খবর৭১ঃ অবৈধভাবে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণের মামলায় সাময়িক বরখাস্ত পুলিশের বিতর্কিত ডিআইজি মিজানুর রহমান ও দুদকের পরিচালক (সাময়িক বরখাস্ত) খন্দকার এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন করা হয়েছে। রোববার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সভায় এই অনুমোদন দেয়া হয়। বিষয়টি যুগান্তরকে নিশ্চিত করেন দুদকের পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলী।
পরস্পর যোগসাজশে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ হস্তান্তর করার অপরাধে দণ্ডবিধির ১৬১/১৬৫(ক)/১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং ২০১২ সালের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২)(৩) ধারায় তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন করা হয়।
গত বছর ১৬ জুলাই তাদের বিরুদ্ধে এই অপরাধে মামলা করেছিল দুদক। মামলা দায়েরের পর দু’জনকেই গ্রেফতার করে জেলে পাঠায় দুদক। তদন্তকালে দু’জনের বিরুদ্ধে আনা অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিলের সুপারিশ করে প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। কমিশন সেটি অনুমোদন দেয়।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, দু’একদিনের মধ্যেই এই চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হবে।
দুদকের চার্জশিটে বলা হয়, দুদকের সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে কমিশন থেকে অর্পিত দায়িত্ব পালনকালে অসততার আশ্রয় নেন। তিনি অসৎ উদ্দেশ্যে নিজে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ডিআইজি মো. মিজানুর রহমানকে অবৈধভাবে সুযোগ প্রদানের ব্যবস্থা করেন। তিনি ডিআইজি মিজানের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন।
ডিআইজি মো. মিজানুর রহমান (সাময়িক বরখাস্ত) সরকারি কর্মকর্তা হয়ে নিজের বিরুদ্ধে আনীত অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য এই ঘুষের টাকা দেন। দুদকের অনুসন্ধানের ফলাফল নিজের পক্ষে নেয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে খন্দকার এনামুল বাছিরকে অবৈধভাবে প্রভাবিত করার জন্য তিনি ৪০ লাখ টাকা ঘুষ প্রদানের আয়োজন করেন।
দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিআইজি মিজান গত বছর ১৫ জানুয়ারি প্রথম দফায় ২৫ লাখ এবং দ্বিতীয় দফায় ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৫ লাখ টাকা ঘুষ দেন এনামুল বাছিরকে। দু’বারই রমনা পার্কে গিয়ে এনামুল বাছিরের হাতে টাকার ব্যাগ তুলে দেন ডিআইজি মিজান। লেনদেনের বিষয়টি তার বডিগার্ড হৃদয় হাসান ও অর্ডারলি মো. সাদ্দাম হোসেন জানত। তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে ঘটনা চাক্ষুষ দেখেছেন এবং দু’জনের কথোপকথন শুনেছেন। তাদের কথোপকথন পর্যালোচনায় দেখা যায়, এই টাকা ছাড়াও এনামুল বাছির তার ছেলেকে ঢাকার কাকরাইলে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল থেকে আনা-নেয়ার জন্য ডিআইজি মিজানের কাছ থেকে একটি গাড়িও দাবি করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের পরিচালক শেখ ফানাফিল্ল্যা তার প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করেন, তদন্তকালে বিশেষজ্ঞ মতামত, প্রত্যক্ষ সাক্ষীদের বক্তব্য, অডিও রেকর্ডে দু’জনের কথোপকথন ও পারিপাশ্বিক বিষয়াদি পর্যালোচনা করে তাদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। এটাও প্রমাণিত হয়েছে যে, ডিইইজি মিজান নিজে অভিযোগের দায় থেকে বাঁচার জন্য অসৎ উদ্দেশ্যে ঘুষের টাকা দিয়ে খন্দকার এনামুল বাছিরকে প্রভাবিত করেন। তিনি অবৈধভাবে দুদকের অনুসন্ধানকাজ ও কর্মকর্তাকে প্রভাবিত করার জন্য অবৈধ পন্থার আশ্রয় নেন। আর এনামুল বাছির আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় নিজের দায়িত্বের প্রতি অবহেলা করে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করেন।