খবর৭১ঃ মিয়ানমার সরকার এক অভাবনীয় স্বেচ্ছাচারী সরকারে পরিণত হয়েছে। তারা আগে ঘটে যাওয়া রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞের বিচার উপেক্ষা করেই ক্ষান্ত থাকছে না, বরং নতুন করে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ করা যেতে পারে, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বর্বর অভিযানে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে এবং প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমারে এখন ৬ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে। মিয়ানমার সরকার একদিকে তাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, অন্যদিকে বলছে তারা রোহিঙ্গা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নির্মূলে পদক্ষেপ নিয়েছে।
২০১৭ সালের রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞের পর বিশ্বব্যাপী এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল। জাতিসংঘ থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাষ্ট্র বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার ব্যাপারে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানালেও দেশটির সরকার তাতে বিন্দুমাত্র গা করেনি। শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গা ইস্যুটি আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) পর্যন্ত গড়ায়। কিন্তু আইসিজের গৃহীত অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা উপেক্ষা করে চলেছে মিয়ানমার সরকার।
এ বছরের জানুয়ারিতে হেগের আন্তর্জাতিক আদালত মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির যুক্তি প্রত্যাখ্যান করে দেশটির ওপর জরুরি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা আরোপ করে। আইসিজে মিয়ানমারকে গণহত্যা বন্ধে আদেশ দেয়া ছাড়াও প্রতি ছয় মাস পরপর জাতিসংঘে প্রতিবেদন দেয়ারও আদেশ দিয়েছে।
কিন্তু মিয়ানমার সরকার তার একরোখামি বজায় রেখেই চলেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও কর্মীরা মিয়ানমারকে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা যথাযথভাবে পালনে বাধ্য করতে আইসিজের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, অস্বচ্ছতা হল রোহিঙ্গাদের প্রতি আরেক ধরনের অবিচার।
উল্লেখ্য, গত নভেম্বরের নির্বাচনে রোহিঙ্গাদের ভোটাধিকার বঞ্চিত রাখা হয়েছিল। রোহিঙ্গা অধিকার রক্ষায় সক্রিয় অন্যতম সংস্থা ‘বার্মা রোহিঙ্গা অর্গানাইজেশনে’র সভাপতি টুন থিন দ্বিতীয় দফা প্রতিবেদন প্রকাশের প্রাক্কালে অভিযোগ করেছেন, আইসিজে গৃহীত অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাগুলো কীভাবে উপেক্ষা করা যায়, সে বিষয়ে মিয়ানমার সরকার ও সরকারি বাহিনী অপতৎপরতা চালাচ্ছে, তবে তারা প্রতিকূল কোনোকিছুর মুখোমুখি হচ্ছে না।
ওদিকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার আইনজীবী আর্সলান সুলেমান বলেছেন, মিয়ানমার সময়মতো প্রতিবেদন জমা দিলেও রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় কোনো পদক্ষেপই নেয়নি।
সবদিক বিবেচনা করে এটা স্পষ্ট করেই বলা যায়, মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা প্রশ্নে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেনি। এমনকি গত নভেম্বরের নির্বাচনে অং সান সু চির দল পুনর্নির্বাচিত হলেও অবস্থার ইতরবিশেষ কিছু হয়নি। এ অবস্থায় মিয়ানমারের ওপর নতুন করে চাপ প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দল বিজয়ী হওয়ায় নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রোহিঙ্গা ইস্যুতে কী অবস্থান গ্রহণ করবেন, তা এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বটে। একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে, মিয়ানমার রোহিঙ্গা ইস্যুতে সদিচ্ছা প্রদর্শন করবে না। রোহিঙ্গা ইস্যুতে তারা যা করেছে, তা পূর্বপরিকল্পিত ও সুনির্দিষ্ট।
এমতাবস্থায় বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফিরে যেতে পারবে কিনা, তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। দ্বিতীয়ত, রাখাইন রাজ্যে বর্তমানে বসবাসরত অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত। এ দুই কারণে বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত হবে মিয়ানমারের ওপর কার্যকর চাপ প্রয়োগ করা। একটি দেশ এভাবে বিশ্ব জনমত, এমনকি আন্তর্জাতিক আদালতের রায়কে উপেক্ষা করে চলবে, তা হতে পারে না।