উপকরণের উচ্চমূল্যে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি সৈয়দপুরে ৩০টি বেকারী ও চিপস ফ্যাক্টরী বন্ধের উপক্রম

0
605
উপকরণের উচ্চমূল্যে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি সৈয়দপুরে ৩০টি বেকারী ও চিপস ফ্যাক্টরী বন্ধের উপক্রম

মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ পণ্য তৈরীর উপকরণের (কাঁচামাল) মূল্য দফায় দফায় বৃদ্ধি পাওয়ায় সৈয়দপুর উপজেলায় বেকারী ও চিপস ফ্যাক্টরীগুলি বন্ধের উপক্রম হয়েছে। লাগামহীন দাম বৃদ্ধির কারণে পণ্যের উৎপাদন খরচ ৩০ ভাগ বেড়ে গেছে। প্রতিটি পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়লেও আগের দামেই উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে পণ্য বিক্রি করে বর্তমানে উৎপাদন খরচও উঠছে না। এতে করে পণ্য উৎপাদন করতে গিয়ে বড় অংকের লোকসান গুণতে হচ্ছে স্থানীয় ফ্যাক্টরী মালিকদের। ইতোমধ্যে লোকসানের মুখে ৩ থেকে ৪টি বেকারী এবং ১৫টি চিপস ফ্যাক্টরী বন্ধ হয়ে গেছে। আবার অনেক ফ্যাক্টরী মালিক লোকসান থেকে বাঁচতে শ্রমিক ছাটাই করছে। আবার অনেকে সপ্তাহে ২/৩ দিন ফ্যাক্টরী বন্ধ রাখছে। গত মধ্য নভেম্বর থেকে পাইকারী পণ্যের বাজার মূল্য অস্থির হয়ে ওঠায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে ক্ষুদ্র এই শিল্পে। একই সঙ্গে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত পাঁচ শতাধিক শ্রমিক কারিগরদের জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে।

স্থানীয় বেকারী ও চিপস ফ্যাক্টরী সূত্রে জানা যায়, সৈয়দপুর উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ৫০টি বেকারী ও চিপস পণ্য তৈরীর ফ্যাক্টরী রয়েছে। এর মধ্যে ২০টি বেকারী ও ৩০টি রয়েছে চিপস তৈরীর ফ্যাক্টরী। এসব ফ্যাক্টরীর মূল উপকরণ (কাঁচামাল) ময়দা-আটা, চিনি, সয়াবিন তেল, পাম অয়েল ও ডালডা। যা স্থানীয় পাইকারী বাজার থেকে সংগ্রহ করা হয়। এতদিন এসব পণ্যের পাইকারী মূল্য স্থিতিশীল থাকলেও গত মধ্য নভেম্বর থেকে বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। এ সময় থেকে অস্বাভাবিক হারে দফায় দফায় মূল্য বৃদ্ধির চাপে পড়ে স্থানীয় বেকারী ও চিপস তৈরীর শিল্প। এসব শিল্পের উপকরণ (কাঁচামাল) পাইকারী মূল্য কেজি প্রতি বৃদ্ধি পেয়েছে ৫ থেকে ২১ টাকা পর্যন্ত। সরেজমিনে শহরের বিচালিহাটি পাইকারী বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে ৭২ টাকা কেজি দরে সয়াবিন তেল প্রতি ড্রাম (১৮৬ কেজি) ১৩ হাজার ৩৯২ টাকার স্থলে বিক্রি হচ্ছে ১৭ হাজার ১০০ টাকায়। কেজিতে ২০ টাকা দাম বেড়েছে। ৬২ টাকা কেজি দরে পাম অয়েল প্রতি ড্রাম (১৮৬ কেজি) ১১ হাজার ৫০০ টাকার স্থলে বিক্রি হচ্ছে ১৫ হাজার ৬০০ টাকায়। কেজিতে ২১ টাকা দাম বেড়েছো। ৫২ টাকা কেজি দরে চিনি প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) ২৬ হাজার স্থলে বিক্রি হচ্ছে ২৯ হাজার ৮০ টাকায়। কেজিতে ৮ টাকা দাম বেড়েছে। ৩০ টাকা কেজি দরে ময়দা প্রতি বস্তা (৭৩ কেজি) ২ হাজার ২০০ টাকার স্থলে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫৫০ টাকায়। কেজি প্রতি দাম ৫ টাকা বেড়েছে। ২৬ টাকা কেজি দরে আটা প্রতি বস্তা (৩৭ কেজি) ৯৬০ টাকার স্থলে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১২০ টাকা। কেজিতে ৫ টাকা দাম বেড়েছে এবং ৭০ টাকা কেজি দরে ডালডা ১ কার্টন (১৬ কেজি) ১ হাজার ১২০ টাকার স্থলে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩৪০ টাকা। দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ১৪ টাকা।

প্রায় ২ মাস যাবত ক্ষণে ক্ষণে উপকরণের মূল্য বৃদ্ধিতে ফ্যাক্টরীগুলোর পণ্যের উৎপাদন খরচ ৩০ ভাগ বৃদ্ধি পাওয়ায় পণ্য উৎপাদন করতে গিয়ে লোকসান গুণতে হচ্ছে ফ্যাক্টরী মালিকদের। লোকসান থেকে বাঁচতে পণ্যের দাম বৃদ্ধি জরুরী হয়ে পড়েছে। কিন্তু প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারের কারণে পণ্যের মূল্যেও বাড়াতে পারছে না ব্যবসায়ীরা। ফলে এমন ত্রিশঙ্কু অবস্থায় পড়ে ক্ষুদ্র ফ্যাক্টরীগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ইতোমধ্যে লোকসান গুণতে গিয়ে নূর বেকারী ও রজনীগন্ধা বেকারীসহ কয়েকটি ছোট বেকারী বন্ধ হয়ে গেছে। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছে শতাধিক শ্রমিক কারিগর। এসব পরিবার এখন অভাব অনটনে দিনযাপন করছে। একই দশার শিকার হয়েছে চিপস তৈরীর ফ্যাক্টরীগুলি। সৈয়দপুর উপজেলায় ছোট বড় মিলিয়ে ৩০টি চিপস তৈরীর ফ্যাক্টরী রয়েছে। এর মধ্যে ৫টি ভাজা ও ২৫টি শুকনা (কাঁচা) চিপস তৈরী করে। চিপস তৈরীর মূল উপকরণ হচ্ছে ময়দা-আটা, সয়াবিন ও পাম ওয়েল। এসব উপকরণের দাম যথেচ্ছাভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় পণ্যের উৎপাদন ২০ থেকে ৪০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে উৎপাদিত চিপস বিক্রি করে লাভ তো হচ্ছে না, উৎপাদন খরচ তুলতে পারছে না ফ্যাক্টরীগুলি। ইতোমধ্যে বৈরী আবহাওয়া ও লোকসানের মুখে ১৫টি চিপস ফ্যাক্টরী বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদের অবস্থাও নাজুক।

জানতে চাইলে, বাংলাদেশ বিস্কুট এন্ড কনফেকশনারী প্রস্তুতকারক সমিতির নীলফামারী জেলা শাখার সভাপতি ও সৈয়দপুর ডায়মন্ড কনফেকশনারীর মালিক আখতার সিদ্দিকি পাপ্পু বলেন, বেকারী পণ্য তৈরীর কাঁচামালের (উপকরণ) পাইকারী মূল্য ঘন ঘন উর্ধ্বমুখী হওয়ায় পণ্য তৈরীর উৎপাদন খরচ ৩০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু বাজারে পণ্যের দাম বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। আগের দামে পণ্য বিক্রি করতে গিয়ে প্রতিটি বেকারী ফ্যাক্টরীকে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে। অনেক ফ্যাক্টরী লোকসান পোষাতে না পেরে বন্ধ হয়ে গেছে। বাদবাকি বেকারী ফ্যাক্টরীগুলোও বন্ধের উপক্রম হয়েছে। পাইকারী মূল্য স্বাভাবিক না হলে আরও কিছু ফ্যাক্টরী বন্ধ হওয়ার আশংকা রয়েছে। এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে কনফেকশনারী সমিতি পণ্যের দাম বৃদ্ধির চিন্তা ভাবনা করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এ ব্যাপারে চিপস ফ্যাক্টরীর মালিক সুলতান খান ঢেনু জানান, চিপস তৈরীর উপকরণ ময়দা-আটা, সয়াবিন ও পাম অয়েলের পাইকারী মূল্য দুই থেকে তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে পণ্যের বাজার দরের তুলনায় উৎপাদন খরচ উঠছে না। ফলে ফ্যাক্টরী চালাতে গিয়ে ২ থেকে ৪ লাখ টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে। বৈরী আবহাওয়া ও লোকসানের কারণে ইতোমধ্যে ১৫টি ছোট-বড় ফ্যাক্টরী বন্ধ হয়ে গেছে। চালু ফ্যাক্টরীগুলোর অবস্থা করুণ বলে মন্তব্য করেন তিনি। এসব ক্ষুদ্র শিল্প বাঁচাতে পণ্যের বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here