খবর৭১ঃ বরখাস্ত হওয়া পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার নিজেই পরিকল্পনা করে এবং নির্দেশ দিয়ে ভাড়াটে খুনি দিয়ে তার স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যা করিয়েছেন। এজন্য ভাড়াটে খুনিদের তিনি দিয়েছেন তিন লাখ টাকা। বিদেশি এনজিও সংস্থার কর্মী গায়ত্রী অমর সিংয়ের সঙ্গে পরকীয়া নিয়ে দাম্পত্য কলহের জেরে বাবুল আক্তার নিজের স্ত্রীকে হত্যার মতো জঘন্য সিদ্ধান্ত নেন। পিবিআইর তদন্তে মিতু হত্যার রহস্য এভাবে উদ্ঘাটন হয়।
এদিকে মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মিতু হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা বাবুল আক্তার- এটি দিবালোকের মতো স্পষ্ট। এ কারণে নির্দেশদাতা বাবুল আক্তারসহ এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সাতজনকে আসামি করে চার্জশিট প্রস্তুত করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আগামী সপ্তাহে আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হবে।
মিতু হত্যাকাণ্ডে বাবুল আক্তার ছাড়াও অন্য যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে তারা হলেন- মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ ভোলোা, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু এবং শাহজাহান মিয়া। মিতু হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ইতঃপূর্বে গ্রেফতার হওয়া চারজনকে চার্জশিট থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার কাছে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। স্ত্রীকে খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দপ্তরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদসহ নানা নাটকীয়তার পর ওই বছরের আগস্টে বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বাবুল আক্তার বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মহানগর পিপি মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী বুধবার দুপুরে যুগান্তরকে বলেন, মিতু হত্যাকাণ্ডে বাবুল আক্তার জড়িত ছিলেন। তার পরিকল্পনা ও নির্দেশে খুন হন স্ত্রী মিতু। মূল অভিযোগপত্র নয় পৃষ্ঠার। তবে এর সঙ্গে দশ খণ্ডের নথি সংযুক্ত করা হয়েছে। মামলার সাক্ষ্যস্মারকে (এমওই) আমি এরইমধ্যে স্বাক্ষর করে দিয়েছি।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, স্ত্রী মিতু হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড সাবেক বরখাস্তকৃত এসপি বাবুল আক্তার। বাবুল আক্তার কক্সবাজারে কর্মরত থাকা অবস্থায় বিদেশি এক নারীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। এ নিয়ে পরিবারের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি হয়। এ কারণে বাবুল আক্তার তার স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিন লাখ টাকায় ‘খুনি’ ভাড়া করে স্ত্রীকে খুন করান। নিজেকে আড়ালে রাখতে প্রচার করেন- জঙ্গিরাই মিতুকে খুন করেছে। মিতুকে খুনের মিশনে নেতৃত্ব দিয়েছে পুলিশ কর্মকর্তা বাবুলের ‘সোর্স’ মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা। সঙ্গে ছিল আরও ছয়জন। হত্যাকাণ্ডের পর বাবুল আক্তার মুসাকে ফোনে গা ঢাকা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
এদিকে মিতু খুনের পর মামলায় গ্রেফতার হওয়া চারজনকে অভিযোগপত্রে অব্যাহতি দিয়েছে পিবিআই। এরা হলেন- মো. সাইদুল ইসলাম সিকদার সাক্কু, নুরুন্নবী, রাশেদ ও গুইন্যা।