খবর৭১ঃ
মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর প্রতিনিধিঃ এবারে কোরবানির চামড়ার অস্বাভাবিক দরপতনে চরম বিপাকে পড়েছেন নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলার এতিমখানা ও কওমি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। তারা এখন প্রতিষ্ঠান কিভাবে পরিচালনা করবেন তা নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
সুত্র জানায়, প্রতি বছরই ঈদুল আজহায় মানুষজন তাদের পশু কোরবানির পর চামড়াগুলো বিভিন্ন স্থানীয় মসজিদ, এতিমখানা ও লিল্লাহ্ বোর্ডিংগুলোতে দেয়। আর এ সব সংগৃহিত চামড়া বিক্রির অর্থে এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে দ্বীনি শিক্ষায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনের খাবার যোগান হয়ে থাকে। কিন্তু গত বছরের মতো এবারেও চামড়ার দাম না থাকায় ওইসব প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনার দায়িত্বে থাকা লোকজন চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। কারণ এবারে কোরবানিতে পাওয়া চামড়া পানির দামে বিক্রি করে যে অর্থ মিলবে তাতে ওইসব প্রতিষ্ঠানে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদের এক মাসের খাবারও যোগান দেওয়া সম্ভব হবে না। এ নিয়ে গত সোমবার সকালে সৈয়দপুর শহরের আল- জামায়েতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম রুহুল ইসলাম মাদ্রাসার পরিচালক আলহাজ্ব মাওলানা মোহাম্মদ হারুন রেয়াজীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান,১৯২৬ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করা ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে প্রায় আড়াই শত শিক্ষার্থী দ্বীনি শিক্ষা গ্রহন করছে। তিনি জানান, প্রতি বছর কোরবানির ঈদে এলাকার লোকজন কোরবানি দেয়া কয়েক শত পশুর চামড়া মাদরাসায় দান করেন। আর ওই চামড়া বিক্রির অর্থে প্রতিষ্ঠানের লিল্লাহি বোর্ডিংয়ে থাকা আবাসিক প্রায় কয়েক শত শিক্ষার্থীর জন্য ছয় মাসের খাবার সংস্থান হয়।
এবারের ঈদেও মাদরাসায় লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের ফান্ডে ৪০০ পিস গরুর চামড়া ও ২৩৬ পিস ছাগলের চামড়া মিলেছে। কিন্তু চামড়া দাম না থাকায় এবারে মাদরাসার ফান্ডে প্রাপ্ত চামড়া বিক্রির অর্থে এক মাসের খাবার সরবরাহ করা কঠিন হয়ে পড়বে। তিনি বলেন কওমি মাদ্রাসাগুলোর আয়ের প্রধান উৎস হলো কোরাবনির চামড়া। অথচ এবারও চামড়ার দাম নেই। গত বছরও একই অবস্থা থাকায় চামড়ার দাম পানিতে বিক্রি করতে হয়েছে। শহরের কাজীপাড়ার মৃধাপাড়ায় অবস্থিত আল জামিয়াতুল আবারিয়া আল ইসলামিয়া মাদ্রাসার মহতামিম মাওলানা মোহাম্মদ আবুল কালাম কাসেমী জানান, ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত তাঁর মাদ্রাসার লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে কয়েক শ’ শিক্ষার্থী ইসলাম শিক্ষা গ্রহন করছেন। তারা সবাই আবাসিক শিক্ষার্থী। এবারের কোরবানির ঈদে মাদরাসা ফান্ডে যে গরুর এবং ছাগলের চামড়া মিলেছে তা বিক্রির অর্থে মাদরাসার লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীদের এক-দেড় মাসেরও খাবার চালানো যাবে। বছরের বাকি মাসগুলো শিক্ষার্থীদের কিভাবে খাবার দিবেন তা নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন তিনিসহ সংশ্লিষ্টরা।
জানতে চাইলে শহরের মিস্ত্রিপাড়ার এলাকার বিশিষ্ট চামড়া ব্যবসায়ী আলহাজ্ব মো. শওকত আলী জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ ট্যানারি মালিকদের কাছে আমার বিপুল পরিমাণ টাকা বকেয়া পড়ে রয়েছে। আশা করেছিলাম এবারে ঈদের আগেই হয়তো বকেয়া টাকা ট্যানারি মালিকরা পরিশোধ করবেন। কিন্তু তারা একটি টাকাও দেননি। তারপরও নিজের কিছু পুঁজি এবং ধারদেনা করে চামড়া কিনেছি। গত সোমবার সকালেএকই এলাকার অপর চামড়া ব্যবসায়ী মো. আজিজুল হকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেয়া যায় ক্রয়কৃত চামড়াগুলো পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াকরণ করছেন লোকজন। আবার কিছু চামড়া প্রক্রিয়াকরণ করে স্তুপ করে রাখা হয়েছে । এ সময় কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি বলেন, অন্যান্য বছরগুলো বেশি পরিমাণে চামড়া কিনলেও এবারে পারিনি। বর্তমানে চামড়ার বাজারে ধস নামায় সাহস হয়নি চামড়া কেনার। কারণ চামড়া কিনে ট্যানারি মালিকদের বাকিতে দিয়ে পরে তার টাকা পয়সা পাওয়া যায় না। তাই এবারে মাত্র ৮০০ পিস গরুর চামড়া এবং ৫০০ পিস ছাগলের চামড়া কিনেছি। তিনি জানান, এবারে গরুর চামড়া সর্বনিম্ন ৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬০০ টাকায় এবং ছাগলের চামড়া ১০ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত কিনেছি।
সৈয়দপুরসহ অত্রাঞ্চলের এক সময়ের বিশিষ্ট চামড়া ব্যবসায়ী শহরের হাতিখানা এলাকার বাসিন্দা অধ্যাপক মো. আব্দুল আউয়াল। তিনি বলেন, ট্যানারি মালিকের নিকট তাঁর আট লাখ টাকার বেশি মূলধন আটকে আছে। তাই এবারে কোরবানির ঈদে মুলধনের অভাবে চামড়া কিনতে পারেননি তিনি। শহরের আতিয়ার কলোনীর চামড়া ব্যবসায়ী মো. সরফরাজ মুন্না বলেন, ঈদুল আজহা এলেই আর বসে থাকতে পারিনা। চামড়ার ব্যবসায় ধস নেমেছে জেনেও এবারে ঈদে সামান্য কিছু চামড়া কিনেছি। জানি না ভাগ্যে কি আছে। পুঁজি ফিরে পাব কিনা তারও জানি না।