১৬০ ইউপি ও ৯ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ চলছে

0
298

খবর৭১ঃ দেশে প্রথম ধাপের ১৬০টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ও ৯টি পৌরসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে।

সোমবার সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়; একটানা চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। সব পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়ন পরিষদে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেওয়া হচ্ছে।

একইদিন সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান এবং দুটি পৌরসভার একটি করে ওয়ার্ডে উপনির্বাচন চলছে। ইতোমধ্যে তিনটি পৌরসভায় মেয়র, ৪৪ জন ইউপি চেয়ারম্যান, ৩৯ জন ইউপি সদস্য ও সাতজন সংরক্ষিত সদস্য বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ওইসব পদ বাদে বাকিগুলোতে ভোটগ্রহণ চলছে আজ। বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের বাদে ইউপিতে ৮ হাজার ৭১০ জন ও পৌরসভায় ৪৮৬ জন প্রার্থী লড়ছেন।

নির্বাচন ঘিরে সংশ্লিষ্ট অনেক এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। তবে বেশ কয়েকটি এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ, প্রচারে বাধা, নির্বাচনি অফিস ভাঙচুরসহ বিভিন্ন ঘটনায় সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা বিরাজ করছে।

অনেক ইউপি ও পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরাও মাঠে রয়েছেন। এ নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

এদিকে একজন প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালানো কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলমকে সতর্ক করেছে ইসি। যদিও নির্বাচন কমিশন সচিব জানিয়েছেন, যে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে তাতে স্বচ্ছ, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে বলে প্রত্যাশা করছেন।

এদিকে রোববার কেন্দ্রে কেন্দ্রে নির্বাচনিসামগ্রী পাঠানো হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের চাহিদার ভিত্তিতে নোয়াখালীর সুবর্ণচর ও হাতিয়া উপজেলার সবকটি এবং কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার একটি ইউনিয়নে আজ সকালে ব্যালট পেপার পাঠানো হয়।

এছাড়া কক্সবাজার, খুলনা, বাগেরহাট ও নোয়াখালী জেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

এক নজরে ১৬০ ইউপি নির্বাচন: ছয়টি জেলার ২৩টি উপজেলার ১৬০টি ইউনিয়ন পরিষদের ৪৪টিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছেন। বাকি ১১৬টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে ৫০০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১৬০ ইউপির এক হাজার ৪৪০টি সাধারণ সদস্য পদের মধ্যে ৩৯টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় হওয়ায় বাকিগুলোতে ভোট হচ্ছে। এসব পদে ৬ হাজার ২৪৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। একইভাবে এসব ইউপির ৪৮০টি সংরক্ষিত সদস্য পদে সাতজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি ৪৭৩ পদে এক হাজার ৯৪১ জন লড়াই করছেন। সবমিলিয়ে ১৬০ ইউপিতে ৮ হাজার ৭১০ প্রার্থী লড়ছেন।

ইউপি নির্বাচনে পুলিশ-আনসার সমন্বয়ে ১৬৪টি মোবাইল টিম ও ৫৩টি স্ট্রাইকিং টিম মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া র‌্যাবের ৩২০টি টিম, স্ট্রাইকিং ১৬০টি টিম ও অতিরিক্ত ১১টি টিম রয়েছে। বিজিবির ৩২০ প্লাটুন মোবাইল, ১৬০ প্লাটুন স্ট্রাইকিং ও অতিরিক্ত ১৭ প্লাটুনও মাঠে রয়েছে। কক্সবাজার, বাগেরহাট ও খুলনার উপকূলীয় ইউপিগুলোতে বিজিবির বদলে কোস্টগার্ড সদস্য রাখা হয়েছে।

আচরণবিধি প্রতিপালনে ৬৯ জন নির্বাহী ও ২৩ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটও রয়েছেন। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের পাহারায় পুলিশ ও আনসারের ২২ সদস্য মোতায়েন থাকছেন।

সব ইউনিয়নে রোববার কেন্দ্রে কেন্দ্রে নির্বাচনিসামগ্রী পাঠানো হয়। তবে নোয়াখালীর সুবর্ণচর, হাতিয়া, কক্সবাজার জেলার পেকুয়ায় আজ সকালে ব্যালট পেপার পাঠানো হয়।

ইসি সচিব জানান, যেসব স্থানে রিটার্নিং কর্মকর্তারা মনে করেছেন সকালে ব্যালট পেপার দিলে তারা সুষ্ঠুভাবে ভোট আয়োজন করতে পারবেন, সেখানে সকালে ব্যালট পেপার পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

৯ পৌরসভায় নির্বাচন: ষষ্ঠ ধাপের ৯টি পৌরসভার মধ্যে লাঙ্গলকোট, বোয়ালখালী ও কবিরহাট পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছেন। বাকি ছয়টি পৌরসভায় ২৭ জন মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নয়টি পৌরসভার ৮১টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৩৬৭ জন ও ২৭টি সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৯২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সবমিলিয়ে পৌরসভায় ৪৮৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

পৌরসভা নির্বাচনে প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে ১১ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৩ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রাখা হয়েছে। আচরণবিধি প্রতিপালনে প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে মোট ৮১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও প্রতি পৌরসভায় একজন করে নয়জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটও রয়েছেন। কেন্দ্রের বাইরের আইনশৃঙ্খলারক্ষায় ৯টি পৌরসভায় পুলিশের ২৭টি মোবাইল টিম, ৯টি স্ট্রাইকিং টিম, র‌্যাবের ২৭টি টিম ও ২০ প্লাটুন বিজিবি মাঠে রয়েছেন। পৌরসভাগুলোতে ভোটার রয়েছেন ২ লাখ ৭৬ হাজার ৮৪২ জন।

স্থানীয় সরকারের এসব নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে শনিবার বিকালে প্রেস ব্রিফিং করেন ইসির সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার। তিনি বলেন, আমরা যে প্রস্তুতি নিয়েছি তাতে আশা করতে পারি স্বচ্ছ, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমরা বলতে পারি, ভোট সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি আমরা দেখছি। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বলেছি। তারাও আমাদের কথা দিয়েছেন।

ইসি সচিব বলেন, জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের চাহিদার ভিত্তিতে চারটি জেলায় বিজিবি ও কোস্টগার্ডের বাড়তি সদস্য মোতায়েন করেছি। তারা আমাদের জানিয়েছেন, সেখানে অতিরিক্ত ফোর্স লাগবে, আমরা বাড়তি ফোর্স মোতায়েন অনুমোদন করেছি। কমিশন সব সময় ফ্রি ফেয়ার ক্রেডিবল ইলেকশন আশা করে।

বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের বিষয়ে তিনি বলেন, যেখানে কেউ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন না করে সেখানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্র্বাচিত হবেনই। যেসব ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন, সেখানে সাধারণ সদস্য পদে ভোট হবে।

তফসিল ঘোষণার ছয় মাসের বেশি সময় পর এসব পৌর ও ইউপিতে আজ ভোট হতে যাচ্ছে। ১১ এপ্রিল এসব ভোট হওয়ার কথা ছিল। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে দুই দফায় নির্বাচন পিছিয়ে যায়। যদিও এর আগে প্রথম ধাপের ২০৪টি ইউপিতে ভোট হয় ২১ জুন। ৫টিতে প্রার্থী মারা যাওয়ায় এবং সেন্টমার্টিন ইউপিতে যাতায়াত সমস্যা থাকায় সেগুলোতে এই মুহূর্তে ভোট হচ্ছে না। আজ ১৬১টিতে ভোট হওয়ার কথা থাকলেও উচ্চ আদালতের নির্দেশনার কারণে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউপির ভোট স্থগিত করেছে ইসি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here