তৃতীয় দিনেও ধর্মঘট অব্যাহত, অচল সারা দেশ

0
281

খবর৭১ঃ ডিজেলের বাড়তি দাম প্রত্যাহার বা ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে টানা তৃতীয় দিন রোববারও অব্যাহত রয়েছে সড়ক পরিবহণ মালিক ও শ্রমিকদের ধর্মঘট।

বাস ও ট্রাকের পর সারা দেশে বন্ধ রয়েছে লঞ্চও। এখন চলছে শুধু ট্রেন ও সীমিত আকারে বিআরটিসির বাস। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ

গণপরিবহণ না পেয়ে বিকল্প যানবাহনে ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে যেতে বাধ্য হয়েছেন তারা। গুনতে হয়েছে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া।

সকালে অফিস-আদালত খোলা রয়েছে। রাজধানীর প্রতিটি বাস স্টপেজে দেখা গেছে গাড়ির জন্য অপেক্ষমায় থাকা যাত্রীদের ভিড়।

রোববার গাবতলী, মিরপুর ও মহাখালী বাস টার্মিনাল এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।

পরিবহণ ধর্মঘট অব্যাহত থাকলে মানুষের ভোগান্তির তীব্রতা আরও বাড়বে-এমন আশঙ্কা চাকরিজীবীদের। এদিকে বাস-লঞ্চ বন্ধ থাকার প্রভাব পড়েছে ট্রেনের ওপর।

সরেজমিন দেখা গেছে, শুক্রবার-শনিবারের চেয়ে রোববার রাজধানীর সড়কে মানুষের উপস্থিতি বেশি ছিল। রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বাসস্ট্যান্ড ও মোড়গুলোতে শত শত মানুষকে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।

বেশিরভাগ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও শিল্প-কারখানা খোলা থাকায় কর্মজীবীদের ভোগান্তিও বেড়েছে কয়েকগুণ।

এর সুযোগ নিয়েছে রিকশা ও অটোরিকশাসহ ছোট ছোট যানবাহন। একই চিত্র দেখা গেছে দূরপাল্লার রুটেও।

বাস বন্ধ থাকায় প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও মিনি ট্রাকে গাদাগাদি করে ভেঙে ভেঙে যেতে দেখা গেছে।

এদিকে কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলোতে উপচে পড়া যাত্রী উঠতে দেখা যায়।

বাসের ভাড়া বাড়ানো নিয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সঙ্গে আজ বৈঠকে বসছেন বাস মালিকরা। জানা গেছে, জ্বালানি তেলের বাড়তি দামসহ ১৯টি খাতের ব্যয় ধরেই ভাড়া নির্ধারণ করার প্রক্রিয়া চলছে।

প্রতিটি ধাপেই বাড়তি দর যুক্ত করে নতুন ভাড়া নির্ধারণের দাবি করেছেন মালিকরা।

রাজধানীর খিলগাঁও বাসস্টপেজে পরিবার নিয়ে মিরপুর ২ যাবেন বলে গাড়ির অপেক্ষা করছিলেন আশিক আজাদ নামের এক যাত্রী। তিনি জানান, প্রায় ২০ মিনিট ধরে কোনো গাড়ির দেখা পাচ্ছি না। ধর্মঘট অমান্য করে যে কয়েকটি গাড়ি চলছে তাতে উপচে পড়া ভিড় রয়েছে। গাড়িতে ওঠা যাচ্ছে না।

কুষ্টিয়ার উদ্দেশে রওয়ানা হওয়া কাজী রহমান বলেন, জরুরি কাজে কুষ্টিয়া যেতে হচ্ছে।

সিএনজি অটোরিকশায় গুলিস্তান থেকে মাওয়া যেতে ভাড়া হাঁকছে ৩০০ টাকা। অন্য সময়ে বাসে একশ টাকায় এ পথ যেতাম।

গাবতলীর এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরি করেন আলম সরকার; তিনি বলেন, মালিবাগ থেকে গাবতলী পর্যন্ত যেতে সিএনজি অটোরিকশাচালক ভাড়া চেয়েছেন ৬০০ টাকা। পরে বাধ্য হয়ে ৫০০ টাকায় যেতে হয়েছে।

পরিবহণ খাতের অচলাবস্থা নিরসনের উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম বলেন, বাসের ভাড়া আমরা নির্ধারণ করে থাকি। ট্রাকের ভাড়া নির্ধারণ করা হয় না।

তেলের বাড়তি দাম প্রত্যাহারের দাবিতে পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখার বিষয়টি আমাদের আওতাধীন নয়। যৌক্তিক কারণে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে জ্বালানি মন্ত্রণালয়। তেলের দাম কমানোর এখতিয়ার ওই মন্ত্রণালয়ের।

তিনি বলেন, বাস ভাড়ার বিষয়টি আমরা দেখছি। সবার জন্য ভালো হয় এমন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বিদ্যমান ভাড়ার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ অতিরিক্ত বাড়াতে সরকার রাজি হলে তারা আজই ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেবেন।

এদিকে পণ্য পরিবহণ ধর্মঘট নিয়ে শনিবার ধানমন্ডিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে তার বাড়িতে বৈঠক করেন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের একাংশ। এতে পরিবহণ নেতারা জ্বালানি তেলের দাম ও দুটি সেতুর বাড়তি টোল প্রত্যাহারের দাবি জানান।

বৈঠকে দাবি আদায় না হওয়ায় পণ্য পরিবহণ নেতারা তাদের ধর্মঘট অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন।

বৈঠকে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ ট্রাকচালক শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি তালুকদার মো. মনির বলেন, আমরা জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার, চাঁদা আদায় বন্ধ, ব্রিজের বাড়তি টোল আদায় বন্ধসহ বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছি।

এগুলো মানা হলে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করে আমাদের সিদ্ধান্ত জানাবেন।

ওই বৈঠকে অংশ নেন বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোতালেব।

শনিবার রাতে তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যেহেতু আমাদের আর কোনো কিছু জানাননি, তাই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভাড়া বাড়ানো হলে বাস মালিকরা তাদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করতে পারেন। কিন্তু আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত পণ্যবাহী ট্রাকের ধর্মঘট চলবে।

২০১৯ সালে দূরপাল্লার ৫২ আসনের বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ২ টাকা ৭ পয়সা এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলরত বাসে ২ টাকা ২১ পয়সা প্রস্তাব করেছিল বিআরটিএ।

ওই হারের চেয়ে আরও বেশি ভাড়া নির্ধারণের দাবি করছেন তারা।

বর্তমানে দূরপাল্লার বাসে প্রতি কিলোমিটার ১ টাকা ৪২ পয়সা এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর বাসে ১ টাকা ৭০ পয়সা ভাড়া নির্ধারিত আছে।

অপরদিকে পণ্যবাহী ট্রাক ধর্মঘট নিরসন নিয়ে শনিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পরিবহণ নেতাদের একাংশের বৈঠক হলেও তা সফল হয়নি। এ অবস্থায় তেলের বাড়তি দাম প্রত্যাহারসহ কয়েকটি দাবিতে পণ্যবাহী ট্রাক ধর্মঘট চালিয়ে যেতে অনড় অবস্থায় রয়েছেন মালিক-শ্রমিক নেতারা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here