হৃদরোগ প্রতিরোধের ছয়টি সুঅভ্যাস

0
757
হৃদরোগ প্রতিরোধের ছয়টি সুঅভ্যাস

খবর৭১ঃ বিশ্বায়নের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তন ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ব্যস্ততা বাড়লেও অধিকাংশ মানুষের নিত্যনৈমিত্তিক কায়িক পরিশ্রমের পরিমাণ কমেছে, পরিবর্তন হয়েছে দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসের। অন্যদিকে প্রতিনিয়ত বিন্দু বিন্দু অস্বাস্থ্যকর জীবনাচারণ ধীরে ধীরে আমাদের দেহঘড়িতে হৃদরোগ, উচ্চ-রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ অনান্য অসংক্রামক রোগের ঘাঁটি বাঁধতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। এসব অসংক্রামক রোগের মধ্যে হৃদরোগ অন্যতম, যা বিশ্বের উল্লেখযোগ্য মরণব্যাধি হিসাবে চিহ্নিত।

হৃদরোগ যেমন দীর্ঘদিনের অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের ফল, তেমনভাবে তা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে দরকার সুন্দর ও সুশৃঙ্খল জীবনযাপনের, প্রয়োজন দৈনন্দিন জীবনে কিছু ভালো অভ্যাস রপ্ত করার। জেনে নিন সেই অভ্যাসগুলো-
১। ধূমপান পরিহার করুন: ধূমপান শুধু ধূমপায়ীর নয়, ধূমপানের সময় আশেপাশের লোকজনের বিশেষ করে বাচ্চাদের জন্যও শারীরিক ক্ষতি বয়ে আনে।

ধূমপান এবং তামাকজাত দ্রব্য যেমন জর্দা, গুল, সাদাপাতা মানবদেহে উচ্চরক্তচাপসহ নানা ধরনের ধমনী ও শিরার রোগ তৈরির মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁঁকি বাড়ায়। সুতরাং ধূমপান ত্যাগ করুন, পরিবারে তামাকমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করুন।
২। নিয়মিত ব্যায়াম করুন: হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখার জন্য ব্যায়ামের কোন বিকল্প নেই। ব্যায়াম করা মানেই যে জিমে গিয়ে ঘাম ঝরাতেই হবে এমন নয়, ঘরেই ব্যায়াম করা যায়। সকাল-সন্ধ্যা হাঁটাচলা, সম্ভব হলে দৌড়ানো, ফ্রি-হ্যান্ড বা হালকা ব্যায়াম, লিফটে না চড়ে সিঁড়ি ব্যবহার, অল্প দূরত্ব রিকশা বা যানবাহন ব্যবহার না করে হেঁটে চলা, সম্ভব হলে সাঁতার কাটা ইত্যাদি সহজেই করা সম্ভব। এভাবে প্রতিদিন সম্ভব না হলেও সপ্তাহে অন্তত ৩/৪ দিন গড়ে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করলে উচ্চ-রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও কোলেস্টরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত

হয়ে হৃদরোগের ঝুঁঁকি কমে।

৩। স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন: হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করতে হবে। রক্তে উচ্চ চর্বি (সম্পৃক্ত ফ্যাট), রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল হলে রক্তনালির দেয়াল মোটা ও শক্ত হয়ে যায়

এর ফলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে এবং হৃদরোগ দেখা দিতে পারে। অধিক শর্করা যুক্ত খাবার এবং অধিক চর্বি জাতীয় খাবার কম খেতে হবে। বেশি আঁশযুক্ত খাবার, প্রচুর শাকসবজি ও টাটকা ফলমূল বেশি করে খান। তাজা ফলে প্রচুর আঁশ এবং ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ, এতে ক্যালোরি কম থাকে ও এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান বেশি থাকে-যা সতেজ ও সব হৃদযন্ত্রের জন্য সহায়ক। মিষ্টান্ন জাতীয় খাবার, ফাস্টফুড, ভাজাপোড়া এড়িয়ে চলায় ভালো। যে কোনো মাছ এমনকি সামুদ্রিক মাছ খাওয়া ভালো। মাছের তেলে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে, যা হার্টের সুস্থতায় সহায়ক।
৪। শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন: খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়মিত ব্যায়াম করার মাধ্যমে ভারসাম্যপূর্ণ ও সঠিক ওজন বজায় রাখতে সচেষ্ট হতে হবে। অধিক ওজন সম্পন্ন লোকদের উচ্চ-রক্তচাপসহ ধমনী, শিরার নানা রকম রোগ ও হৃদরোগ দেখা দিতে পারে। ওজনের পাশাপাশি অধিক কোমরের পরিমাপ (পেটে জমা অতিরিক্ত চর্বি) হৃদরোগের জন্য দায়ী। কোমরের আদর্শ পরিমাপ পুরুষের ক্ষেত্রে ৪০ ইঞ্চি এবং মহিলাদের ৩৫ ইঞ্চির নিচে হওয়া উচিত- এর বেশি থাকলে পরিশ্রম করে পেটের অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে হবে।

৫। উচ্চ-রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করুন: উচ্চ-রক্তচাপে ভোগা রোগীদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের শরীরের ছোট-বড় শিরার ভিতরের চর্বি জমার (অ্যাথারোসক্লেরোসিস) আশঙ্কা বেশি থাকে এবং বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব রোগীরাও উচ্চ-রক্তচাপে আক্রান্ত হন।

৬। মনের প্রফুল্লতা বজায় রাখুন: শুধু দেহের সুস্থতা বজায় রাখলেই হবে না, দেহমাঝে যে ‘মন’ তারও যত্ন-আত্তির প্রয়োজন আছে বৈকি! অতিরিক্ত রাগ, উত্তেজনা, ভীতি এবং মানসিক চাপের কারণেও উচ্চ-রক্তচাপ ও হৃদরোগ দেখা দিতে পারে। তাই মনকে সতেজ রাখতে বিশ্রাম এবং পরিমিত ঘুম প্রয়োজন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here