খবর৭১ঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুব সমাজের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, যুবকরা বেকার থাকুক তা আমরা কখনও চাই না।
তিনি বলেন, আমরা কর্মসংস্থান ব্যাংক করেছি। সেখান থেকে কর্মসংস্থানের জন্য শিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত, যে কোনো যুবক বিনা জামানতে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারে। সেটা একক বা যৌথভাবে নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে সেই সুযোগটা আমরা সৃষ্টি করে দিয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা এত কর্মসূচি নিয়েছি, কেউ যদি ইচ্ছা না করে তবে তার বেকার থাকার সুযোগ নেই।
বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম (টিটু) ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গার আলাদা দুই সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা এসব কথা বলেন।
যুব সমাজের কর্মসংস্থানে নেয়া নানা কর্মসূচি তুলে ধরে সংসদ নেতা বলেন, আমরা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি। সেখানে যুবকদের কর্মসংস্থান হবে। ডিজিটাল সেন্টার করেছি এবং কমিউনিটি ক্লিনিক করেছি সেখানেও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া আমাদের অনেক উন্নয়ন প্রকল্প হচ্ছে সেখানে যে কেউ চাইলে কিছু করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করেছি। আমাদের লক্ষ্য যুবকরা কাজ করবে, সবার কর্মসংস্থানের সুবিধা থাকবে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে তারা নিজেদের ভাগ্য গড়তে পারবে। যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে, তবে সেটা নির্ভর করে প্রতিটি যুবকের ওপর। তারা কি চাকরির পেছনে ঘুরবে নাকি নিজেরা কিছু করে অন্যের চাকরির সুযোগ তৈরি করবে।
উদ্যোক্তা হয়ে নিজেদের গড়ে তুলতে পারে, সেই দিকে লক্ষ্য রেখে তাদের প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিটি উপজেলায় কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। ছাত্রছাত্রীদের ষষ্ঠ শ্রেণিতে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চাই যেন স্কুলজীবন থেকে নিজেদের প্রতিভা দিয়ে কিছু করতে পারে।
আহসানুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, গত দশ বছরে (২০০৯ থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত) ২৯ লাখ ৬ হাজার ৫৭৪ জন তরুণকে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এছাড়া দশ বছরে ৪ লাখ ২১ হাজার ৪৪১ জন প্রশিক্ষিত যুব ও যুব মহিলাকে ১ হাজার ২৪২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। ফলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৭ লাখ ৪ হাজার ৩৭৩ জন বেকার যুবক ও যুবমহিলা সফল আত্মকর্মী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
মাদকাসক্তদের বিষয়ে বিশেষ কোনো পদক্ষেপ নেবেন কি না? মসিউর রহমান রাঙ্গার এই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি মনে হয় অনেক পিছনে পরে আছেন। ইতিমধ্যে আমরা ব্যবস্থা নেয়া শুরু করে দিয়েছি। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে এবং এটা চলতেই থাকবে।
মাদক একটা পরিবারকে ধ্বংস করে, দেশেরও ক্ষতি হয়। যে সেবন করে সে নিজেরও ক্ষতি করে, এর বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছি। মোরশেদ আলমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের নানামুখী শ্রম কূটনৈতিক তৎপরতার ফলে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিদেশগামী কর্মীর সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি বছর গড়ে ৭ থেকে ৮ লাখ কর্মী বিদেশ যাচ্ছে।
২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৬৬ লাখ ৩৩ হাজার ২৫৪ জনের বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ সময়ে রেমিটেন্স এসেছে ১৫৩ দশমিক ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
সমৃদ্ধির পথে হাঁটছে বাংলাদেশ : শেখ হাসিনা বলেন, দেশি-বিদেশি নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে উন্নয়ন, অগ্রগতি আর সমৃদ্ধির পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। সরকার ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বিগত ১০ বছরে সর্বক্ষেত্রে যে সফলতা অর্জিত হয়েছে তার পথ ধরে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌঁছানোর অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার ক্ষেত্রে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে। এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, টেকসই অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সরকারের উন্নয়ন ভাবনা ও তার যথাযথ বাস্তবায়নের ফলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ২০০৯ সাল থেকে আমাদের অগ্রযাত্রা শুরু হয়। বিগত ১১ বছরে সহস্রাব্ধ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজিএস) অর্জনে আমাদের ঈর্ষণীয় সাফল্য দক্ষিণ এশিয়াসহ উন্নয়নশীল দেশসমূহের জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে সমাদৃত হয়েছে।
জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মুক্তিযোদ্ধারা গর্ব করে মুখ ফুটে বলতে পারতেন না- আমরা মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু সেই অবস্থা এখন আর নেই। এখন মুক্তিযোদ্ধা গর্বভরে বলতে পারেন, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ সম্মান ফিরিয়ে দিয়েছি। মুক্তিযোদ্ধাদের যে মর্যাদা দিয়েছি, সেখানে আর পদক দেয়ার কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।
সরকারের উন্নয়ন কাজের ভূয়সী প্রশংসা বিএনপির সদস্য হারুনের : রাজপথে এবং সংসদে সরকারের কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে মুগ্ধ বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ।
তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী তৃতীয় বারের মতো প্রধানমন্ত্রী এবং পর পর তিনবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভের পর নিঃসন্দেহে দেশ অনেক ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন করেছে, কোনো সন্দেহ নেই। বৃহত্তম অবকাঠামোর দৃশ্যমান কিছু উন্নয়ন হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সম্পূরক প্রশ্ন করতে গিয়ে কথাগুলো বলেন বিএনপিদলীয় এই সংসদ সদস্য।