বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ

0
308

খবর৭১ঃ :  জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ। পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের এই দিন তিনি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর তার মুক্তি ও দেশে প্রত্যাবর্তন নিয়ে সারা দেশেই উৎকণ্ঠা বিরাজ করছিল। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের আনন্দ অপূর্ণ রয়ে গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন বাংলাদেশে ফেরার মধ্য দিয়ে মানুষ যেন পূর্ণাঙ্গ বিজয়ের দেখা পেয়েছিল সেদিন। বঙ্গবন্ধু তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে আখ্যায়িত করেছিলেন ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা’ হিসেবে।

বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী বিমানটি যখন তেজগাঁও বিমানবন্দরের রানওয়ে স্পর্শ করে, তখন ঢাকার রাস্তায় আনন্দাশ্রুতে উদ্বেলিত হতে থাকে লাখ লাখ জনতা। এর আগে ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগারে দীর্ঘ ৯ মাস কারাভোগের পর মুক্তি লাভ করেন তিনি। সেদিনই তিনি পাকিস্তান থেকে লন্ডনে যান। সেখানে দুই দিন অবস্থান করে ১০ জানুয়ারি দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফেরেন বঙ্গবন্ধু।

ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন।

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে জাতীয় পার্টি-জেপি’র চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি এবং দলের সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম বিবৃতি প্রদান করেছেন।

দিবসটি পালন উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এছাড়া আওয়ামী লীগ ও দলের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। তবে করোনার নতুন সংক্রমণ বাড়তে শুরু করায় কিছু কিছু কর্মসূচি সীমিত পরিসরে পালিত হবে বলে জানা গেছে।

পাকিস্তান যেন বঙ্গবন্ধুর তথাকথিত বিচার সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়, তিনি যেন সসম্মানে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করতে পারেন, সেই লক্ষ্যে বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। শুধু মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পাশেই দাঁড়ানো নয়, বঙ্গবন্ধুর মুক্তির প্রশ্নেও তিনি ছিলেন অবিচল, অনমনীয়। শেখ মুজিবের মুক্তিকে বাংলাদেশ সংকট সমাধানের অন্যতম প্রধান শর্ত হিসেবে উল্লেখ করে গোটা বিশ্বে প্রবল প্রচারণা চালিয়েছেন তিনি। ইন্দিরা গান্ধী এতটাই অনমনীয় ছিলেন যে, মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের জয়লাভের পরেও বঙ্গবন্ধুর মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত তার যুদ্ধ থামবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেছিলেন।

এ প্রসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক হারুন হাবীব বলেন, হোয়াইট হাউজে ইন্দিরা গান্ধী মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসেন ৪ নভেম্বর ১৯৭১। সেই বৈঠকের মূল প্রসঙ্গ ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি। কিন্তু আলোচনা ব্যর্থ হয়। নিক্সন ও কিসিঞ্জার বিলক্ষণ অনুধাবন করেন, ইন্দিরা গান্ধীকে বাগে আনা যাবে না, বাংলাদেশ প্রশ্নে তিনি একচুলও ছাড় দেবেন না। কার্যত বাংলাদেশ প্রশ্নে লাগাতার চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা এবং ওয়াশিংটনের দুর্ভাগ্যজনক পাকিস্তানপন্থি কৌশলগুলো অকার্যকর পরিণত করেন ইন্দিরা গান্ধী। তার যুক্তি, দৃঢ়তা ও বিস্ময়কর আন্তর্জাতিক জনসংযোগের ফলে বিশ্বজনমত বাংলাদেশের পক্ষে আসে।

এদিকে, ২১ ডিসেম্বর ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস তাদের সরকারের কাছে দুটি সুপারিশ পাঠায়। ১. দ্রুত বাংলাদেশ সরকারকে মেনে নেওয়া এবং ২. অবিলম্বে শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিতে পাকিস্তান সরকারকে চাপ প্রয়োগ করা।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে আটক রাখা হয়। সেখানে প্রহসনের বিচারে বঙ্গবন্ধুকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সব বাধা কাটিয়ে তিনি ফিরে আসেন বাংলার মানুষের মাঝে।

মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পরও বঙ্গবন্ধুর মুক্তি নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল। পাকিস্তানি জান্তারা তখনো তাকে হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধীর ক্রমাগত প্রচেষ্টা, চাপ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকার কারণে তা আর বাস্তবায়ন করতে পারেনি পাকিস্তানি জান্তা। বিজয়ের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য পাকিস্তানের প্রতি দাবি জানানো হয়েছিল। জাতিসংঘের মহাসচিব, ইউরোপের প্রায় অর্ধেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, আন্তর্জাতিক আইনজীবী সমিতিও মুক্তির দাবি জানায়। বেশ কিছু মুসলিম দেশ এবং সোভিয়েত ইউনিয়নও পাকিস্তানকে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য চাপ দেয়। অবশেষে ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি করাচির এক জনসভায় জুলফিকার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জনসম্মুখে ঘোষণা করেন।

জাতির পিতা পাকিস্তান থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারির ভোরবেলা। এদিন বঙ্গবন্ধু ও ড. কামাল হোসেনকে একই বিমানে তুলে দেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় তারা পৌঁছান লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে। ব্রিটিশ রাজকীয় বিমানবাহিনীর বিশেষ বিমান ‘কমেট’-এ চড়ে পরদিন ৯ জানুয়ারি রাতে দেশের পথে যাত্রা করেন বঙ্গবন্ধু। ১০ তারিখ সকালেই তিনি নামেন দিল্লিতে। দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ঢাকায় পৌঁছান। আনন্দে আত্মহারা লাখ লাখ মানুষ ঢাকা বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত তাকে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানান।

বিকাল ৫টায় রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে তিনি ভাষণ দেন। শেখ মুজিবুর রহমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়ে সেদিন ঐতিহাসিক এবং আরেকটি ধ্রুপদী ভাষণ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘যে মাটিকে আমি এত ভালোবাসি, যে মানুষকে আমি এত ভালোবাসি, যে জাতিকে আমি এত ভালোবাসি, আমি জানতাম না সেই বাংলায় আমি যেতে পারব কি না। আজ আমি বাংলায় ফিরে এসেছি বাংলার ভাইদের কাছে, মায়েদের কাছে, বোনদের কাছে। বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন।’

দিবসটি স্মরণে বিভিন্ন কর্মসূচি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। আজ সোমবার বেলা ৩টায় অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশনের শহিদ মনিরুল আলম মিলনায়তন থেকে সব টেলিভিশন চ্যানেল, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারিত হবে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভাচু‌র্য়ালি উপস্থিত থেকে এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন। অনুষ্ঠানে বাবা ও মাকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানার লেখা কবিতা আবৃত্তি করা হবে। আলোচনাপর্বে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস সম্বন্ধে আলোচনা করবেন বিশিষ্ট আলোচকবৃন্দ। দেশের খ্যাতনামা শিল্পীদের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আরো থাকবে বিশ্বখ্যাত অস্কারজয়ী ভারতীয় সুরকার ও সংগীতশিল্পী এ আর রহমানের কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বাংলা গান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here