সমালোচনার মুখে আপাতত স্থগিত এফসিপিএস পরীক্ষা

0
443
সমালোচনার মুখে আপাতত স্থগিত এফসিপিএস পরীক্ষা

খবর৭১ঃ নভেল করোনাভাইরাস তথা কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসায় ব্যস্ত সময়ের মধ্যে এফসিপিএসের নিবন্ধন শুরু করে চিকিৎসকদের সমালোচনার মুখে উচ্চতর পরীক্ষাটির আয়োজন থেকে আপাতত সরে এসেছে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স অ্যান্ড সার্জনসের (বিসিপিএস)।

সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে রবিবার দুপুরে বিসিপিএস কাউন্সিলরদের বৈঠকে এই পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দেশের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো এফসিপিএস পরীক্ষা স্থগিতের ঘটনা ঘটল।

বিসিপিএসের অনারারি সচিব অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম পরীক্ষা স্থগিত করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে এফসিপিএস জুলাই ২০২০ সেশনের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিসিপিএস। তবে নানা সমস্যার কারণ দেখিয়ে এই পরীক্ষা স্থগিত রাখার দাবি তোলেন চিকিৎসকরা।

চিকিৎসকদের ভাষ্য, করোনার চিকিৎসায় তারা কমবেশি সবাই ব্যস্ত। করোনার সংক্রমণ বেড়ে চলায় দায়িত্বও বেড়ে চলছে। তাছাড়া পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হয় ঢাকায়। অধিকাংশ পরীক্ষার্থীই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত। তাই পরিস্থিতি ভালো হলেই এই পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু করা উচিত।

এমবিবিএস পাশ করার পরে চিকিৎসকরা তাদের চাকরিকালীন অবস্থায়ই নিজ নিজ পছন্দমতো বিষয়ের ওপর বিভিন্ন মেয়াদের প্রশিক্ষণ শেষে এফসিপিএস পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন। চিকিৎসাবিদ্যায় স্নাতকোত্তর এই শিক্ষার দায়িত্ব পালন করে আসছে বিসিপিএস। দেশি বিদেশি পরীক্ষকের সমন্বয়ে বিভিন্ন স্তরের পরীক্ষা শেষে যাচাইয়ের পর পরীক্ষায় পাস করলে চিকিৎসকরা এফসিপিএস ডিগ্রি লাভ করেন। শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে পুরো প্রক্রিয়া শেষ হওয়ায় এফসিপিএসের ফলাফল নিয়ে কোনা বিতর্ক নেই।

বিসিপিএসের পক্ষ থেকে দেয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিসিপিএস কাউন্সিলের মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে পরীক্ষা এখন হবে না। ফলে জুলাই সেশনের সকল পরীক্ষা (এফসিপিএস ১ম পর্ব, এফসিপিএস ২য় পর্ব (শেষ পর্ব), প্রিলিমিনারি এফসিপিএস ২য় পর্ব, এফসিপিএস (সাব-স্পেশালিটি) এবং এমসিপিএস) স্থগিত করা হয়।

পরীক্ষা সংক্রান্ত যেসব নিয়ম আগে ছিল, এগুলো বহাল থাকবে উল্লেখ করে অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, এ সেশনের পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করা পরীক্ষার্থীরা একই রেজিস্ট্রেশন দিয়ে পরবর্তী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। তাছাড়াও এই সেশনের পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করা পরীক্ষার্থীরা, তাঁদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে চাইলে কলেজের নিয়মানুযায়ী তা করতে পারবেন। এফসিপিএস (সাব-স্পেশালিটি) পরীক্ষার্থীদের মধ্যে যারা ইতিমধ্যে থিসিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন, পরবর্তী পরীক্ষার জন্য তার বৈধতা থাকবে।

এ সেশনের পরীক্ষা কবে নেওয়ার চিন্তা করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জানুয়ারির আগে পরীক্ষা হচ্ছে না। অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হলেও মিড টার্ম কোনো পরীক্ষা হবে না। এখন আমরা যদি বলি, জানুয়ারিতে পরীক্ষা নেবো; দেখা গেলো, ওই সময়ে পরিস্থিতি এর চেয়েও খারাপ হয়ে গেলো। তখন যদি পরীক্ষা নেওয়া না যায়, তাহলে তো আবার সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে। আইনগতভাবে আমরা পরীক্ষার বাতিল করতে পারবো না। কারণ আমরা পরীক্ষা ফি নিয়েছি। তাই বাতিল করিনি, স্থগিত করেছি। তবে পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছি।’

এর আগে সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত বিসিপিএসের ইসি কমিটির বৈঠকে পরীক্ষা কমিটির সুপারিশ পর্যালোচনা করা হয়। ইসি কমিটির ৭ সদস্যের ঘণ্টাব্যাপী এ পর্যালোচনা শেষে হয় কাউন্সিলরদের বৈঠক। ওই বৈঠকে পরীক্ষা স্থগিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০ সদস্যের কাউন্সিলর বডির মধ্যে আজকে ১৭ জন উপস্থিত ছিলেন। অনুপস্থিত তিনজনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের ইউরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এসএএম গোলাম কিবরিয়া মারা গেছেন।

এদিকে করোনা পরিস্থিতিতে এফসিপিএস পরীক্ষা স্থগিত করায় বিসিপিএসকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এ সিদ্ধান্তকে সময়োপযোগী উল্লেখ করে তারা বলেন, এমন সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিলেন তারা। চিকিৎসকদের দাবি ছিল, যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে তাদের করোনা চিকিৎসা দিতে হচ্ছে সে অবস্থায় এফসিপিএসের মত পরীক্ষায় অংশ নেয়া বা প্রস্তুতি নেয়া অসম্ভব।

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আশ্রাফুল হক সিয়াম পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়ে ঢাকাটাইমসকে বলেন, করোনার ভয়াবহতার মধ্যে চিকিৎসা বিদ্যায় উচ্চ শিক্ষা অর্জনে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে বিসিপিএস যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটা প্রশংসার দাবিদার। কারণ যাদের জন্য পরীক্ষা তারা সবাই এখন করোনাযুদ্ধের সামনের সারিতে কাজ করছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরীক্ষা নেয়া হলে চিকিৎসকরা উপকৃত হবেন।

চিকিৎসকদের সংগঠন বিডিএফের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. কাওসার আলম ঢাকাটাইমসকে বলেন, করোন পরিস্থিতিতে বিসিপিএস পরীক্ষা স্থগিত করায় সকল ফ্রন্টলাইনার চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে সাধুবাদ জানাই। যেখানে দেশকে বাঁচাতে, দেশের মানুষকে বাঁচাতে চিকিৎসা দেওয়াটাই মূখ্য ব্যাপার, সেখানে পরীক্ষা বা নিজেদের ক্যারিয়ারটা খুবই গৌণ। যুগোপযোগী সিদ্ধান্তের জন্য বিসিপিএসকে ধন্যবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here