অন্তরঙ্গ দৃশ্য ধারণ করেই ফোন চুরি করতো রাতুল

0
452
অন্তরঙ্গ দৃশ্য ধারণ করেই ফোন চুরি করতো রাতুল

খবর৭১ঃ প্রেমের ফাঁদে ফেলে তরুণীদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতো ইয়াসির রাতুল। আর সেই ‘অন্তরঙ্গ মুহূর্তের’ দৃশ্যটি ধারণ করতো ভুক্তভোগীদেরই মোবাইল ফোনে। এরপর সুযোগ বুঝে ফোনটি চুরি করতো সে।

শুধু চুরি করেই ক্ষান্ত হয়নি, ভুক্তভোগীদের ফেসবুক আইডি নিজের দখলে নিয়ে ভিডিও প্রকাশের ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নিতো টাকা। এমন অভিযোগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সোমবার রাজধানীর বাংলামোটর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে।

আর নিজের দোষ স্বীকার করে মঙ্গলবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয় রাতুল। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিআইডির সাইবার ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসপি) রেজাউল মাসুদ।

তিনি বলেন, নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়া রাতুল একজন বহুমুখী প্রতারক। এক সময় সে রাজধানীর মিরপুরে এক রাজনৈতিক নেতার বাড়িতে টি বয় হিসেবে কাজ করতো। পরে মোহাম্মদপুর রিংরোডে এক শোরুমে সেলসম্যানের চাকরি নেয়। চাকরি ছেড়ে দিয়ে যৌন ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মত অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।

সিআইডির পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, রাতুল প্রথমে প্রেমের ফাঁদে ফেলে সুন্দরী তরুণীদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতো। এরপর সেই দৃশ্য ভিকটিমের মোবাইলে ধারণ করে মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যেত। আর সেই মোবাইল বিক্রির আগে ভিকটিমের ভিডিও কন্টেন্ট এবং ফেসবুক আইডি নিজের দখল নিয়ে রাখত। সেটা দেখিয়ে দিনের পর দিন তরুণীদের ব্ল্যাকমেইল করত।

বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ বলেন, রাতুলের প্রতারণার শিকার এমন একজন ভুক্তভোগী তরুণী সিআইডি সাইবার ক্রাইমের কাছে অভিযোগ করেন।

ওই ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, রাতুলের সঙ্গে তার পরিচয় ৬ মাসের। পরিচয় হওয়ার পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় তার (রাতুলের) সঙ্গে দেখা করে ওই তরুণী। এরমধ্যে একদিন ভুক্তভোগীকে চাঁদপুর যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। ভুক্তভোগী তরুণী তার দুই বন্ধুকে নিয়ে রাতুলের সঙ্গে লঞ্চে চাঁদপুর যায়। আর লঞ্চে থাকাকালীন বন্ধুদের অনুপস্থিতিতে রাতুল ওই তরুণীর মোবাইলে ফোনে কৌশলে তার নগ্ন ভিডিও ধারণ করে। পরবর্তীতে লঞ্চ থেকে ঢাকায় নামার পর রাতুলের মোবাইলে ব্যালেন্স না থাকায় ওই তরুণীর (ভুক্তভোগী) মোবাইল নিয়ে ফোন করার কথা বলে সদরঘাট থেকে পালিয়ে যায়।

ভুক্তভোগী ওই তরুণী আরো জানান, পরে তারা দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে রাতুলের জন্য। কিন্তু রাতুল আর আসেনি। পরবর্তীতে রাতুল তার (তরুণীর) বিকাশে থাকা ১০ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। এছাড়া নগ্ন ভিডিও দিয়ে হুমকি দেয়। তাকে ২৫ হাজার টাকা না দিলে সে তার নগ্ন ভিডিও ফেসবুকে ছেড়ে দিবে। তখন তার ফেসবুক আইডিও রাতুলের নিয়ন্ত্রণে। এমনকি রাতুল টাকার জন্য তরুণীর মা-বাবাকেও চাপ দেয়।

এ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীও রাতুলের এই প্রতারণার শিকার হন। ওই ভুক্তভোগী জানান, ৬ মাস আগে এক ইউটিউবার মেয়ের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ‘তানজুমা আফরোজ’ নামের একটি আইডিতে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান। ওই আইডির ব্যক্তিটি মেয়ে ভেবে তার সঙ্গে ম্যাসেঞ্জারে চ্যাটিং এবং ফোনে কথা বলতেন। পরবর্তীতে ‘তানজুমা আফরোজ’ আইডির ব্যক্তিটি হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে রাতুলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। পরে তারা একে অপরের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলতেন। একপর্যায়ে প্রেমে রূপ লাভ করে তাদের এ সম্পর্ক।

এরপর রাতুল ভুক্তভোগীকে ভিডিও কলে এসে কথা বলার অনুরোধ জানায়। ভিডিও কলে রাতুল তাকে নগ্ন হতে বলে। পরে ওই দৃশ্যটি সে স্ক্রিন রেকর্ড করে রাখে। পরে তার সঙ্গে দেখা করতে এসে কৌশলে মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যায়। ফেসবুক আইডি, জিমেইল অ্যাকাউন্ট দখলে নেয় রাতুল।

এরপর সেই মোবাইল বিক্রি করে দেয় সে। কিন্তু তিনি জানতেন না ওই আইডিটি রাতুলের ছিল এবং রাতুল বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে মেয়ে কণ্ঠে কথা বলতো।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ বলেন, রাতুলের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে শাহজাহানপুর মডেল থানার মামলা হয়েছে। গ্রেফতারের সময় তার কাছে থাকা প্রতারণা এবং ব্ল্যাকমেইলে ব্যবহৃত দুটি মোবাইল সেট, ১০টি সিম উদ্ধার হয়। যার ভিতর চারটি ফেক ফেসবুক আইডি এবং নয়টি জিমেইল একাউন্ট পাওয়া যায়। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর থানার একতাপুর।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here