খবর৭১ঃ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপির রাজনীতি এখন ভুলের চোরাবালিতে ডুবে গেছে। বিএনপি সংবাদ সম্মেলন আর নালিশ পার্টিতে পরিণত হয়েছে। বিএনপি কথায় কথায় বলে আন্দোলন হবে। দেখতে দেখতে এগারো বছর কেটে গেছে। কিন্তু বিএনপির আন্দোলন হয়নি। আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে তারা এখন দিশেহারা।’
তিনি গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর সার্কিট হাউজ ময়দানে খুলনা মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
বিশ্বকবি রবি ঠাকুরের ‘দুই বিঘা’ কবিতার লাইন ‘আমি শুধু হাসি আঁখি জলে ভাসি’ উদ্ধৃত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কথায় কথায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেন। অথচ বিএনপির আমলে হাওয়া ভবন ছিল খাওয়া ভবন। তারা পাঁচ পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তাদের মুখে দুর্নীতির কথা শোভা পায় না। এ দেশের মানুষ দুর্নীতিবাজ, টেন্ডারবাজ, জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের আর ক্ষমতায় আনবে না।’
তিনি দলের নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের দল এখন ক্ষমতায়। মঞ্চ ভরা নেতা। দলে নেতা যত বাড়ছে, কর্মী তত কমছে। কর্মীরা এখন নেতা হয়ে গেছে। পোস্টার লাগানোর জন্য এখন আর নেতাদের খুঁজে পাওয়া যায় না। ভাড়া করে লোক এনে এখন পোস্টার লাগাতে হয়। ডিজিটাল ব্যানার বিলবোর্ডে ছবি আর ছবি। ছবি টাঙ্গিয়ে নেতা হওয়া যাবে না। নেতা হতে গেলে নেতৃত্বের যোগ্যতা ও তৃণমূল কর্মীদের ভালোবাসা অর্জন করতে হবে।’
দলের দুঃসময়ের নেতাকর্মীদের অবদানের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের প্রাণ। দলের দুঃসময়ের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করতে হবে। ত্যাগী নেতাকর্মীরা বাঁচলে আওয়ামী লীগ বাঁচবে।’
বিতর্কিত নেতাদের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘ঘরের মধ্যে ঘর তৈরি করবেন না। মশারির মধ্যে মশারি খাটাবেন না। শুরু হয়ে গেছে শেখ হাসিনার অ্যাকশন। মনে করছেন এখানে (খুলনায়) অ্যাকশন হবে না। তা ভাববেন না। টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, সুবিধাবাদীরা সাবধান। যারা দাগী, সন্ত্রাসী তারাই বিতর্কিত। বিতর্কিতদের দলে টানবেন না। আওয়ামী লীগে দূষিত রক্তের দরকার নেই। তবে ভালো লোকদের জন্য আওয়ামী লীগের দরজা সব সময় খোলা।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না এলে পদ্মা সেতু হতো না। সীমান্ত বিজয় হতো না। ছিটমহল সমস্যার সমাধান হতো না। শেখ হাসিনার জন্যই আজ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। দেশের ৯৪ভাগ মানুষ এখন বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। বাকি চার শতাংশ মানুষের ঘরেও শিগগির বিদ্যুৎ পৌঁছাবে। আজ যেদিকে তাকাই সেদিকেই উন্নয়ন, সেদিকেই ডিজিটাল বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট শেখ হাসনার অবদান।’
সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ৩ হজার ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৭ কিলোমিটার খুলনা-মোংলা মহাসড়ক ৬লেনে উন্নীতকরণ, ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ভৈরব নদীর ওপর সেতু, ৫৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দপদপিয়া সেতু ও ৫৭৭কোটি টাকা ব্যয়ে চুনকুঁড়ি নদীর ওপর সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। এছাড়া আত্রাই ও আঠারোবাকী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।
বেলা ১২টায় খুলনা মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য পিযুষ কান্তি ভট্টাচার্য।
সম্মেলনের সম্মানিত অতিথির বক্তৃতা করেন বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি ও প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান। প্রধান বক্তা ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান।
বক্তৃতা করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এমপি, মির্জা আযম এমপি, বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল এমপি, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, শ্রম সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, শেখ সারহান নাসের তন্ময় এমপি, অ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন, নারায়ণচন্দ্র চন্দ এমপি, আব্দুস সালাম মূর্শেদী এমপি, আক্তারুজ্জামান বাবু এমপি, গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার এমপি প্রমুখ।
খুলনা মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশিদ। পরিচালনা করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সদ্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান ও জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুজিত অধিকারী।
এদিকে, বিকালে দ্বিতীয় অধিবেশনে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে তালুকদার আব্দুল খালেক ও সাধারণ সম্পাদক পদে এমডিএ বাবুল রানা এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে শেখ হারুনুর রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট সুজিত অধিকারীর নাম ঘোষণা করেন।
এরমধ্যে তালুকদার আব্দুল খালেক ও শেখ হারুনুর রশিদ খুলনা মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে পুন:নির্বাচিত হয়েছেন। তবে, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট সুজিত অধিকারী প্রথমবার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেন। এর আগে অ্যাডভোকেট সুজিত অধিকারী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।