খবর৭১ঃ নানা অপ্রাপ্তির বেদনা নিম্ন আদালতের বিচারকদের। জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলনে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে কাছে পেয়ে সেই বেদনার কথা তুলে ধরলেন তারা। প্রধান বিচারপতি ধৈর্য্য সহকারে বিচারকদের নানা অপ্রাপ্তির কথা শুনলেন এবং সাধ্যমত তা পূরণের আশ্বাস দিলেন। একইসঙ্গে মামলা জট নিরসনে দৈনন্দিন বিচারিক কর্মঘণ্টার পূর্ণ বাস্তবায়নসহ সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক দেওয়া নির্দেশনাসমূহ অমান্য করা হলো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।
তিনি বলেছেন, এক মিনিটও সময় নষ্ট না করে আমরা আপিল বিভাগের বিচারকরা সকাল ৯টায় এজলাসে বসি। প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের বিচারকরা বিচারকাজ পরিচালনার জন্য যদি সময়মত এজলাসে বসতে ও নামতে পারেন তাহলে অন্যান্য কোর্টের বিচারকরা কেন সময়মত কোর্টে উঠবে বা নামবে না। প্রধান বিচারপতির কথাও যদি আপনারা না শোনেন, আমি কঠোর ব্যবস্থা নেব, কোন ছাড় দেব না। কোর্টের সময়ের সঙ্গে নো কমপ্রোমাইজ। কোর্টে থাকলেই কাজ হবে, মামলা নিষ্পত্তির হার বাড়বে।
এদিকে নিম্ন আদালতের বিচারকদের উদ্দেশ্যে আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান বলেন, বিচার বিভাগকে কি আমরা স্বাধীন রাখতে চাই, নাকি অন্যের নির্দেশে আমরা চালাতে চাই? সংবিধান অনুযায়ী আমরা প্রত্যেকে স্বাধীন। হোক সে সহকারী জজ বা ম্যাজিস্ট্রেট। বিচার দেওয়ার ক্ষেত্রে বিচারকরা স্বাধীন, কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। আমরা কারো হস্তক্ষেপ চাই না। হস্তক্ষেপমুক্ত বিচার বিভাগ আমরা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আপনাদের প্রতি এটাই আমার আহ্বান।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শনিবার অনুষ্ঠিত বিচার বিভাগীয় সম্মেলনে নিম্ন আদালতের বিভিন্ন পর্যায়ের দেড় হাজার বিচারক অংশ নেন। সেখানে দ্বিতীয় পর্বে কর্ম অধিবেশনে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ মো. হেলাল চৌধুরীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সাতজন বিচারক তাদের বক্তব্যে নানা অপ্রাপ্তির বেদনা তুলে ধরেন।
বিচারকরা বলেন, বিভিন্ন সরকারি অফিসে উপ-সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা গাড়ি ক্রয়ের ক্ষেত্রে সরকারি অর্থ নগদায়নের সুবিধা পান। অথচ সমপর্যায়ের বা তদূর্ধ্ব বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা উক্তরূপ সুবিধা হতে বঞ্চিত। এছাড়া বিচারিক ভাতা বর্তমান মূল বেতন স্কেলের ৩০ ভাগ উন্নীতকরণ, চিকিৎসা সহায়তা ফান্ড সৃষ্টি, প্রতি জেলায় জুডিশিয়াল ডরমিটরি নির্মাণের দাবি জানান তারা।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনাদের দাবিগুলো ন্যায্য। যথাসম্ভব এগুলো পূরণের চেষ্টা করব। ৩০ শতাংশ ভাতার কথা বলেছেন। কিন্তু এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বেতন বেড়েছে অনেক, ভাতা দেওয়া এখন সম্ভব নয়।
সভাপতির বক্তব্যে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. ইমান আলী বলেন, দেশে এক লাখ মানুষের জন্য একজন বিচারক। প্রতি বিচারকের উপর বোঝা হিসেবে আছে ২ হাজার ৫৮ মামলা। আমরা ডুবে যাচ্ছি। এই ডুবন্ত অবস্থায় হাত গুটিয়ে থাকা যাবে না। বিচারপ্রার্থী জনগণকে দ্রুত বিচার দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি জিনাত আরা, বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী, হাইকোর্টের বিচারপতি তারিক-উল হাকিম বক্তব্য রাখেন।