মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর প্রতিনিধি:
মো. এরশাদ হোসেন পাপ্পু। নীলফামারী জেলার প্রথম শ্রেণীর সৈয়দপুর পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তিনি। তাঁর কানে যেন সারাক্ষণই ভেসে আসছে স্বনামধন্য কন্ঠশিল্পী ভূপেন হাজারিকার ওই বিখ্যাত গানের কথা ”মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে, একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না ও বন্ধু ”। তাই তো তিনি দিন রাত ছুঁটে চলেছেন তাঁর ১১ নম্বর ওয়ার্ডের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। মানুষের দ্বারে দ্বারে হাজির হয়ে অবগত হচ্ছেন কার কি অভাব – অভিযোগ কিংবা সমস্যা ও প্রয়োজন। গত প্রায় এক মাসের বেশি সময় ধরে তিনি এভাবে ছুঁটে বেড়াচ্ছেন তাঁর ওয়ার্ডের পাড়া মহল্লাসহ অলিগলিতে। নাওয়া খাওয়া ছেড়ে তাঁর বিরামহীন তৎপরতার জন্য অনেকেই তাকে করোনা ভাইরাস যোদ্ধা হিসেবেও আখ্যায়িত করেছেন ইতোমধ্যে।
সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তিনি শুধু একজন জনপ্রতিনিধি নয়, এরশাদ হোসেন পাপ্পু নিজেকে আত্মনিয়োগ করেছেন সমাজ সচেতন একজন মানুষ হিসেবে। সেই কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাতে পর্যন্ত জনগণের পাশে রয়েছেন করোনা প্রতিরোধ মোকাবেলা বিষয়ক নানা কাজে।
সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে বিলি করেছেন স্বাস্থ্য বিধি বিষয়ক লিফলেট, স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে জীবাণুনাশক ছিটিয়ে এলাকা জীবাণুমুক্ত করছেন। তিনি কখনোও রিকশা ভ্যানে, কখনোবা অটোরিকশায় বসে নিজের হাতে হ্যান্ড মাইক ধরে মানুষকে সচেতন করতে স্বাস্থ্য বিধি বিষয়ক প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিলিবন্টন করছেন মাস্কসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা উপকরণ। খবর পাওয়া মাত্রই সৈয়দপুরের বাইরে থেকে আসা লোকজনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখাসহ তাদের বাড়িতে কোয়ারেন্টিন লেখা সাইন বোর্ড ঝুলাচ্ছেন তিনি । সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিতকরণ, অহেতুক বাড়ি থেকে বের হওয়া মানুষজনকে বাড়ি ফেরাতেও কাজ করছেন তিনি। নিজের আর্থিক সামর্থ্য অনুয়ায়ী প্রায় প্রতিদিন খাদ্যসামগ্রী তথা চাল,ডাল,আলু তেল, কাঁচা শাক-সবজি সংগ্রহ করে সে সব প্যাকেটজাত করে পৌঁছে দিচ্ছেন কর্মহীন অসহায় মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে। আর তাকে তাঁর এসব মানুষের সেবামূলক কাজে সার্বিক সহযোগিতা দিতে গড়ে তুলেছেন ১১ নম্বর ওয়ার্ড করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সেই সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন সৈয়দপুর উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গেও। এলাকার বিত্তশালী ও হৃদয়বান ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের কাছ থেকে নানা রকম সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে তা মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দিচ্ছেন।
এ নিয়ে আজ বুধবার কথা হয় পৌর কাউন্সিলর মো. এরশাদ হোসেন পাপ্পুর সাথে।তিনি বলেন, মানুষ হচ্ছেন আশরাফুল মাখলুকাত অর্থাৎ সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষের এই দুঃসময়ে আমার বড় কাজ তাদের পাশে থেকে সচেতনতা সৃষ্টিসহ তাদেরকে ঘরে রাখা নিশ্চিত করা। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে মানুষকে উদ্বদ্ধুকরণ। এছাড়াও উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন, পৌর পরিষদ এবং স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে সার্বক্ষণিক সমন্বয় রক্ষা করে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদেক্ষপগুলো আমি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি মাত্র। কারো বাহাবা নেয়ার জন্য নয় জানিয়ে পাপ্পু বলেন সমাজসেবায় নিয়োজিত থেকে জনগনের দেয়া দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তিনি।
তিনি বলেন, তাঁর ওয়ার্ডে অনেক হতদরিদ্র, দিনমজুর, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবার বসবাস করেন। বতর্মান তারা মারাত্মক সমস্যার সম্মূখীন। তাদের পাশে দাঁড়ানো আমার নৈতিক দায়িত্ব-কর্তব্য। সরকারি সাহায্য সহযোগিতা অপ্রতুল। তাই আমদের সমাজের সম্পদশালী ও হৃদয়বান মানুষের উচিত সরকারের পাশাপাশি সমাজের অসহায়, গরীব ও দুস্থ মানুষের পাশে সাহায্যের হাত বাড়ানো।
উল্লেখ্য, মো. এরশাদ হোসেন পাপ্পু সৈয়দপুর পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতি এবং নীলফামারী জেলা মাইক্রোবাস, পিকআপ ও কার মালিক সমিতির সভাপতি পদেও অধিষ্ঠিত রয়েছেন তিনি। তিনি একজন সফল স্কাউটার হিসেবেও পরিচিত। ছোটবেলা থেকেই মানুষের পাশে দাড়ানো তার অভ্যাস। ছাত্রজীবন থেকে তাঁর এ অভ্যাস নিয়মিত রুটিনে পরিণত হয়েছে। বাবা- মার দোয়া নিয়ে তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন সামাজিক কর্মকান্ড। জনপ্রিয় এ কাউন্সিলর ওয়ার্ডবাসীসহ গোটা সৈয়দপুরের জনগনের ভালবাসা অর্জন করেছেন।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে তার প্রশংসনীয় তৎপরতার কথা এখন সবার মুখে মুখে।