খবর ৭১: প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সামনেই ইভিএমে ভোট গ্রহণের প্রতি অনাস্থার কথা প্রকাশ করেছেন বরিশাল সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়া একাধিক মেয়র প্রার্থী। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টরা ইভিএম-এ স্বচ্ছ ও সঠিক ভোট হওয়ার বিষয়ে প্রার্থীদের আশ্বস্ত করেছেন।
শনিবার (২৭ মে) রাতে রিটার্নিং অফিসার কার্যালয়ের আয়োজনে বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমির অডিটোরিয়ামে এ অনাস্থার কথা বলেন প্রার্থীরা।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রার্থীদের করা প্রশ্নের উত্তরে ইভিএম মেশিনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান। তিনি বলেন, ইভিএমে চেক করে দেখার জন্য আহ্বান সবার জন্য ছিল। আপনারা এখনও আসতে পারেন ইভিএম যেভাবে খুশি পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
পরে নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান বলেন, আমরা ইভিএম-এ ছয় শতাধিক ভোট করেছি, কোনো একজন কোনোদিন কিছু বলেননি। যখন হয়ে যাবে তখন আপনারাও বলবেন ইভিএম কি ছিল। সময় আসবে আপনারা ব্যালট চাইবেন না, আপনারা যারা সৎ, স্বচ্ছ ও সঠিক জিনিসটা চান তারা ইভিএমই চাইবেন। ইভিএম স্বচ্ছতার বিষয়ে শতভাগ গ্যারান্টি দিয়ে গেলাম।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, এখন ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন করার কোনো অবকাশ নেই, কারণ আমরা তফসিল ঘোষণা করেছি। তফসিল ঘোষণার সময় আপনারা যদি ইভিএম-এ নির্বাচন করবেন না এই বলে নির্বাচন বর্জন করতেন তাহলে একটি কথা ছিল। কিন্তু নির্বাচন আর কয়েকদিন পরে এখন যদি আপনারা বলেনও তাহলে ইভিএম বাদ দিয়ে ব্যালট সংযুক্ত করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। যদি আপনারা মনে করেন, আমরা খুব অসাধু দুর্নীতি পরায়ণ, ইভিএম দিয়ে আমরা কারচুপি করব, তাহলে কথাটা ঠিক না।
তিনি বলেন, আমাদের ইভিএম সম্পূর্ণ আইসোলেটেড, আর এটা পৃথিবীর আর কোথায় হয়নি-যে আপনাকে আপনার ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে ব্যালট ওপেন করতে হবে। আপনার ফিঙ্গার প্রিন্ট যদি ম্যাচ না করে তাহলে ডিজিটাল ব্যালট ওপেন হবে না, আর ম্যাচ করলে অটোমেটিকালি আপনার ডিজিটাল ব্যালটটি ওপেন হয়ে যাবে।
এরআগে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস তার প্রশ্নে বলেন, আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি সিটি নির্বাচন যেন ব্যালটে হয়, ইভিএম-এর ভেতরে কি আছে সেটা দেখতে না পাওয়ায় মানুষের মধ্যে এটা নিয়ে অনীহা হয়েছে। আর আমরা তো এখনও ব্যালটে অভ্যস্ত, তাই সেটাতে নির্বাচন করা যায় কিনা সেটা বিবেচনা করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
এছাড়া তিনি এবারের সিটি নির্বাচন ২০১৮ সালের মতো হবে না, সেই নিশ্চয়তা চাওয়ার পাশাপাশি বরিশালের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির নিশ্চয়তা চান। সেইসঙ্গে সিইসির কাছে রিটার্নিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একচোখা আচরণের অভিযোগ তুলে ইতোপূর্বে দেওয়া অভিযোগের কোনো উত্তর না পাওয়ায় কথাও বলেন। পাশাপাশি সন্ধ্যার পর মোটরসাইকেলের মহড়ায় মানুষ ভীত ও সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন তিনি।
এ সময় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেন, ইতোপূর্বে আমরা ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচন করেছি, যদি ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচন না দিতেই পারেন, তাহলে ইভিএম-এর গেজেট কি হচ্ছে, সেটা প্রকাশ করতে হবে। এ সময় তিনি ইভিএম সার্কিটের ডিজাইন চাওয়াসহ ১০টি দাবির কথা তুলে ধরেন।
পাশাপাশি যদি সর্বজন গ্রহণযোগ্য ও ত্রুটিমুক্ত নির্বাচন যদি উপহার না দিতে পারেন তখন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা পদত্যাগ করবেন কিনা সে বিষয়ে সিইসির কাছে জানতে চান তিনি। এছাড়া সরাসরি নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনের সচিবের কাছে অভিযোগ করার জন্য তাদের মোবাইল বা টেলিফোন নম্বর চেয়েছেন তিনি। পাশাপাশি প্রতি কেন্দ্রে সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং প্রিজাইডিং অফিসার কর্তৃক প্রতি কেন্দ্র থেকে ছাপানো ফলাফল প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করার দাবি জানান হাতপাখা প্রতীকের এই প্রার্থী।
এরআগে মেয়র প্রার্থীদের নির্বাচনী অফিস যেন অনেক বেশি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখার অনুরোধ জানান জাকের পার্টির গোলাপফুল প্রতীকের প্রার্থী মিজানুর রহমান বাচ্চু।
তবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত) বরিশাল সিটি নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।