খবর৭১ঃ বসুন্ধরার এভার কেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বুধবার (২৮ এপ্রিল) রাতে গুলশানে চেয়ারপারসন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা জানাতে গিয়ে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক টিমের সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, উনার (খালেদা জিয়া) যে চিকিৎসা বাসায় চলছিলো সেই চিকিৎসাসহ সেখানে আরো কিছু নতুন ঔষধ যুক্ত করা হয়েছে এবং যোগ করার পরিপ্রেক্ষিতে আলহামদুল্লিলাহ উনি (খালেদা জিয়া) এখন স্টেবল। আজকে একটি মেডিকেল বোর্ড করা হয়েছে। এভার কেয়ার হাসপাতালের ৭ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড। আর এই বোর্ডে ম্যাডামের ব্যক্তিগত চিকিৎসক টিমের সদস্য অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী, আমি এবং অধ্যাপক মো. আল মামুনও আজকে ছিলেন। অর্থাৎ ১০ সদস্যের একটা মেডিকেল বোর্ড উনার এই পর্যন্ত যেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে তার রিভিউ করেছেন। পরবর্তিতে উনার আরো কিছু পরীক্ষার সুপারিশ করেছেন।
এই বোর্ডের সুপারিশ মোতাবেক পরীক্ষাগুলো আজকে অথবা কালকে হবে। সেসব পরীক্ষাগুলো রিভিউ করে ম্যাডামের সার্বিক চিকিৎসার প্ল্যানিংটা সম্পন্ন হবে।
অধ্যাপক জাহিদ বলেন, ম্যাডামের অবস্থা স্টেবল। দেশবাসীসহ দলের নেতা-কর্মীদের কাছে আমি উনার জন্য দোয়া করার কথা বলছি। আমরা খুবই আশাবাদী। ইনশাল্লাহ ম্যাডাম খুব শিগগিরই উনার বাসায় ফিরে যাবেন।
এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত এই মেডিকেল বোর্ডের নেতৃত্বে রয়েছেন অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার।
মঙ্গলবার রাতে খালেদা জিয়াকে এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে গত রাতে তার সিটি স্ক্যান (চেস্ট), ইসিজি, ইকো প্রভৃতি হৃদরোগে পরীক্ষাগুলো করা হয়েছে।
কোভিড ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর খালেদা জিয়ার অবস্থা সম্পর্কে অধ্যাপক জাহিদ বলেন, আলহামদুলিল্লাহ গত ১৫ এপ্রিল ম্যাডামের সিটি স্ক্যান করা হয়েছিলো সেখানে আমরা রিপোর্ট দেখে বলেছিলাম ফুসফুসে উনার ‘মিনিমাম ইনভোলবমেন্ট’ আছে। গতকালকে যে চেস্টে সিটি স্ক্যান হয়েছে সেখানে বিন্দুমাত্র ‘ইনভোলবমেন্ট’ নেই। কাজেই আল্লাহ’র কাছে শুকরিয়া এটা ভালো দিক।
উনার হৃদযন্ত্রেরও মধ্যে কোনো ধরনের কার্ডিও সমস্যা নেই। কালকে ডাক্তার সাহেবরা যে পরীক্ষার রিপোর্ট দিয়েছেন সেই রিপোর্টে নেই।
‘খালেদা জিয়া নন করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন’
অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, উনার কোনো করোনা উপসর্গ নেই। উনি কিন্তু এখন নন করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন। আন্তর্জাতিক চিকিৎসার নিয়মই আছেই দুই সপ্তাহের পরে রোগীর কোনো সিনস্ট্রেম না থাকে তাহলে করোনা টেস্ট আর করানোরই প্রয়োজন নেই। তখন ধরে নিতে হবে উনার কাছ থেকে করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর সুযোগ নেই।
খালেদা জিয়া কবে বাসায় ফিরবে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বাসায় ফেরার বিষয়টা প্রেডিক্ট করাটা খুব টাফ। উনার পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন হলে বোর্ড রিভিউ করবেন। তারপরে আমরা আশা করতে পারি খুব সহসাই উনার বাসায় ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে।
খালেদা জিয়া দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ আর্থাটাইটিজ, ডায়াবেটিক, চোখের সমস্যায় ভোগছেন।
জাহিদ বলেন, আপনারা তো জানেন যে, উনার অন্যসমস্ত অসুখ রয়েছে অর্থাৎ রেউমেটেড আর্থারাইটিস, অ্যাপিলেট ডিভিশনের যে সিদ্ধান্ত মোতাবেক মেডিকেল বোর্ডের যে সুপারিশ ছিলো- সিভিয়ার এসিটেন্স। সেই অসুখ তো উনার আছেই।
সেই রোগের চিকিৎসার জন্য তার আধুনিক চিকিৎসার প্রয়োজন, আধুনিক কেন্দ্রের প্রয়োজন। অর্থাৎ সি নিডস মর্ডার টিট্রমেন্ট ইন এ ডেভেলপ সেন্টার। এই সুপারিশটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল বোর্ড করেছিলেন। সেটা যদি আমাদের করতে হয়-পরিবারের সদস্যরা অনেক দিন আগে সরকারের কাছে দরখাস্ত করেছেন- উনাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়া উচিত সুচিকিৎসার জন্য। সেই তো ওই সময়ে করোনা পরিস্থিতি সার্বিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।ৎ
সংবাদ সম্মেলন ডা. মোহাম্মদ আল মামুনও উপস্থিত ছিলেন।
গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনা শনাক্ত হয়। এরপর থেকে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজায়’ তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকীরে নেতৃত্বে চিকিৎসা শুরু হয়। করোনা আক্রান্তের ১৪ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পরে খালেদা জিয়ার করোনা টেস্ট করা হয়েছিলো কিন্তু ফলাফল পজেটিভ আসে।
৭৬ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুই মামলায় দণ্ডিত। দণ্ড নিয়ে তিন বছর আগে তাকে কারাগারে যেতে হয়।
দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু পর পরিবারের আবেদনে সরকার গত বছরের ২৫ মার্চ মানবিক বিবেচনায় শর্তসাপেক্ষে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়। তখন থেকে তিনি গুলশানে নিজের ভাড়া বাসা ফিরোজায় থেকে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার সঙ্গে বাইরের কারও যোগাযোগ সীমিত।