সৈয়দপুরে ৪০ দিনের কর্মসূচীতে অনিয়ম লটারীতে নাম থাকলেও তালিকায় বহিরাগতরা

0
296

মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর :
সৈয়দপুরে বোতলাগাড়ী ইউনিয়নে ৪০ দিনের কর্মসূচীর লটারীতে নাম উঠলেও তালিকায় না থাকা, লটারীর বাইরে দুঃস্থদের বাদ দিয়ে বহিরাগত স্বচ্ছল লোক দিয়ে তালিকা প্রস্তুত, রেজিস্টার বই ও সর্দার নির্ধারণ ছাড়াই কাজ শুরু, নদীর মাটি কেটে সরকারী কাজে ব্যবহারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে ওঠেছে। এমন অভিযোগ করেছেন ইউনিয়নের বঞ্চিত লোকজন। ফলে তাদের প্রতিবাদের মুখে তড়িঘড়ি করে বন্ধ রয়েছে কাজ।

বঞ্চিতরা জানান, মঙ্গাকালীন কর্মহীন দুঃস্থ, অসহায় মানুষকে সহযোগীতা করার লক্ষ্যে সৃষ্ট সরকারি এ প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্য ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা একে অপরকে দোষারোপ করে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ায় প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রকৃত দরিদ্ররা। তবে বোতলাগাড়ী ইউপির নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান জুন বলেন, সব নিয়ম মেনেই কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে। যাদের নেয়া হয়েছে তাঁরা কেউ স্বচ্ছল বা অন্য সুবিধা ভোগী নন, থাকলে সংশোধন করা হবে।

জানা যায়, বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বসুনিয়াপাড়া জানেরপাড় এলাকার ইব্রাহিম আলী, আব্দুল হামিজ, নুর ইসলাম, কাঠারী পাড়ার মজিবর রহমানসহ আরও কয়েকজনের তাঁদের স্ত্রীর জন্য ৪০ দিনের কর্মসূচীর জন্য আবেদন করেন। লটারীর মাধ্যমে তাঁদের নামও ওঠে। কিন্তু তাঁদের না নিয়ে বহিরাগতদের দিয়ে মাটি কাটার কাজ করানো হচ্ছে। বঞ্চিতরা এ বিষয়ে জানতে চাইলে আমিনুল ইসলাম নামের একজন শ্রমিক নিজেকে সর্দার পরিচয় দিয়ে জানান তালিকায় তাঁদের নাম নাই। লটারীতে নাম উঠলেও লিস্টে কেন নাই প্রশ্ন করলে তিনি বলে মেম্বার-চেয়ারম্যান জানেন। বঞ্চিত লোকজন এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যানককে অভিযোগ দিলে তিনি বলেন উপজেলা চেয়ারম্যান নতুন লোক দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। এ খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মোখছেদুল মোমিন। এ সময় কাজ বঞ্চিতরা উপজেলা চেয়ারম্যানকে তাদের নাম বাদ দেয়ার অভিযোগ জানান। উপজেলা চেয়ারম্যান তাৎক্ষণিক উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবু হাসনাত সরকারের কাছে মুঠোফোনে লটারীতে ওঠা নাম বাদ দেওয়া ও নতুন নাম দেয়ার বিষয়ে জানতে চান। পিআইও বলেন, এমন কিছুই তো করা হয়নি। কেউ করে তাহলে তা ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরাই করেছে। এ সময় ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আসগার আলী বাবলু ঘটনাস্থলে এলে ক্ষিপ্ত লোকজন হয়ে তাঁর উপর চড়াও হন। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান তাঁদের শান্ত করেন এবং সমাধানের আশ্বাস দেন। বাবলু মেম্বার নাম কাটা ও অন্যদের নেয়ার কথা শিকার করে বলেন, পরবর্তীতে এটা সংশোধন করে নেওয়া হবে। একই অবস্থা পাশের ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডেও। শ্বাসকান্দর এলাকার আশরাফ আলী ও আব্দুল মজিদ জানান, তাদের নাম লটারীতে উঠেছিল, কিন্তু কাজের তালিকায় নাম নাই। অথচ লটারী ছাড়াই মেম্বার ও চেয়ারম্যান নিজেদের পছন্দের লোকদের গোপনে তালিকাভুক্ত করেছে। কাঠারীপাড়া এলাকার আইজুলের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৫৫) আক্ষেপ করে বলেন, স্বামী অসুস্থ, দেখার কেউ নেই। সরকারি মাটি কাটার কাজ করি, অন্য কোন সুবিধা পাইনা। এবার আমাকে বাদ দিয়ে এলাকার জনি ও কেকা পাগলাকে কাজে নিয়েছে। অথচ তাঁরা দশ টাকার চালের কার্ড ও ভাতার উপকারভোগীও।
এ ব্যাপারে সৈয়দপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন বলেন, রাজনৈতিক কারণে নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান জুন নিজে অনিয়ম করে আমার নামে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তবে বঞ্চিতদের অভিযোগ খতিয়ে দেখে অনিয়ম দূর করতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here