রোহিঙ্গা গণহত্যার কথা স্বীকার করলেন মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তা

0
204

খবর৭১ঃ মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নির্বিচারে হত্যা তথা গণহত্যার কথা স্বীকার করলেন দেশটির সেনাবাহিনীর এক দলত্যাগী ক্যাপ্টেন।

দলত্যাগীর নাম নায় মিয়ো থেট। গত ৬ বছর ধরে রাখাইনে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে তিনি পালিয়ে যান এবং জান্তা-বিরোধীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চলে আশ্রয় নেন।

সেখানে এসেই তিনি গণহত্যার বিষয়টি স্বীকার করেন। একইসঙ্গে এ নিয়ে সাক্ষ্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি। এ খবর দিয়েছে মার্কিন সরকারের অর্থায়নে চালিত গণমাধ্যম রেডিও ফ্রি এশিয়া (আরএফএ)।

মিয়ো থেট বলেন, রাখাইনে যা হয়েছে, তা হওয়া উচিৎ ছিল না। এগুলো ছিল অগ্রহণযোগ্য। আমি আমার সহকর্মীদের এ কথা বলেছিলাম। কিন্তু তারা বিশ্বাস করতো, রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দিতে হবে। কারণ যারা সন্ত্রাসী হামলা করেছে তাদেরকে সমর্থন দেয় এ রোহিঙ্গারা। তাই তাদেরকে তাড়িয়ে না দেওয়া পর্যন্ত শান্তি আসবে না।

অর্থাৎ, সামরিক বাহিনীর সদস্যরা পুরো একটি জাতিগোষ্ঠীকে বিতাড়িত করার ইচ্ছা পোষণ করত। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গণহত্যার যে আন্তর্জাতিক অভিযোগ রয়েছে তাকে সমর্থন করেন বলেও জানান মিয়ো থেট। সামরিক বাহিনীই রাখাইনের বাসিন্দা ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিভেদ তৈরির জন্য দায়ী। তারাই এ বিদ্বেষের বীজ বপন করেছে। আমাকে যদি আন্তর্জাতিক অপরাধী আদালতে ডাকা হয়, আমি সেখানে যাব এবং যা যা জানি সব প্রকাশ্যে নিয়ে আসব।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালে রাখাইনে বড় মাত্রায় অভিযান চালানো শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এতে ওই বছরই ৯০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ২০১৭ সালে অভিযান তীব্র করা হলে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে বাংলাদেশ সীমান্তে। ওই বছর ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।

আরএফএকে মিয়ো থেট জানিয়েছেন, সেনারা রাখাইনে যা করেছে তাতে সেখানে ‘গণহত্যা সংগঠিত হয়েছে’। হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধী আদালতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যে মামলা চলছে তাতে সাক্ষ্য দেওয়ার কথাও বলেছেন তিনি।

নিজের ব্যাকগ্রাউন্ড তুলে ধরে মিয়ো থেট জানান, ২০০৬ সালে মিয়ানমারের পিন-ও-লুইন একাডেমিতে যোগ দেন তিনি। এর পর ২০০৮ সালে সেখানে প্রশিক্ষণ শেষে সামরিক বাহিনীতে যোগ দেন।

প্রথম দিকে তাকে কায়িন ও কাচিন রাজ্যে মোতায়েন করা হয়। তাকে রাখাইনে পাঠানো হয় ২০১৫ সালে, ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সেখানেই দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

মিয়ো থেট জানান, ২০১৬ সালে একটি সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষিতে প্রথম অভিযান শুরু করেন তারা। ২০১৭ সালে আরসা’র আরেক হামলার পর বড় অভিযান চালানো হয়। আমরা অভিযানে গিয়ে দেখি, সেখানে কিছুই আর বাকি নেই। স্থানীয়রা প্রায় সবকিছুই নিয়ে চলে গেছে।

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর যুদ্ধাপরাধ সম্পর্কেও তথ্য দিয়েছেন মিয়ো থেট। তিনি বলেন, এক অভিযানে সেনারা গ্রামগুলোতে ছুরি বা এ ধরণের অস্ত্র খুঁজতে অভিযান চালিয়েছিল। সেখানে এক সেনা কর্মকর্তা রোহিঙ্গা মেয়েদের নগ্ন হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরে আরেক সদস্যের কাছ থেকে আমি জানতে পারি, তার এক সহকর্মী রোহিঙ্গা নারীকে ধর্ষণ করেছে। তবে তার নাম আমার এখন মনে নেই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here