খবর৭১ঃ
শিশু ঘুমায় না। প্রায় সব মায়েদের একই অভিযোগ। শিশুদের ঘুম না আসার কারণ হলো হরমোন। আমাদের শরীরে হরমোনের বংশ যেমন আচরণ করবে, আমাদের শারীরিক ক্রিয়াকলাপও সেইভাবেই ঘটবে।
কিছু কিছু খাবারের মধ্যে ট্রিপটোফান নামক একটি বিশেষ উপাদান থাকে। আসলে ট্রিপটোফান একটি অ্যামিনো অ্যাসিড যা আমাদের শরীরকে প্রোটিন সংশ্লেষণে সাহায্য করে। এই ট্রিপটোফান আমাদের মস্তিষ্ককে সেরোটোনিন নামক কেমিক্যাল তৈরিতে সাহায্য করে।
এই সেরোটোনিন থেকেই আমাদের স্লিপ হরমোন, ঘুমপাড়ানি হরমোন বা মেলাটোনিন তৈরি হয়। মেলাটোনিন নামের হরমোন আমাদের ঘুম পাড়ানোর কাজে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে।
শিশুর সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে, পুষ্টিকর খাদ্যের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। পর্যাপ্ত ঘুম এনার্জি, নিউরোলজিক্যাল ফাংশন, মেজাজ ঠিক থাকা, শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমান জীবনযাত্রায় অনেক বাচ্চার মধ্যেই সঠিক পরিমাণে ঘুমের অভাব লক্ষ্য করা যায়, যা বাচ্চার স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। এমনকি বাচ্চাদের ঘুম পাড়াতে বাবা-মাকে নাজেহালও হতে হয়। আপনার সন্তানকে ভালোভাবে ঘুমাতে সাহায্য করে যেসব খাবার-
দুধ
এক গ্লাস গরম দুধ ভালো ঘুম হওয়ার সবচেয়ে কার্যকর উপায়। দুধে ট্রিপটোফ্যান থাকে, যা সেরোটোনিন এবং মেলাটোনিন উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি অ্যামিনো অ্যাসিড। তাই দুধ ভালো ঘুম হতে সহায়তা করে।
ডিম
ডিম কেবলমাত্র উচ্চমানের প্রোটিন এবং পুষ্টি সমৃদ্ধই নয়, এটি হল ট্রিপটোফ্যান-এর প্রাকৃতিক উৎস, যা হলো এক ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড। ডিমে উপস্থিত এই অ্যামিনো অ্যাসিড, সেরোটোনিন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি একটি রাসায়নিক যা স্লিপ সাইকেল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
কলা
কলা ট্রিপটোফ্যান এবং ম্যাগনেসিয়ামের দুর্দান্ত উৎস, তাই এটি ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে। তথ্য অনুসারে, ম্যাগনেসিয়াম এর ঘাটতির ফলে ঘুমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যদি আপনার বাচ্চা কলা খেতে না পছন্দ করে, তাহলে আপনি তাকে ম্যাগনেসিয়ামের অন্যান্য উৎস, যেমন – বিভিন্ন ধরনের বাদাম, পালং শাক, এডামামে, এই জাতীয় খাবার দিতে পারেন।
কিউই
রোজ ঘুমানোর আগে ২টি কিউই খেলে ঘুম ভালো হতে পারে। গবেষণা অনুসারে, যারা ঘুমানোর আগে ২টি কিউই খান, তাদের ক্ষেত্রে ৪২ শতাংশ দ্রুত ঘুম আসে। তবে এই গবেষণা প্রাপ্ত বয়স্কদের উপর হয়েছিল, বাচ্চাদের উপর নয়। তাই বাচ্চাকে রোজ কিউই খাওয়ানোর আগে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে নিন।
খেজুর
আপনার বাচ্চা যদি মিষ্টি জাতীয় কিছু খেতে চায়, তাহলে তাকে খেজুর দিতে পারেন। খেজুর ভালো ঘুমের পক্ষে দুর্দান্ত কাজ করে। খেজুরে ভিটামিন- বি৬ এবং পটাশিয়াম থাকে, যা ঘুমের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ছোলা
ছোলা অ্যামিনো অ্যাসিড ট্রিপটোফ্যান সমৃদ্ধ, যা মেলাটোনিন উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও, ছোলাতে ভিটামিন বি৬ থাকে, যা সেরোটোনিন উৎপাদনে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। মেলাটোনিন ও সেরোটোনিন উভয়ই দুর্দান্ত ঘুম হতে সহায়তা করে।
আখরোট
আখরোট মেলাটোনিন হরমোনের একটি দুর্দান্ত উৎস, যা ঘুম নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও, এতে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ফাইবার এবং উদ্ভিদ-ভিত্তিক প্রোটিন থাকে, যা ভালো ঘুমের জন্য দুর্দান্ত কাজ করতে পারে। তাই বাচ্চাদের খাদ্যতালিকায় আখরোট অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করুন।
শিশুকে নতুন কোনও খাবার খাওয়ানোর আগে সবসময় ডাক্তারের পরামর্শ নিন।