আরও এক দফা বাড়বে বিদ্যুতের দাম

0
104

খবর ৭১: ভর্তুকি কমাতে চলতি বছরে গ্রাহক পর্যায়ে তিন দফা বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে সরকার। আগামী জুনের মধ্যে আরও এক দফা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে ঢাকা সফররত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) মিশনকে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশকে দেওয়া ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তার শর্ত পূরণের অগ্রগতি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে আইএমএফ স্টাফ কনসালটেশন মিশনের সঙ্গে বৈঠক হয়।

গতকাল আট সদস্যের মিশন অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিনসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ের সামষ্টিক অর্থনীতি বিভাগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করে। এসব বৈঠকে তারা আইএমএফকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এবং আগামী বাজেটে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে, সেসব বিষয় জানতে চায়। একই সঙ্গে গত মার্চ পর্যন্ত বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং আগামী জুন ও সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নযোগ্য বিভিন্ন পরিকল্পনার অগ্রগতিও জানতে চায়।

আইএমএফ গত ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। এর তিন দিন পরই প্রথম কিস্তিতে ছাড় করে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার। ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে মোট সাত কিস্তিতে দেবে ঋণের পুরো অর্থ। এ ঋণ নিতে ছোট-বড় ৩৮টি শর্ত পূরণ করতে হবে বাংলাদেশকে। শর্তের অন্যতম হচ্ছে, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে আনার মাধ্যমে সরকারের ব্যয় সক্ষমতা বাড়ানো।

বৈঠকে অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়, সামগ্রিক ভর্তুকি আইএমএফ নির্ধারিত সীমায় আটকে রাখতে সরকার ইতোমধ্যে সারের দাম বাড়িয়েছে। পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দামও তিন দফা বাড়ানো হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে দুই দফা এবং মার্চে এক দফা ৫ শতাংশ করে গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয়েছে। এর আগে গত নভেম্বরে পাইকারি পর্যায়ে ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে সরকার।

আগামী জুনের মধ্যে আরও এক দফা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এদিকে গত আগস্টে পেট্রোল ও অকটেনে ৫০ শতাংশ এবং ডিজেল ও কেরোসিনে ৩৬ শতাংশ দাম বাড়ায় সরকার। শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন, হোটেল ও রেস্তোরাঁর গ্যাসের দামও গত ফেব্রুয়ারি থেকে বাড়ানো হয়েছে। প্রাকৃতিক গ্যাসের দামও গত বছরের জুনে গড়ে ২৩ শতাংশ বাড়ানো হয়। জ্বালানি তেলের মূল্য আগামী সেপ্টেম্বর থেকেই তিন মাস পরপর আন্তর্জাতিক বাজারদরের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।

এ ছাড়া বৈশ্বিক মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কাকে উপেক্ষা করে এই কর্মসূচি চলাকালে সরকার এই ভর্তুকি না বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ধীরে ধীরে ভর্তুকি আরও কমানোর উপায় খুঁজছে।

অর্থ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বাবদ ১৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। তবুও বিদ্যুৎ বিভাগ অতিরিক্ত ৩২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দাবি করে। শেষে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে অতিরিক্ত ৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক

বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে গতকাল বৈঠকে কীভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো যায়, তা নিয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশের গ্রস বা মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ৩১ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে নিট রিজার্ভ প্রায় ২৩ বিলিয়ন। তবে খুব দ্রুত পরিশোধ করতে হবে– এমন অর্থ বাদ দিয়ে আইএমএফের হিসাবে বাংলাদেশের নিট রিজার্ভের পরিমাণ প্রায় ২১ বিলিয়ন ডলার। আগামী জুন নাগাদ তা ২৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার শর্ত রয়েছে সংস্থাটির। ইডিএফের আকার কমানো এবং বিশ্বব্যাংক, এডিবি, এআইআইবি ও জাইকার মতো উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে জুনের মধ্যে প্রত্যাশিত ২ বিলিয়ন ডলার প্রাপ্তি নিট রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা করবে বলে মিশনকে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক সাংবাদিকদের জানান, বর্তমানে গ্রস বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ৩১ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। জুনে নিট রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে কিনা, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে এর কছাকাছি অবস্থায় থাকবে বলে আশা করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতি এবং মুদ্রানীতি নিয়ে মিশনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আগামী জুলাই থেকে গ্রস এবং আইএমএফ নির্ধারিত পদ্ধতিতে রিজার্ভের পরমাণ ঘোষণা করা হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here