খবর৭১ঃ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন হলে দেশে নতুন নতুন বিনিয়োগ হবে, সৃষ্টি হবে নতুন কর্মসংস্থানের। ফলে দেশের অর্থনীতিতে নতুন দিগন্তের উন্মোচন হবে।
শুক্রবার (৪ জুন) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার (৩ জুন) অর্থমন্ত্রী আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পেশ করেন। রীতি অনুযায়ী, প্রস্তাবিত বাজেটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে শুক্রবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক। সেখানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবেরাও উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বাজেট বাস্তবায়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরার পাশাপাশি সরকারের আয় বাড়ানোর পদ্ধতি ও পদক্ষেপগুলোও তুলে ধরেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারির কারণে দেশের অর্থনীতি প্রথমে কিছুটা হোঁচট খেলেও আমরা এটি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি। সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে আমরা অর্থনীতির ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের অর্থনীতি এখন এগিয়ে চলেছে।
মন্ত্রী বলেন, বাজেটে কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়টিকে জোর দিতে গিয়ে বেসরকারি খাতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
বাজেটে কর ছাড়ের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য রেখেছি, আইনটিকে আমরা সহজ করব। আমরা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি যদি আমরা আইনটিকে সহজ করতে পারি, ট্যাক্স পেয়ারদের যদি এই কাজে সম্পৃক্ত করতে পারি, তাহলে রেভিনিউ জেনারেশন অনেক বৃদ্ধি পাবে। রেভিনিউ জেনারেশন বাড়াতে পৃথিবীর অনেক দেশ চেষ্টা করেছিল। এমনকি আমেরিকায়ও কোনো একসময় ৭৫ শতাংশ ট্যাক্সের পরিমাণ ছিল, সেটা এখন নেই। বেশি করে ট্যাক্স আদায় করা যায় কি না সেটি সবাই চেষ্টা করেছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি যদি আমরা রেভিনিউয়ের হার আস্তে আস্তে কমাই, তাহলে আমাদের কালেকশন বাড়বে। আমরা যে কর কমালাম, আমরা বিশ্বাস করি ‘উই উইল বি উইনার’। করের হার কমানো হয়েছে, আশা করি আমাদের রেভিনিউ কালেকশন আরও বাড়বে।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যবসায়ী যারা বলছে ব্যবসায়ীবান্ধব বাজেট করার কথা। ব্যবসায়ী শব্দটি ফ্লেক্সিবল জব, এটাকে ফিক্সড করে রাখা যাবে না। প্রত্যেক সময় মানুষের চাহিদার পরিবর্তন হয়। চাহিদা পূরণে ব্যবসায়ীদেরও পরিবর্তন আসে। তাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্যও পরিবর্তন আসে। সুতরাং এটা কখনো ফিক্স রাখা যাবে না। আমাদের সিচুয়েশন কী ডিমান্ড করে, সারা বিশ্ব কী করছে, সেটি দেখতে হবে। উন্নত বিশ্ব যদি পিছিয়ে পড়ে, তাহলে আমরা কিন্তু এগুতে পারব না। কারণ উন্নত বিশ্বের মাধ্যমে কিন্তু আমরা সমৃদ্ধ। আজকে মার্কিন ইকোনমি এটাই আমাদের শেখায়, আমরা একে অপরের সাথে সম্পৃক্ত।’
অর্থমন্ত্রী গতকাল ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেন। এবারের বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। গত বছরের চেয়ে এবার বাজেটের ব্যয় বেড়েছে ১২ ভাগ। বাজেটে মোট ঘাটতি ধরা হয়েছে দুই লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ। এই হার গত বাজেটে ছিল ৬ দশমিক ১ শতাংশ। বাজেটের এই ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এক লাখ ১৩ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে। এ ছাড়া বৈদেশিক উৎস থেকে এক লাখ এক হাজার ২২৮ কোটি টাকা সংগ্রহের কথা বলা হয়েছে।
এবারের বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ ধরা হয়েছে দুই লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া এবার উন্নয়ন ব্যয়ও বাড়ানো হয়েছে শতকরা ১৪ ভাগ। এবার উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে দুই লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা।
করোনা মহামারি মোকাবিলায় এবার ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাজেটে পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা। গোটা বাজেটের মতোই পরিচালন ব্যয়ও বাড়ানো হয়েছে প্রায় ১২ ভাগ।
শুক্রবার (৪ জুন) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবিত বাজেটের বিভিন্ন দিক সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেটে অর্থ সংগ্রহের জন্য রাজস্ব খাতের আয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন লাখ ৩০ হাজার ৭৮ কোটি। কর আদায় হবে এক লাখ ২৭ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা।