ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ ঠাকুরগাঁওয়ে গরু জব্দকে কেন্দ্র করে ‘বিজিবির গুলিতে’ পঙ্গুত্ব বরণ আর অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকা বহরমপুর গ্রামের মানুষগুলো সহযোগিতার অভাবে এখন অসহায়। পরিবারের উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে তারা দিশেহারা। একই সঙ্গে এক বছরেও ঘটনার বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
গরু জব্দকে কেন্দ্র করে গত বছরের এই দিনে বিজিবির গুলিতে রক্তাক্ত হয়েছিল ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার বহরমপুর গ্রামের মাটি। প্রাণ ঝরেছিল নিরীহ শিশুসহ দুই কৃষকের। আহত হয়েছিলেন শিশুসহ ১৮ জন।
এক বছর পেরিয়ে গেলেও রহস্যজনক কারণে থেমে আছে ঘটনার তদন্ত। সুষ্ঠু বিচার পায়নি নিহত ও আহদের পরিবার। এ অবস্থায় ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং ন্যায়বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবার ও তাদের স্বজন।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বহরমপুর গ্রামবাসীর উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি, প্রতিবাদ ও নিহতদের স্মরণে আয়োজিত সভায় ন্যায়বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা হরিপুর। এখানকার মানুষ অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে দিন যাপন করেন। উপজেলার বহরমপুর গ্রামে গত বছর গরু জব্দকে কেন্দ্র করে বিজিবি ও গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তখন বিজিবির গুলিতে হতাহতের ঘটনা ঘটলেও গত এক বছরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত ও আহতের পরিবার সহযোগিতা পায়নি।
এ অবস্থায় কষ্টে দিন কাটছে গুলিতে আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ ও অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকা মানুষগুলোর। পাশাপাশি বিজিবির করা মামলার আতঙ্কে রয়েছেন তারা। এজন্য সরকারের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের বিচার ও সহযোগিতা চেয়েছেন গ্রামবাসী।
প্রতিবাদ সভায় গ্রামবাসী জানায়, বিজিবির এমন ন্যক্কারজনক ঘটনায় লোক দেখানো তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটি এ পর্যন্ত আসল রহস্য বের করে কাউকে বিচারের মুখোমুখি করতে পারেনি। উল্টো বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ব্যস্ত তারা। গ্রামবাসীর অভিযোগ, আদালতের আশ্রয় নিয়েও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে আমাদের। বিজিবি ঠিকই প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। ঘটনার এক বছরেও নিহত ও আহতদের পরিবার কোনো ধরনের সহযোগিতা পায়নি। উল্টো বিজিবির মামলায় আতঙ্কে দিন কাটছে আমাদের। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই আমরা।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক (ডিসি) কেএম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, এ ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন দ্রুত সময়ের মধ্যে জমা দেয়া হবে। বিজিবির মামলার বিষয়টি আদালত দেখবে। আদালতের নির্দেশ পেলে গ্রামবাসীকে সহায়তা করা হবে।
২০১৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি হরিপুর উপজেলার বহরমপুর গ্রামে বিজিবি ও গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় বিজিবির গুলিতে নিহত হয় নবাব, সাদেক ও জয়নুল নামে তিনজন। এ ঘটনায় আহত হয় ১৮ জন। এদের মধ্যে এখন কারও হাত নেই, কারও পা নেই।