পদ্মায় মূল সেতুর ৮৫.৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন

0
574
পদ্মায় মূল সেতুর ৮৫.৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন

খবর৭১ঃ পদ্মা বহুমুখী মূল সেতুর ৮৫ দশমিক ৫ শতাংশ নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে ফাস্ট ট্র্যাক মনিটরিং কমিটি। এছাড়া এই প্রকল্পের পুরো কাজের ৭৬ দশমিক ৫০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।

রবিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ফাস্ট ট্র্যাক মনিটরিং কমিটির পঞ্চম সভায় এই তথ্য জানানো হয়। পদ্মা সেতুসহ ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত ১০টি প্রকল্পের প্রতিটির অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরা হয় এই সভায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন।

পদ্মা বহুমুখী প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি তুলে ধরে সভায় জানানো হয়, পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় জাজিরা প্রান্তে এপ্রোচ রোডের কাজ-৯১%, মাওয়া প্রান্তে এপ্রোচ রোডের কাজ-১০০%, সার্ভিস এরিয়া (২)-১০০%, মূল সেতু নির্মাণকাজ ৮৫.৫০% সম্পন্ন হয়েছে এবং নদীশাসনের কাজ ৬৬% সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৭৬.৫০% সম্পন্ন হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফাস্ট ট্র্যাক প্রজেক্টের প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি সম্পর্কে জানেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন। পদ্মা সেতুর কাজের অগ্রগতির জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক ঝামেলা গেছে আপনারা জানেন। আমরা আনন্দিত অর্ধেকের বেশি হয়ে গেছে। প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটারের মতো বোধহয় হয়ে গেছে।’

দেশের যেকোনো নদীতে সেতু নির্মাণের আগে সেই নদীর চরিত্র সম্পর্কে জানার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নদীতে ব্রিজ বা কোনো কিছু করতে গেলে আমাদের কিন্তু নদীর চরিত্রটা কেমন, বর্ষাকালে কী রূপ ধারণ করে, শীতকালে কী রূপ ধারণ করে এগুলো জেনে নিয়ে করা উচিত।’

‘নদীকে শাসন করতে গেলে সে শাসন মানবে না। সব নদী সব শাসন মানে না। সেটা মাথায় রেখে আমাদের কাজ করতে হবে।’

এ প্রসঙ্গে পদ্মা নদীর কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই সেতুটা করার সময় নদী শাসন করে আমি কিন্তু নদী ছোট করতে দিইনি। পদ্মা নদীর চরিত্র সম্পর্কে কারো জানা নেই। এই নদীটা অসম্ভব ভাঙনপ্রবণ। এখানে বাঁধ দিয়ে ছোট করতে গেলে এই নদী মানবে না। আমাদের ব্রিজটাই বড় করতে হবে। এখানে জায়গাও রাখতে হবে বাপার জোনও থাকবে। যাতে বন্যার পানিটা ধারণ করতে পারে।’

অন্যান্য প্রকল্পের অগ্রগতি

ফাস্ট ট্র্যাক মনিটরিং কমিটির পঞ্চম সভায় ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত ১০টি প্রকল্পেরই অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরা হয়।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের তিনটি প্যাকেজের প্রি-ইনসপেকশন (pre-inspection) শেষ হয়েছে। প্রকল্পের ভৌত কাজকে ৩৪৪টি অঙ্গে বিভক্ত করে কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট (রামপাল) প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৪৬ দশমিক ৯ শতাংশ, আর্থিক অগ্রগতি ৪১ দশমিক ৭৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।

মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম (MIDI) প্রকল্পে- বেজার উদ্যোগে গড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরী (ফেনী অর্থনৈতিক অঞ্চল, মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল, সীতাকুন্ডু অর্থনৈতিক অঞ্চল), মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম ও সাবরাং ইকো ট্যুরিজম পার্ক এবং জাইকা ও সরকারের সমন্বিত প্রয়াসে মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত।

বর্তমানে এখানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রায় ২০টি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, বন্দর নির্মাণ, এলএনজি ও এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণ অন্যতম।

অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পের প্রারম্ভিক কার্যাবলি ও মালামাল সংগ্রহের কাজ ইতিমধ্যে ১০০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। তাছাড়া, ভূমি অধিগ্রহণ ও ভূমি হুকুম দখলের কার্যক্রম গড়ে ৯০.৩৩ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে এবং আনোয়ারা-ফৌজদারহাট গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন প্রকল্পের পাইপ লাইন নির্মাণ কাজ শত ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। অবশিষ্ট দুটি প্রকল্পের পাইপ লাইন নির্মাণ কাজ গড়ে ৯০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে।

গভীর সমুদ্র বন্দর (সোনাদিয়া) প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা ও প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট হবে এ জন্য এ প্রকল্প বাতিল করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওখানে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে। অনেক প্রাকৃতিক সম্পদ আমরা হারাবো।

পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৫৮.৮৪% এবং আর্থিক অগ্রগতি ৬২.৫৫% সম্পন্ন হয়েছে।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ২১.৯৩% এবং আর্থিক অগ্রগতি ৩০.২২%।

দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মায়ানমারের নিকটে ঘুমধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৩৩%, আর্থিক অগ্রগতি ২৩.৯৩%।

প্রকল্পগুলোর অগ্রগতির জন্য প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ দেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।

ফাস্ট ট্র্যাক ভুক্ত ১০টি প্রকল্প ছাড়াও অন্যান্য বড় প্রকল্পগুলো মনিটর করতে ‘ফাস্ট ট্র্যাক মনিটরিং কমিটি’ কে নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কতগুলো বড় বড় প্রজেক্ট আছে। সেগুলোর কয়েকটা আমরা ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছি। আমাদের আরও অনেকগুলো প্রজেক্ট গুরুত্বপূর্ণ। আমরা প্রাথমিকভাবে কিছু ফাস্ট ট্র্যাক প্রজেক্ট হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছি এবং মনিটরিং করে যাচ্ছি। আমরা সেগুলোতো মনিটর করবোই ভবিষ্যতে আমার মনে হয় এই কমিটি থেকে শুধু এই কয়েকটা দেখলে হবে না আরও অনেকগুলো প্রজেক্ট আছে যেগুলো দেখতে হবে। ’

সরকারের ধারাবাহিকতার সুফল তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রতিটি কাজ যখন সরকারের ধারাবাহিকতা থাকে না তখন কাজগুলো নষ্ট হয়। টানা তিনবার আওয়ামী লীগকে দেশ পরিচালনার সুযোগ দেওয়ার জন্য জনগণকে

ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জনগণের কাছে কৃতজ্ঞ যে অন্তত তারা আমাদের এইটুকু সুযোগ দিয়েছে। যে আমরা পরপর এবার নিয়ে তৃতীয় বার এসেছি। তাতে আমাদের উন্নয়নের কাজগুলো সেগুলো বাস্তবায়নও করতে পারছি এবং মানসম্মতও করতে পারছি।’

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহ্‌মুদ চৌধুরী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট সচিব ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন। সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here