খবর ৭১: অবশেষে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে পদত্যাগ করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো। বর্তমান চুক্তির মেয়াদ ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্ত থাকলেও আগেই সরে গেছেন তিনি। মঙ্গলবার ই-মেইলে বিসিবিকে পদত্যাগ পত্র পাঠিয়েছেন এই দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস বুধবার সংবাদমাধ্যমকে পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর থেকে বিসিবির সাথে সম্পর্কে ফাটল ধরতে শুরু করে ডোমিঙ্গোর। যখন সংক্ষিপ্ততম ফর্ম্যাটে স্কটল্যান্ডসহ সব ম্যাচ হেরে তলানিতে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু নানা কারণে তার সঙ্গে সম্পর্কের ইতি টানতে পারেনি বিসিবি।
সদ্য ভারতের বিপক্ষে সিরিজের শেষ টেস্টে হারের পর থেকেই গুঞ্জন ছিল ডমিঙ্গোর চাকরি নিয়ে। জালাল ইউনুস সেদিনই জানিয়েছিলেন, পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে কোচিং প্যানেলে। তবে খোলাসা করে সেদিন কিছু জানা যায়নি। বুধবার সকাল নাগাদই জানা গেল- ডমিঙ্গো সরে দাঁড়িয়েছেন।
কারিগরি উপদেষ্টার মোড়কে শ্রীধরন শ্রীরামকে টি-টোয়েন্টি দলের প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয়ার পর ডোমিঙ্গোকে পদ থেকে সরানো হলো। বিভিন্ন সময়ে স্পষ্ট করেই ডোমিঙ্গো বলেছেন যেভাবে টি-টোয়েন্টি সেট আপ থেকে তাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিলো তাতে সন্তুষ্ট নন তিনি। ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চলাকালীন দক্ষিণ আফ্রিকায় ছিলেন ডোমিঙ্গো। তখন এটি ভাবা হয়েছিল, হয়তো বাংলাদেশে ফিরে আসবেন না এবং পদত্যাগপত্র পাঠাবেন তিনি।
এরমধ্যে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত শ্রীরামের সঙ্গে চুক্তি থাকলেও আবারো টাইগারদের কোচ হয়ে ফিরছেন তিনি। তাকে টি-টোয়েন্টির পূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে বলেও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। যদিও বিসিবি থেকে এ ধরণের আনুষ্ঠানিক কোনো কিছু জানানো হয়নি।
ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের সিরিজ শেষ হবার দু’দিন পর পদত্যাগ করলেন ডোমিঙ্গো। ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতলেও দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ।
ঢাকা টেস্টের পরপরই সাংবাদিকদের ইউনূস বলেন, ‘আমাদের এমন একজন কোচ দরকার যে কি-না দলের ওপর প্রভাব রাখবে। আপনি শীঘ্রই কিছু পরিবর্তন দেখতে পাবেন। আমরা চেষ্টা করছি। আমরা খুব শক্তিশালী দল চাই যারা মানসম্পন্ন এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট খেলবে। আমরা ভারতকে হারানোর কাছেই গিয়েছিলাম কিন্তু এই দলকে হারানো কঠিন। আমরা এই মাঠে ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছি। তবে এই পরিস্থিতিতে ভারত আরও শক্ত প্রতিপক্ষ।’
এরপর মাত্র ২৪ ঘন্টা পর বিসিবি বস পাপন ইঙ্গিত দেন, পারফরমেন্সে খুশি হলেও বাদ দেয়া হতে পারে ডোমিঙ্গোকে। পাপন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি, এটি স্বল্পমেয়াদী নয়। এটি তিন থেকে চার বছরের একটি পরিকল্পনা এবং যদি পরিবর্তনের প্রয়োজন হয় (সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য) তবে পরিবর্তন হবে।’
২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ শেষে বিসিবি কর্তৃক স্টিভ রোডসকে বরখাস্ত করার কয়েক মাস পর একই বছরের সেপ্টেম্বরে ডোমিঙ্গো প্রধান কোচ হিসেবে যোগ দেন। তার অধীনে বাংলাদেশ ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ, নিউজিল্যান্ডের মাটিতে একটি টেস্ট (প্রথমবারের মতো), দক্ষিণ আফ্রিকায় এবং ভারতের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজ জিতে।
এদিকে, ডোমিঙ্গোর পরিবর্তে বাংলাদেশের প্রধান কোচ হিসেবে দৌঁড়ে এগিয়ে আছেন সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে এবং অস্ট্রেলিয়ার মাইক হাসি। যদি নতুন কোচ নিয়োগের জন্য দীর্ঘ সময় লাগে, তবে মার্চে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে সাদা বলের সিরিজে জাতীয় দলের কোচ হতে পারেন শ্রীধরন শ্রীরাম।