নূরের ওপর হামলায় ‘সংশ্লিষ্টতা’ না থাকার দাবি ছাত্রলীগের

0
463
নূরের ওপর হামলায় ‘সংশ্লিষ্টতা’ না থাকার দাবি ছাত্রলীগের

খবর৭১ঃ ডাকসু ভবনে ভিপি নুরুল হক নূর ও তার সহযোগীদের ওপর হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগের কারও কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেছেন এই সংগঠনটির হয়ে ডাকসুতে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। তাদের ভাষ্য, ভিপি নুরের ওপর হামলা-প্রতি হামলার সঙ্গে ছাত্রলীগ, ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের কেউ কোনোভাবেই জড়িত নয়।

রবিবার ডাকসু ভবনে এক সংবাদ সংবাদ সম্মেলনে ডাকসুতে ছাত্রলীগের হয়ে নির্বাচিত এজিএস ও ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন একথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচিত ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী উপস্থিত ছিলেন না। ডাকসুর স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাহরিমা তানজিম অর্ণি, সাহিত্য সম্পাদক মাজহারুল কবির শয়ন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আসিফ তালুকদার, ক্রীড়া সম্পাদক শাকিল আহমেদ তানভীরসহ কয়েকজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

এজিএস সাদ্দাম বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, ডাকসু ভবনের ঘটনায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মনোনীত কোনো ডাকসু প্রতিনিধির বিন্দুমাত্রও সংশ্লিষ্টতা নেই। আমরা আরও বলতে চাই যে, উল্লেখিত সংঘর্ষ, হামলা-প্রতি হামলার সাথে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কেউ কোনোভাবেই জড়িত নয়।’

ডাকসু ভবনে ওইদিনের হামলার ঘটনাকে ‘ন্যক্কারজনক’ হিসেবে বর্ণনা করেন। ভিপি নুরদের সংগঠন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ আর মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামক সংগঠনটির নেতারা ‘মিডিয়াবাজির’ মাধ্যমে পরিচিতি লাভের আশায় এই সংঘর্ষে লিপ্ত হয় বলে মন্তব্য করেন ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম।

তিনি বলেন, ‘এই ঘটনাটি ঘটে ডাকসু ভিপি নুরুল হক নূর ও তার সংগঠন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের দ্বারা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামক একটি সংগঠনের ওপর গত ১৭ ডিসেম্বর তারিখে হামলার জের ধরে। ঘটনার দিন পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও হামলার এক পর্যায়ে নূর ডাকসু ভবনে অবস্থান গ্রহণ করে এবং মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ভবনের বাইরে। ভবনের দরজা বন্ধ করে ভিতরে নূর তার বহিরাগত সঙ্গীদের নিয়ে বাঁশ, লাঠি, রড, পাইপ সজ্জিত অবস্থায় মারমুখী থাকে যার ভিডিও আমরা দেখতে পাই নূরের নিজ ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে পরিচালিত সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে।’

ভিপি নূরের সঙ্গীরা ঢিল ছুঁড়ে ডাকসুর জানালার গ্লাস ভেঙে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ওপর হামলা চালায় দেখতে পেয়েছেন দাবি করে সাদ্দাম বলেন, ‘আরেকটি ভিডিও ফুটেজে আমরা লক্ষ্য করি, নূরের সহযোগীরা ডাকসুর বারান্দায় সশস্ত্র অবস্থায় দলবেঁধে দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীদের উপর সংঘর্ষে লিপ্ত হবার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়ার দৃশ্য। একইভাবে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ডাকসু ভবনের বাইরে অবস্থান করে নিজেদের শক্তির জানান দেয়। এতে সার্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমাদের আবেগের, আমাদের পরম আরাধ্য, পবিত্র ডাকসু ভবন।’

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমর্থনে নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে আমরা এই পালটাপাল্টি হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা সম্পর্কে জানা মাত্রই যে যেখানে ছিলাম ছুটে আসার চেষ্টা করি ডাকসু ভবনকে রক্ষার এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য।’

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সমর্থকদের নিবৃত করতে সফল হলেও ভবনের ভিতরে থাকা ভিপি নূরের সমর্থকদের হামলা ও ঢিল ছোড়া বন্ধ করা সম্ভব হয়নি মন্তব্য করে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘এমতাবস্থায় ডাকসু মনোনীত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের সদস্য সনজিত চন্দ্র দাস এবং আমি ভবনের নিচে উপস্থিত হই। ডাকসু ভবনের নিচে এসে আমরা প্রথমেই বিক্ষুব্ধ মুক্তিয্দ্ধু মঞ্চের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ পরিহার করে স্থান ত্যাগ করার আহ্বান জানাই।’

‘আমাদের আহ্বানে মু্ক্িতযুদ্ধ মঞ্চ পিছু হটে। এরপর ডাকসুতে কর্মরত স্টাফরা দরজা খুলে দিলে সিনেট সদস্য সনজিত ও আমি ভিপি নূরের কক্ষে গিয়ে তাকেও সংঘর্ষ পরিহারের আহ্বান জানাই, যেমনটি জানানো হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের প্রতি। একইসাথে আমরা নূরকে আহ্বান জানাই, উপস্থিত বহিরাগতদের নিয়ে ডাকসু ভবন ত্যাগ করার জন্য যাতে চলমান সংঘর্ষের সমাপ্তি ঘটে।’

সাদ্দামের ভাষ্য, নূর তাদের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে উল্টো সিনেট সদস্য সনজিতের সাথে অসৌজন্যমূলক, ধর্মীয় উসকানিমূলক ও সাম্প্রদায়িক মন্তব্য করেন। এরপর পুনরায় নূরকে বহিরাগতদের নিয়ে ডাকসু ভবন ত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে তারা অবরুদ্ধ ডাকসু ভবন ত্যাগ করেন। এরপর বিবদমান দুই পক্ষ আবার সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর স্যার উপস্থিত হয়ে সংঘর্ষ থামান এবং আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

ওই দিনের ঘটনার পর নূর ভিপি পদে থাকার ‘যোগ্যতা হারিয়েছেন’ দাবি করে সাদ্দাম বলেন, ‘ডাকসু ভবনকে রক্ষা না করে বরং এই ভবনকে অবৈধভাবে ব্যবহার করে নিজের লেলিয়ে দেয়া বহিরাগত বাহিনী দিয়ে ভবনে ভাংচুরে অংশগ্রহণ করে নূর ভিপি পদে দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা হারিয়েছেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।’

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগ থেকে নির্ভাচিত ডাকসুর প্রতিনিধিরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ছয়টি দাবিও জানান। দাবিগুলো হলোÑ ডাকসু নেতৃবৃন্দ, সিনেট সদস্য, হল সংসদের নেতৃবৃন্দ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দের নামে মামলার অভিযোগ প্রত্যাহার করতে হবে; ডাকসু ভবনের ভিতরে অবস্থিত নূরের সহযোগী বহিরাগতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; ডাকসু ভবন ভাংচুরের সাথে জড়িত উভয় পক্ষের সদস্যদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; ডাকসু ভবনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ উদ্ধার করে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিতকরণ ও আইনের আওতায় আনতে হবে; ‘দুর্নীতির দায়ে’ অভিযুক্ত ডাকসু ভিপিকে পদত্যাগ করতে হবে। নূরের ‘দুর্নীতি’ তদন্তে কমিটি গঠন করতে হবে; সাম্প্রদায়িক ‘উসকানিমূলক’ বক্তব্য দেওয়ায় নূরকে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে, অন্যথায় তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here