গরমে কেন ঠোঁট ফাটছে?

0
321

খবর৭১ঃ
সাধারণত শীতকালে ঠোঁট ফাটে। কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে, এই গরমেও অনেকের ঠোঁট ফাটছে। এর কারণ কী? গমরে ঠোঁট ফাটার কথা ইতোমধ্যে অনেকেই ফেসবুকে লিখছেন।

লামিয়া ইসলাম নামে একজন লিখেছেন, ‘প্রকৃতির এমন অদ্ভুত রূপ ইতিপূর্বে আমি পাইনি।

গরমে নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে অথচ সেভাবে ঘামছে না শরীর। উল্টো এই গরমের দিনে ঠোঁট ফাটছে, চামড়া উঠছে। ’
আবার সমস্যাটি যে শুধু মেয়েদেরই হচ্ছে তাও নয়। ছেলেদের মধ্যেও অনেকে বলছেন, ঠোঁট ফাটার যন্ত্রণা থেকে রক্ষা পেতে তারা শীতকালে ব্যবহার করা হয় এমন লিপ বাম পকেটে নিয়ে ঘুরছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সঞ্জয় বসাক বলেছেন,‘আমার কাছে এটা খুবই ইউনিক এক্সপেরিয়েন্স, এটা আগে কখনো হয়নি। এই চার-পাঁচদিন আগে নিচের ঠোঁটের চামড়া উঠতেছে, ভাবলাম কোনো স্কিন ডিজিজ কি না। পরে দেখি যে, এটা নিয়ে অনেক লেখাও আছে। এটা আগে কখনো হয়নি।

এমনকি এবার গরমে ঘামও কম। ’
কিন্তু গরমে কেন ঠোঁট ফাটছে?

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসক প্রফেসর মোস্তফা জামান বলেছেন, আবহাওয়া বা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগের মতো শীতকাল এখন আর হয় না এবং একই সাথে ঋতুগুলোর বৈশিষ্ট্যেও পরিবর্তন আসার প্রভাব পড়ছে মানবশরীরেও।

তিনি বলেন, এখন রোজার সময় আবার গরমও অনেক পড়ছে, যে কারণে অনেকেই পানিশূন্যতায় ভুগছেন। গরমের কারণেই কারও ঠোঁট ফাটছে, আবার কারও কোষ্ঠকাঠিন্য হচ্ছে। কারণ, চামড়া শুষ্ক হয়ে যাচ্ছে দ্রুত।

তিনি জানান, শুষ্কতার কারণে স্কিনের জলীয় অংশ দ্রুত কমে যাচ্ছে। ঠোঁট বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। কারণ, ঠোটের বাইরের দিকটার চামড়া থাকে খুবই পাতলা ধরনের।

জামান বলেন, যারা রোজা পালন করেন, তাদের এটা বেশি হতে পারে। কারণ, সেহেরি থেকে ইফতার পর্যন্ত প্রায় ১৪ ঘণ্টা পানাহার থেকে বিরত থাকতে হয় এই গরমে। তবে এটা কোনো বড় সমস্যা নয়। তাপমাত্রার স্বাভাবিক প্রভাব। সচেতন থাকলেই এটি এড়ানো সম্ভব।

সাধারণত ঠোঁট ফাটে কেন?

শরীরের চামড়ার তুলনায় ঠোঁট বেশি ফাটে, কারণ এটি মূলত চামড়ার উপরিভাগের খুব পাতলা স্তর। তাই শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি হলে শরীর থেকে জলীয় অংশ কমে যায় এবং তখন চামড়ার এই স্তরটি দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত অর্থাৎ শুকিয়ে ফেটে যায়।

‘ঠোঁটের এই স্তরটিকে আমরা এপিডারমিস বা বহিঃস্তর বলি। এটি পাতলা হওয়ায় তাপমাত্রার হেরফেরে বা বাতাস আদ্র হলে দ্রুত প্রভাব পড়ে এর ওপর,’ এমনটাই বলছিলেন প্রফেসর মোস্তফা জামান।

তিনি বলেন, ‘আবার ঠোঁট সামান্য শুষ্ক হলে অনেকে জিহ্বা দিয়ে ভেজানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু পরে স্যালাইভা শুকিয়ে গেলে ঠোট আরও শুষ্ক হয়ে ওঠে ও ফেটে যেতে পারে। ’

তিনি বলেছেন, অনেক সময় উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট, কিডনি বা ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু ঔষধও শরীর থেকে পানি বের করে নেয় এবং সে কারণেও অনেকের ত্বক বিশেষ করে ঠোঁটে প্রভাব পড়ে।

আবার অনেক সময় ঠোঁটের অবস্থান নাকের ঠিক নিচে থাকার জন্য নিঃশ্বাসের সাথে বেরিয়ে আসা গরম বাতাসের প্রভাবেও ঠোঁট শুষ্ক হয়ে ওঠে।

সমাধান কী?

চিকিৎসকরা ঠোঁট ফাটা থেকে রক্ষা পেতে কিছু পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এগুলো হলো:

প্রচুর পানি পান করা। ঠোঁটের যত্ন নেওয়া। তীব্র সূর্যালোক ও ধুলোবালি এড়ানো। সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। প্রয়োজনে ভ্যাসলিন ব্যবহার করা (তবে রাসায়নিক মিশ্রিত কোনো কিছু ব্যবহার থেকে সাবধান থাকার কথা বলেন চিকিৎসকরা)।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here