খবর৭১ঃ
দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা এখনো মানুষের কাছে আস্থাভাজন হয়ে ওঠেনি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন যেহেতু নির্বাচন আয়োজন করবে তাই মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে আমাদের দায়িত্ব আছে। তাদের আস্থাটা বাড়াতে হবে।
সিইসি বলেন, আমরা একটা সংকটে আছি এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ ভোট নিয়ে আমরা এখনও রাজনৈতিক দলগুলোকে পুরোপুরি ঐক্যবদ্ধ দেখতে পাচ্ছি না। এই ঐক্যটা খুব বেশি প্রয়োজন। যদি ঐক্যের ভিত্তিতে নির্বাচনটা হয়, তাহলে রাজনৈতিক সংকট হবে না। আমরা কখনই চাই না, নির্বাচনের আগে বা নির্বাচনের সময়ে কোনো রাজনৈতিক সংকট হোক।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিইসি এসব মন্তব্য করেন। জাতীয় ভোটার দিবস উপলক্ষ্যে এ আলোচনার সভার আয়োজন করা হয়।
গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরে আলোচনা সভায় সিইসি বলেন, ১৯৭০ সালে নির্বাচন হয়েছিল লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডারের (এলএফও) আন্ডারে। তখন দেশে কোনো সংবিধান ছিল না। সেই নির্বাচনে যে ফল হয়েছিল, পাকিস্তান সামরিকজান্তা তা অমান্য করল, অশ্রদ্ধা করল। একটা নির্বাচনের ফল উপেক্ষা করার কারণে একটি দেশ ভেঙে গিয়েছিল। জাতি যখন দেখল তাদের অপমানিত করা হয়েছে। তাদের অস্বীকার করা হয়েছে, তাদের ম্যান্ডেটকে মূল্য দেওয়া হয়নি। তখন একটা যুদ্ধ বেঁধে গেল। তিনি বলেন, কাজেই নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিকভাবে এটা সবাইকে অনুধাবন করতে হবে। আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে এটা বুঝতে হবে। আমি মনে করি, নির্বাচন এবং ভোটাধিকারকে হালকাভাবে গ্রহণ না করাই ভালো।
বর্তমান নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থাটা খুব আস্থাভাজন হয়ে ওঠেনি। আজকে পেপার পড়ছিলাম, একজন বড় মাপের নেতা বলেছেন, নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থা শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। এ বক্তব্যে কিছুটা যদি সত্যতা থেকেও থাকে সেটা ভালো কথা নয়। মানুষের আস্থাটা অর্জন করতে হবে। মানুষের আস্থা আনার জন্য আমাদের নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব আছে এবং নির্বাচন কমিশন যেহেতু নির্বাচন আয়োজন করবে ভোটারশিক্ষণ কার্যক্রম খুব গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে আলোচনা সভায় নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান (অব.) বলেন, আমরা সবার অংশগ্রহণে একটা সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে চাই। ভোটার, দল, প্রার্থী, এজেন্ট, গণমাধ্যমকর্মী সবার জন্য নির্বিঘ্নে পরিবেশ তৈরিতে কমিশনের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা থাকবে। এক্ষেত্রে আমরা সবার সহযোগিতাও চাই।
নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা জানান, সবার আস্থা অর্জনে কমিশন কাজ করে যাচ্ছে। সব দল ভোটে এসে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন করবে বলে আশা করেন তিনি। নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ স্পর্শকাতর কাজ। সামান্য ভুল হলে এটি নিয়ে কথা হয়। ভোটার যারা হয়েছেন তারা যোগ্যজনে ভোট দেবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা। নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান দিবসটি নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে এতে সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন অংশীজনদের সম্পৃক্ত করার তাগিদ দেন।
আলোচনা সভায় সদ্য ভোটার হওয়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ শিক্ষার্থীর হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেন সিইসি। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে তিনজন কর্মকর্তাকে জাতীয় নির্বাচনি পদক দেওয়া হয়। এরা হলেন- ইসির সাবেক যুগ্ম সচিব মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী, রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন এবং বগুড়ার কাহালু উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জান্নাত আরা জলি। ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ অনুষ্ঠানে ভোটার তালিকার ইতিহাস তুলে ধরেন।