পেঁয়াজ আমদানিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠি

0
178

খবর ৭১: পেঁয়াজের বাজারে স্বস্তি ফেরাতে আমদানির বিকল্প নেই বলে মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে আমদানি করতে কৃষি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। কৃষি মন্ত্রণালয় তাদের ‘সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে’ দ্রুত জানাবে বলেছে।গতকাল রোববার রাজধানীর বাড্ডা আলাতুন্নেছা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া ও মেধা পুরস্কার এবং গুণীজন সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে পেঁয়াজ নিয়ে কথা বলেন মন্ত্রী।তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন পর্যাপ্ত হয়েছে। কিন্তু বেশি মুনাফা লাভের আশায় অনেকে পেঁয়াজ মজুত রেখে সংকট তৈরি করে বাজারকে অস্থিতিশীল করা হয়েছে। ভোক্তা পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম কয়েক দিনের ব্যবধানে বৃদ্ধি পেয়েছে।

‘বর্তমান বাজার বিবেচনায় আমরা পেঁয়াজ আমদানির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। ইমপোর্ট পারমিট বা আইপি যেহেতু কৃষি মন্ত্রণালয় দিয়ে থাকে, তাই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।’ঈদের আগে থেকে পেঁয়াজের হঠাৎ বাড়তি দর ঈদ শেষে ছুটতে শুরু করে ‘রকেট গতিতে’। সরকারি সংস্থা টিসিবির তথ্য বলছে, এক মাসের মধ্যে পেঁয়াজের দর ৩০ টাকা থেকে ৮০ টাকায় পৌঁছে যায়।

দাম ৬০ টাকা হয়ে যাওয়ার পর গত ১০ মে প্রথমবারের মতো পেঁয়াজ আমদানির কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। সাংবাদিকদের তিনি সেদিন দাম না কমলে আমদানির অনুমতি দেয়ার কথা বলেন। ৯ দিন পর গত শুক্রবার আবার তিনি একই কথা বলেন। কিন্তু সেদিন ঢাকার বড় বাজারে পেঁয়াজের দর ওঠে ৮০ টাকা, গলির বাজারে তা ওঠে ৯০ টাকা।

একই দিন এক প্রশ্নে কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার বলেন, ‘আমরা এখনও বাজার পর্যবেক্ষণে রেখেছি। আমরাও দেখছি পেঁয়াজের দামটা বাড়ছে। আমরা বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’

সরকারি হিসাবে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৬ থেকে ২৮ লাখ টন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের দাবি এবার উৎপাদন ৩৪ লাখ টনের কাছাকাছি, যা বার্ষিক চাহিদার চেয়ে বেশি। অবশ্য পেঁয়াজ পচনশীল এবং সংরক্ষণকালে ৩৫ শতাংশের মতো নষ্ট হয়, ওজনও কমে। আবার কয়েক লাখ টন পেঁয়াজ রাখতে হয় বীজের জন্য। তাই কয়েক লাখ টন আমদানি করতেই হবে।কৃষি বিভাগের হিসাবে এবার কেজিপ্রতি উৎপাদন খরচ হয়েছে ২৮ টাকার মতো। ভারতে উৎপাদন খরচ হয় আরও কম। এ কারণে দাম ধরে রাখতে চেয়েছিল সরকার।

কিন্তু আমদানি বন্ধের খবরে পেঁয়াজ উঠতে না উঠতে এমন দর বৃদ্ধি এর আগে দেখা যায়নি। কৃষক, ব্যবসায়ী, কৃষি কর্মকর্তা সবাই এর পেছনে মজুতদারিকে দায়ী করেছেন।বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষকরা যাতে পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য পান, সেজন্যই মূলত ইমপোর্ট পারমিট বন্ধ রাখা হয়েছে। এখন যেহেতু ভোক্তাদের বাজারে পেঁয়াজ কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে, তাই আমদানি করা ছাড়া উপায় নেই।’ আমদানি করলে বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে বলেও আশাবাদী তিনি। বাণিজ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট, তাদের পর্যবেক্ষণ শেষ হয়েছে। তবে কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, তারা আরও কয়েকটা দিন দেখতে চান।

সচিবালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে উচ্চপর্যায়ে কথা বলেছি। দুই-তিন দিনের মধ্যেই আপনারা সিদ্ধান্ত পাবেন যে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে কি না।’

আর দেখার কী আছেÑসেই প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের চেষ্টা করছি। গতকাল পেঁয়াজের দাম মণে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা করে কমেছে। যেহেতু কমার লক্ষণ দেখা দিয়েছে, আমরা এক-দুই দিন দেখব। জানি মধ্যম আয়ের ও সীমিত আয়ের মানুষের কষ্ট হচ্ছে। তার পরেও আমরা শেষ পর্যন্ত চাষির স্বার্থটা দেখতে চাচ্ছি।’১৫ থেকে ২০ দিন ধরে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা চলছে, এটা স্বীকার করে নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘হঠাৎ করে দাম বেড়ে যায়, আবার কিছুটা কমে যায়। দু-এক দিনের ব্যবধানে বাজার ওঠানামা করে।‘এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা গত চার-পাঁচ দিন ধরে বাজার বোঝার চেষ্টা করছি। বাজারে কী হচ্ছে, তা দেখছি।’

৮০ টাকা কেজি পেঁয়াজ কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়, এটাও মানেন আবদুর রাজ্জাক। ভারতে দাম অনেক কম বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সেখান থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে বাজারকে ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসতে পারি।’

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ের খবর নেয়ার চেষ্টা করে সরকার জানতে পেরেছে অধিকাংশ কৃষকের কাছে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ রয়েছে। দাম বৃদ্ধি হওয়ার আশায় তারা ধরে রেখেছেন। বিভিন্ন বাণিজ্যিক পোর্টালে দেখা যাচ্ছে, সেখানে মান ও জাতভেদে কেজিপ্রতি দাম ৫ থেকে ১২ রুপি। বাংলাদেশি টাকায় তা ৭ থেকে ১৫ টাকা।

কৃষিমন্ত্রী জানান, তিনি মনে করেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আনলে দেশের ভোক্তাদের হাতে ৪৫ টাকা কেজিতে পৌঁছে দেয়া যাবে।সরকারের বেঁধে দেয়া সর্বোচ্চ দরের চেয়েও বেশিতে চিনি বিক্রি নিয়েও সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন বাণিজ্যমন্ত্রী। গত ১০ মে সরকার খোলা চিনির কেজি সর্বোচ্চ ১২০ টাকা আর প্যাকেটের চিনি ১২৫ টাকা ঠিক করেছে। তবে বাজারে ১৪০ টাকার নিচে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে এক প্রশ্নে টিপু মুনশি বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের দিয়ে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। নির্ধারিত দামে বাজারে চিনি বিক্রি করছে কি না, তা পর্যবেক্ষণে মনিটরিং করা হচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here