স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না সৈয়দপুরে বেহাল লকডাউন

0
1605
স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না সৈয়দপুরে বেহাল লকডাউন

মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর প্রতিনিধি :
সৈয়দপুরসহ নীলফামারী জেলায় বেড়েই চলছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে নীলফামারী জেল লকডাউন করা হয়েছে। গোটা জেলায় লকডাউন চললেও সৈয়দপুরে কার্যতঃ লকডাউন ভেঙে পড়েছে। লকডাউন মানছেন না লোকজন। নির্দেশনা অমান্য করে রাস্তায় ও বাজারে লোকজনের গাদাগাদি করে চলাফেরায় করোনা সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। প্রশাসন ও থানা পুলিশের পক্ষ থেকে জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ার জন্য বার বার অনুরোধ করা হলেও তা মানা হচ্ছে না। অনেকেই জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বাইরে বের হয়ে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াচ্ছেন। শহরের পাড়া মহল্লার অলিগলিতে অহেতুক জটলা করে আড্ডা দিচ্ছেন। আড্ডায় মানা হচ্ছে শারীরিক দূরত্ব। গোটা শহর ও গ্রামাঞ্চলে জনসাধারণের অবাধ চলাচল ও সরকারি নির্দেশনা অগ্রাহ্যের কারণে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির শংকায় জনমনে ভীতির সঞ্চার হচ্ছে।

সরেজমিনে শহরের মূল সড়ক, ব্যস্ততম সড়ক মোড় ঘুরে দেখা যায়, শহরের সর্বত্র আগের তুলনায় যানবাহন ও মানুষের চলাচল অনেক বেড়েছে। বাজারে ওষুধ ও মুদি দোকানের বাইরেও খোলা হচ্ছে অন্যান্য দোকানপাট। রাস্তায় ও বাজারে পুলিশ ও প্রশাসনের তৎপরতায় কড়াকড়ি না থাকায় অগণিত মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছে। খোলা হচ্ছে বন্ধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, চলছে অসংখ্য অটো, রিক্সা, ভ্যান, সাইকেল, মোটরসাইকেল ও পিকআপ। মূল সড়কের মোড়ে মোড়ে ছোটখাটো যানজটও দেখা যাচ্ছে। অথচ কয়েকদিন আগেও দোকানপাট বন্ধ ও রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকলেও এখন আর সে অবস্থা নেই। রমজান উপলক্ষে ইফতারী দোকানের সঙ্গে রাস্তায় বিভিন্ন ভাসমান দোকান বসতে শুরু করেছে। যদিও সবার মধ্যে কাজ করছে অজানা আতংক।

মুদি দোকানগুলোতে কেনাকাটা করতে মানুষজন হুমড়ি খেয়ে পড়ছে প্রতিদিন। সেখানে মানা হচ্ছে না শারীরিক দূরত্বও। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারি নির্দেশনা কার্যকর করতে গত এক মাসে ১১৮ জন ব্যক্তি ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান মালিককে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেয়া হয়েছে । লকডাউন অমান্য করে দোকান খোলা রাখা, অযথা ঘরের বাইরে আসাসহ অন্যান্য বিধি না মানায় অভিযুক্তদের সাজা দেয়া হয়। তারপরও লোকজনকে ঘরে রাখা যাচ্ছে না, দোকানীরাও দোকান বন্ধে সচেতন হচ্ছেন না। গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর লোকজনের চলাচল সীমিত ছিল। কিন্তু ছুটি বা লকডাউন যত দীর্ঘায়িত হচ্ছে ততই ঢিলেঢালা হয়ে পড়ছে লকডাউনের কঠোরতা। রাস্তা ও মহল্লায় লোকসমাগম ও চলাফেরা দেখে বোঝার উপায় নেই। জেলায় লকডাউন চলছে। শহরের ব্যস্ততম এলাকাসহ পাড়া মহল্লার সব জায়গাতেই দেখা মিলছে একই চিত্র।

এক্ষেত্রে প্রশাসন ও পুলিশ তৎপর থাকলেও জনবহুল সৈয়দপুর উপজেলায় লকডাউন কার্যকর করা দূরুহ হয়ে পড়ছে। তবে প্রশাসন ও পুলিশ সদস্যরা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, লোকজনের অযথা চলাচল নিরুৎসাহিত করতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে। লক্ষ্যণীয় যে, পুলিশ ও প্রশাসনের টহল ও তৎপরতা শুরু থেকে যেমন ছিল, এখন তা দেখা যাচ্ছে না। রমজান শুরুর আগে থেকে পুলিশ ও প্রশাসনের তৎপরতায় শিথীলতার ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আর এই শিথীলতার সুযোগে ভীড় বাড়ছে মানুষ, দোকানী ও যানবাহনের।

করোনা সংক্রমণ ও জনসমাগম এড়াতে মাছ, মাংস ও কাঁচা বাজার খোলা মাঠে বসানো হলেও দেখা যায়, লোকজনের ঘোঁষাঘেষি ভাবে চলাফেরা। শারীরিক দূরত্ব না মেনেই বাজার করছে মানুষ। দোকানীরাও ভ্রুক্ষেপ করছেন না স্বাস্থ্যবিধির প্রতি। শুধু কাঁচা বাজার না শহরের মুদি, ফলমূল, ওষুধ ও ইফতারের দোকানেও দেখা মেলে একই দৃশ্য।

কথা হয় নতুন বাবুপাড়ার বাসিন্দা মো. আলীর সঙ্গে। তিনি জানান, মাঝে মধ্যে দরকারি বাজার করতে বের হতে হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরে থাকছি দিনের পর দিন। কিন্তু বাইরে আসলে ওই নিয়ম আর থাকে না। রাস্তায় ও বাজারের পরিবেশ দেখে মনে হয় সবকিছুই যেন স্বাভাবিক। প্রথম দিকে লোকজনের চলাচল খুবই সীমিত ছিল। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে ততই আলগা হচ্ছে লকডাউনের নিয়ম কানুন। পাড়া-মহল্লায় সন্ধ্যার পর যুবক ও তরুণরা দল বেধে ঘুরে বেড়ায়। বয়স্করাও আর ঘরবন্দি থাকতে চাইছেন না। তারাও রাস্তায় দাঁড়িয়ে আড্ডা, খোশগল্প করেন। দেখে মনে হচ্ছে প্রশাসনের নির্দেশনা কেউ মানতে চাইছেন না।

এদিকে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্রের দাবি, শারীরিক দূরত্ব ও প্রয়োজন ছাড়া কেউ যেন ঘরের বাইরে না আসেন এটি নিশ্চিত করতে তৎপর রয়েছে প্রশাসন। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি নির্দেশনা মানতে মানুষকে সচেতন হতে বলা হচ্ছে। এ কাজে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোও কাজ করছে। অনেক ক্ষেত্রে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, সাজাও দেয়া হচ্ছে নির্দেশনা অমান্যকারীদের। তবে লকডাউন মেনে চলার বিষয়টি প্রশাসনের একার দায় নয়, এটি জনসাধারণকেও বুঝতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here