ডেটিং সাইটে পরিচয়, চার প্রেমিককে সায়ানাইড দিয়ে খুন করেন বিধবা

0
307

খবর৭১ঃ ম্যাচ মেকিং এজেন্সির মাধ্যমে পরিচয় হওয়া নতুন প্রেমিকা নিয়ে ভীষণ খুশি ছিলেন এক ব্যক্তি। পরিচয়ের মাত্র দুই মাস পর সদ্য পরিচিত ৬৭ বছর বয়সী বিধবা নারীর সঙ্গে বিয়েটাও সেরে ফেলেন তিনি। আর দশটা সাধারণ নবদম্পতির মতো সুখেই কাটছিল তাদের দিন। এমনকি নতুন বছর উপলক্ষে ২৮ ডিসেম্বর কেকও বানিয়েছিলেন তারা। কিন্তু নতুন বছর দেখার জন্য বেঁচে ছিলেন না ওই ব্যক্তি। তিনি ছিলেন ‘কৃষ্ণ বিধবা’ হিসেবে পরিচিত ওই বিধবা নারীর চতুর্থ আর সর্বশেষ শিকার।

বলা হচ্ছে জাপানের কুখ্যাত চিসাকো কেকেহির কথা। ২০১৩ সালে নিজের সর্বশেষ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে ছিলেন তিনি। ২০০৭ সালে থেকে শুরু করে ২০১৩ সাল পর্যিন্ত একে একে চারজন প্রেমিককে পটাশিয়াম সায়ানাইড দিয়ে খুন করেন ‘কৃষ্ণ বিধবা’ চিসাকো কেকেহি।

মাত্র ২৩ বছর বয়সে প্রথমবার বিয়ের পিঁড়িতে বসেন কেকেহি। ২৫ বছর সংসার করার পর ১৯৯৪ সালে অসুস্থতার কারণে কেকেহির প্রথম স্বামী মারা যান।

প্রথম শিকার

২০০৭ সালে ৭৮ বছর বয়সী তোশিয়াকি সুইহিরোর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান কেকেহি। সে সময় কেকেহির বয়স ছিল ৬১ বছর।

২০০৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর তোশিয়াকি সুইহিরোর সন্তানদের সঙ্গে দুপুরের খাবার খান কেকেহি। খাবার পর তোশিয়াকি সুইহিরো তার নিয়মিত ওষুধগুলো সেবন করতেন। তোশিয়াকি সুইহিরোর নিয়মিত সেবন করা একটি ক্যাপসুলে লুকিয়ে তাকে সায়ানাইড খাইয়ে দেন কেকেহি। ১৫ মিনিট পর রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে যান তোশিয়াকি সুইহিরো। হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়।

দ্বিতীয় শিকার
কেকেহির দ্বিতীয় শিকার ছিলেন মাসানোরি হোন্ডা নামে ৭১ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। ২০১২ সালে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান তারা। ২০১২ সালের ৯ মার্চ কেকেহির সঙ্গে একটা দোকানে দেখা করেন মাসানোরি। এরপর তারা যে যার পথে চলে যান। কিন্তু কেকেহি যাওয়ার কিছুক্ষণ পর অজ্ঞান হয়ে যায় মাসানোরি। দুই ঘণ্টা পর তার মৃত্যু হয়।

তৃতীয় শিকার
এদিকে, মাসানোরির মৃত্যুর দুই মাস আগে ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকেই একটি ডেটিং এজেন্সির মাধ্যমে আরেক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হয় কেকেহির। গোপনে প্রেমও শুরু করেন তারা। ফুসফুস ক্যান্সাস থেকে বেঁচে ওঠা মিনোরু হিওকিকে একই কায়দায় খুন করেন কেকেহি।

চতুর্থ শিকার
২০১৩ সালে আইসাও ককেহিকে বিয়ে করেন কেকেহি। ৭৫ বছর বয়সী ককেহিই ছিলেন কেকেহির সর্বশেষ শিকার।

কেন এই হত্যাকাণ্ড
কেকেহির এই চারজন প্রেমিক কেউ কাউকে চিনতেন না। তারা ছিলেন ভিন্ন শহরের বাসিন্দা। তাদের পেশাও ছিল আলাদা। কিন্তু তাদের মধ্যে একটা বিষয়ে মিল ছিল। তা হলো, তাদের ছিল প্রচুর সম্পত্তি। আর তারা সবাই ছিলেন জীবনের শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ। আর এই বিষয়টি মাথায় রেখেই তাদের টার্গেট করেছিলেন কেকেহি।
এই চারজনের মধ্যে কেকেহির প্রথম শিকার তোশিয়াকি সুইহিরোর মৃত্যুর পর তার সন্তানদের কাছ থেকে ৪৮ মিলিয়ন ইয়েন হাতিয়ে নেন কেকেহি।

একইভাবে মাসানোরি হোন্ডার ১৬ মিলিয়ন ইয়েনও কব্জা করেন কেকেহি। তবে অন্য দুজনের কাছ থেকে কেকেহি ঠিক কত ইয়েন পেয়েছিলেন তা জানা যায়নি।

যেভাবে ধরা পড়লেন কেকেহি
জাপানে সাধারণত লাশের ময়নাতদন্ত করা হয় না। কিন্তু আইসাও ককেহির মৃত্যুর পর সন্দেহ হয় পুলিশের। তার লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। ময়নাতদন্তে আইসাও ককেহির শরীরে পটাশিয়াম সায়ানাইডের উপস্থিতি পাওয়া যায়। কেকেহি যেহেতু আইসাও ককেহির স্ত্রী ছিলেন তাই তার বাসায় তল্লাশি করে পুলিশ। কেকেহির কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় পটাশিয়াম সায়ানাইড। এরপর তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। একে একে বাকি তিনজনের হত্যার ঘটনা সমানে আসে।

কেকেহির শাস্তি
এসব অভিযোগে কেকেহিকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। ৭৪ বছর বয়সী এই ‘কৃষ্ণ বিধবা’ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার অপেক্ষায় আছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here