএম) এর সভাপতি মো. সাদাকাত হোসেন ফাক্কু আদালতের দ্বারস্ত হন। বিদ্যুৎ সংযোগ যেন বিচ্ছিন্ন না করা হয়, সে কারণে নেন চার সপ্তাহের ‘স্ট্রে অর্ডার’। ধীরে ধীরে সে মেয়াদ বাড়ে।

 

সবশেষ গত ২ জুন দেশের সর্বোচ্চ আদালত বিহারিদের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য দায়ের করা মামলাটি খারিজ করে দেন। ফলে আইনগতভাবে উর্দুভাষী ক্যাম্পগুলোর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে আইনগত কোনো বাধা নেই।

সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আদালতের আদেশ হলেও এখনো আদেশের কপি হাতে পায়নি বিদ্যুৎ বিপণন সংস্থাগুলো। আগামীকাল ৬ জুন আদেশের কপি হাতে পাওয়ার কথা রয়েছে। এরপরই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এদিকে আদালতে আইনি লড়াইয়ে হেরে কপালে ভাঁজ পড়েছে উর্দুভাষীদের। যেকোনো সময় ক্যাম্পগুলোর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে, এমন শঙ্কায় রয়েছেন তারা।

ইউএসপিওয়াইআরএম’র সভাপতি মো. সাদাকাত হোসেন ফাক্কু বলেন, ‘আদালত আমাদের মামলাটা খারিজ করে দিয়েছেন। যেহেতু এটা সর্বোচ্চ আদালত খারিজ করেছেন, যেকোনো সময় সারা বাংলাদেশে অবাঙালিদের ক্যাম্পের বিদ্যুৎ, যেটা ফ্রি দেওয়া হচ্ছিল, সেটা বন্ধ হয়ে যেতে পারে৷’

 

তবে সংযোগ বিচ্ছিন্ন নয়, বরং বৈধ সংযোগ চান এই উর্দুভাষী নেতা। তিনি বলেন, ‘আমরাও বিল দিতে চাচ্ছি। আমাদের প্রিপেইড মিটার দেওয়া হোক। বিকল্প ব্যবস্থা না করে লাইনটা কাটা হলে অনেক লোক মারা যাবে গরমে ক্যাম্পের ভেতরে। আমরা বিল দিতে প্রস্তুত। সরকার আগে আমাদের ক্যাম্পগুলোতে প্রিপেইড মিটারের ব্যবস্থা করে তারপর যেন ক্যাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগটা বিচ্ছিন্ন করা হয়।’

উর্দুভাষী ক্যাম্পের বকেয়া বিলের পরিমাণ কত- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের বিলটা দিত ত্রাণ মন্ত্রণালয়৷ এটা আমি সঠিক জানি না।’

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পের সাধারণ সম্পাদক শিমা কোরাইশি মনে করেন, সরকারের পক্ষ থেকে তাদের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা যৌক্তিক না। একই সঙ্গে ক্যাম্পে নতুন মিটার দিয়ে বিল দেয়ার পক্ষেও নন তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেয়েছি। কিন্তু নাগরিক সুবিধা তো পাচ্ছি না। আমরা তো সরকারি চাকরি পাই না। আমাদের বাচ্চারা সরকারি স্কুলে পড়তে পারে না। বিদ্যুৎ ও পানি আমরা ফ্রি পাচ্ছি। আমাদের পুনর্বাসন না হওয়া পর্যন্ত আমরা বিদ্যুতের বিল দিতে আগ্রহী না।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here