৫৬০ রানে বাংলাদেশের ইনিংস ঘোষণা

0
506
৫৬০ রানে বাংলাদেশের ইনিংস ঘোষণা
ছবিঃ সংগৃহীত

খবর৭১ঃ দীর্ঘদিন পর নজরকাড়া ব্যাটিং করলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। জিম্বাবুয়ে বোলারদের নিয়ে ছেলেখেলা করলেন তারা। ব্যাটে ছোটালেন রানের বন্যা। মুশফিকুর রহিমের রেকর্ড ডাবল সেঞ্চুরি, মুমিনুল হকের অনবদ্য সেঞ্চুরি এবং লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্তর ফিফটিতে রানের পাহাড় গড়েছে বাংলাদেশ। ৬ উইকেটে ৫৬০ রানে ইনিংস ডিক্লেয়ার করেছে তারা। স্বাভাবিকভাবেই রানের চাপে পিষ্ট সফরকারীরা।

আগের দিনের ৩ উইকেটে ২৪০ রান নিয়ে তৃতীয় দিন শুরু করে বাংলাদেশ। সোমবার মুমিনুল হক ৭৯ এবং মুশফিক ৩২ রান নিয়ে খেলার গোড়াপত্তন করেন। নেমে স্বচ্ছন্দে খেলতে থাকেন তারা। শক্তভাবে ক্রিজে সেট হয়ে যান এ জুটি। স্বভাবতই ছন্দময় ব্যাটিং উপহার দেন মুমিনুল-মুশফিক।

জিম্বাবুয়ে বোলারদের রীতিমতো তোপ দাগান তারা। ব্যাটে স্ট্রোকের ফুলঝুরি ছুটিয়ে পথিমধ্যে টেস্ট ক্যারিয়ারে নবম সেঞ্চুরি তুলে নেন মুমিনুল। তবে অধিনায়ক হিসেবে এটি তার প্রথম তিন অংক ছোঁয়া ইনিংস। ডোনাল্ড তিরিপানোকে বাউন্ডারি মেরে এ শতক হাঁকান তিনি।

ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৯ সেঞ্চুরির মালিক তামিম ইকবাল। এদিন দুর্দান্ত শতক দিয়ে সেই রেকর্ডে ভাগ বসান মুমিনুল। এর সুবাদে ক্রিকেটের লংগার ভার্সনে পয়েট অব ডায়নামোর সেঞ্চুরি সংখ্যাও দাঁড়ায় ৯টি।

এরপর ধীরে ধীরে সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যান মুশফিক। দোর্দণ্ড প্রতাপে তা হাঁকান তিনি। লাঞ্চের পর এন্সলে এনদিলোভুকে গালি দিয়ে চার মেরে তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। এটি তার টেস্ট ক্যারিয়ারে সপ্তম সেঞ্চুরি। মুশির সবশেষ সেঞ্চুরিও জিম্বাবুইয়ানদের বিপক্ষে। গেল নভেম্বরে ঘরের মাঠে ডাবল সেঞ্চুরি করেন তিনি।

পরক্ষণেও দারুণ ব্যাটিং করেন মুমিনুল-মুশফিক। জিম্বাবুয়ে বোলারদের নিয়ে রীতিমতো ছিনিমিনি খেলেন তারা। জমাট বেঁধে যায় তাদের জুটি। কিন্তু হঠাৎ ছন্দপতন। এনদিলোভুর কট অ্যান্ড বোল্ড হয়ে ফেরেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ফেরার আগে ১৪ চারে ১৩২ রানের অনিন্দ্যসুন্দর ইনিংস খেলেন তিনি। তাতে মুশির সঙ্গে ভাঙে তার ২২২ রানের জুটি।

এ পথে অনন্য রেকর্ড গড়েন মুমিনুল-মুশফিক। এতদিন টেস্টে দুটি করে দুইশ রানের জুটি ছিল তামিম ইকবাল-ইমরুল কায়েসের। দুই মিডলঅর্ডারেরও ছিল তাই। এবার দুই ওপেনারকে ছাড়িয়ে গেলেন পয়েট অব ডায়নামো ও মিস্টার ডিপেন্ডেবল। তাদের দুইশ রানের জুটি হলো তিনটি।

পরে ক্রিজে আসেন মোহাম্মদ মিঠুন। তবে ব্যর্থ হন তিনি। মুশফিককে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেননি এ মিডলঅর্ডার। যদিও শুরুটা করেন ঝলক দেখিয়ে। তবে ব্যক্তিগত ১৭ রানে থেমে যান মিঠুন। শিকারী সেই এনদিলোভু। তার পর ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে নেমেও সাবধানী শুরু করেন লিটন দাস। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে শট খেলতে শুরু করেন তিনি। এক পর্যায়ে আরামসে খেলেন উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান।

মুশফিকের সঙ্গে জমে যায় তার জুটি। পথিমধ্যে টেস্ট ক্যারিয়ারে পঞ্চম ফিফটি তুলে নেন লিটন। তবে ফিফটির পর বেশিক্ষণ ক্রিজে স্থায়ী হতে পারেননি তিনি। সিকান্দার রাজার বলে বিদায় নেন এ ব্যাটার। ক্ষণে ক্ষণে উইকেট ব্যাটিং স্বর্গে পরিণত হয়। বল সোজা ব্যাটে আসে। স্বভাবতই ছন্দময় ব্যাটিং করেন মুশফিক। ব্যাটকে তলোয়ার বানিয়ে জিম্বাবুয়ে বোলারদের কচুকাটা করেন তিনি। তাদের খড়কুটোর মতো উড়িয়ে দেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল।

ইতিমধ্যে ডাবল সেঞ্চুরি করে ফেলেন মুশফিক। তার ক্যারিয়ারে এটি তৃতীয় দুইশ ছোঁয়া ইনিংস। এদিন আরেকটি রেকর্ড গড়েন তিনি। বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে সর্বোচ্চ রানের মালিক বনে যান নির্ভরযোগ্য ব্যাটার। ৪৪১৩ রান নিয়ে সবার ওপরে মুশি। তার চেয়ে ৮ রান কম নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছেন ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল। ৩৮৬২ রান নিয়ে তৃতীয় জুয়াড়ির প্রস্তাব গোপন করায় নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা সাকিব আল হাসান।

মুশফিকের ডাবল সেঞ্চুরি হওয়া মাত্রই ইনিংস ঘোষণা করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক। এতে ২৯৫ রানের লিড নেন টাইগাররা। মুশফিক ২০২ রানে অপরাজিত থাকেন। অপর প্রান্তে ১৩ রানে টিকে থাকেন তাইজুল ইসলাম। স্বাগতিকদের দলীয় এ সংগ্রহে তামিম ইকবালের অবদান ৪১ রান। আর ৭১ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলেন নাজমুল হোসেন শান্ত।

জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস: ১০৬.৩ ওভারে ২৬৫ (আগের দিন ২২৮/৬) (মাসভাউরে ৬৪, কাসুজা ২, আরভিন ১০৭, টেইলর ১০, রাজা ১৮, মারুমা ৭, চাকাভা ৩০, তিরিপানো ৮, এনদিলোভু ০, টিসুমা ০, নিয়াউচি ৬*; এবাদত ১৭-৮-২৬-০, আবু জায়েদ ২৪-৬-৭১-৪, নাঈম ৩৮-৯-৭০-৪, তাইজুল ২৭.৩-১-৯০-২)।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here