খবর৭১ঃ রাজধানীর একটি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র শওকত ললাট। আরও কয়েকবছর আগে থেকেই রোজা রাখছে সে। সারাদিন সিয়াম সাধনা শেষে মায়ের হাতের তৈরি বাহারি ইফতারের অপেক্ষা করতে খুব ভালো লাগে এই কিশোরের। রমজান মাসের আগমনের অপেক্ষায় থাকে সারা বছর । কিন্তু বাসায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ এবার প্রথম রোজাতেই কোনো ইফতার তৈরি হয়নি তার বাসায়। বাধ্য হয়ে বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে রাস্তায় পাশের দোকান থেকে অস্বাস্থ্যকর ইফতার কিনতে বাধ্য হয়েছে ললাট।
রাজধানীর ভাটারা থানাধীন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ফাবিহা জাহান টিকলীও গ্যাস না থাকায় পড়েছেন বিড়াম্বনায়। তিনি যুগান্তরকে বলেন, অফিস থেকে বাসায় ফিরেই দেখি গ্যাস নেই। জানতে পারি সকাল থেকেই গ্যাস ছিল না। কোনো উপায় না পেয়ে বাইরে থেকে ইফতার কিনে আনতে হয়েছে।
বাড্ডায় বাসিন্দা জাকির হোসেনও একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন। টিটু সোমবার যুগান্তরকে বলেন, গতকাল সন্ধ্যা থেকেই গ্যাস ছিল না। সেহরির আগে কিছু সময়ের জন্য গ্যাস আসে। গ্যাসের চাপ কম থাকলেও রান্নার কাজ শেষ করতে পেরেছিলাম। কিন্তু আজকে (সোমবার) সকাল থেকেই গ্যাস নেই। আমদের ইফতার সেহরি সব উলটপালট হয়ে গেছে।
শুধু ললাট, টিকলী কিংবা জাকির নয় গ্যাস না থাকায় বাইরে থেকে খাবার কিনে এনে ইফতার ও সেহরি করেছেন রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকার অধিকাংশ মানুষ।
রমজানের প্রথম দিন থেকেই চরম গ্যাস সংকটে পড়েছেন রাজধানীবাসী । রাজধানীর বাড্ডা, সাতারকুল, বেরাইদ, খিলবাড়িরটেক, নতুনবাজার, ফাঁসেরটেক, বসুন্ধরা, কালাচাঁদপুর, নর্দ্দা, কুড়িল, ভাটারা, ছোলমাইদ, বনশ্রী, রামপুরাসহ ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রোববার সকাল থেকেই গ্যাস সংকটে পড়েছেন তারা।
এছাড়া মিরপুর ১১ নম্বরের মদিনা নগর, আদর্শ নগর , সবুজ বাংলা , লালমাটিয়া , বাউনিয়াবাঁধ, ৫৪ প্লট , মিরপুর ১২ নম্বর ডি ব্লক, ই ব্লক , মিরপুর ১০ নম্বর সি ব্লক , প্যারিস রোড , এভিনিউ ফাইভ, দারুস সালাম, কোট বাড়ি, বর্ধন বাড়ি, বাগ বাড়ি, হরিরাম পুর , ভাষানটেক , ৬০ ফিট , মিরপুর ১৩ নম্বরের বি ব্লক, সি ব্লক , বাইশটেকি, কাফরুল ,ইব্রাহিম পুর , মিরপুর ১ নম্বর, কল্যান পুর, দক্ষিন পাইক পাড়া ,মিরপুর ৭ নম্বর আরাম বাগ , রুপনগর এলাকায় তীব্র গ্যাস সংকট চলছে।
গ্যাস না থাকায় অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের ক্ষোভের কথা জানিয়ে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন।
গ্যাস সংকটে বাড়িতে হাঁড়ি না চড়ায় বাধ্য হয়ে ক্যাফে ও রেস্টুরেন্টগুলোতে খাবার কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন মানুষ। সেখানে দেখা গেছে উপচেপড়া ভিড়।
শাহাজাদপুর ক্যাফে ও রেস্তোরার মালিক ফাহাদুল ইসলাম ফরহাদ বলেন, ইফতার বিক্রিতে, দোকানে উপচে পড়া ভিড় ছিলো। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ইফতার কিনছে গ্রাহকেরা। বিকাল সাড়ে ৫ টার মধ্যে ইফতার বিক্রি শেষ হয়ে গিয়েছিল, সাধারণত এরকম হয় না।
এদিকে, গ্যাস না থাকার বিষয়ে কোনো অগ্রিম নোটিশ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।
এ ব্যাপারে কালাচাঁদপুরের বাসিন্দা আব্দুল মোমেন যুগান্তরকে জানান, গ্যাস না থাকার বিষয়ে কোনো অগ্রিম নোটিশ দেওয়া হয়নি। রমজানের প্রথম দিনেই গ্যাস বন্ধ করে লাইনের কাজ করায় ব্যাপক সমালোচনা করেন তিনি।