সৎ ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে মৃত্যুশয্যায় ছোট ভাই

0
551
সৎ ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে মৃত্যুশয্যায় ছোট ভাই
ছবিঃ ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি।

খবর৭১ঃ

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে মো: মামুন বাদশা (৩২) নামে (পুলিশের কনস্টেবল) এক সৎ ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে তারই ছোট ভাই রবিউল ইসলাম। বর্তমানে সে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) বিকেল তিনটার দিকে উপজেলার চাড়োল ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় স্থানীয়রা কনেস্টবল মো: মামুন বাদশার মা মনোয়ারা বেগম (৫২) কে আটক করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করলেও পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় ঘাতক সৎ ভাই মো: মামুন বাদশা। ঘাতক মামুন বাদশা ও আহত রবিউল ইসলাম ওই এলাকার যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: নাজিম উদ্দিনের ছেলে। এ ঘটনায় আহত রবিউলের মা আনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে বালিয়াডাঙ্গী থানায় ৩২৬/৩০৭/৩৪ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং-২২, তারিখ- ২৯.১১.১৯ ইং। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় হাসপাতালের বেডে ব্যাথা ও যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে রবিউল আর পাশে বসে থেকে সন্তানের এ অবস্থায় প্রলাপ বকছেন মা আনোয়ারা বেগম। হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে আহত রবিউলের মা আনোয়ারা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, তার স্বামী যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: নাজিম উদ্দিনের তিন বিয়ে। তিনি ২য় স্ত্রী এবং তার ঘরে ৩ মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।

আগের ঘরের সন্তান মামুন বাদশা দিনাজপুরে পুলিশের কনেস্টবল পদে চাকুরীকালিন ২য় বিয়ে করায় তার প্রথম স্ত্রীর অভিযোগে বর্তমানে বরখাস্ত অবস্থায় রয়েছে এবং সে একজন মাদকাসক্ত। শুক্রবার বিকেলে তার ছেলে রবিউল লাহিড়ী বাজারে গিয়ে একটি মোবাইল কিনতে গিয়ে টাকা কম পড়ায় তার বাবা নাজিম উদ্দিনের নিকট ৫০০ টাকা হাওলাদ নেয়। এর কিছুক্ষন পর সে বাসায় এসে হাত-মুখ ধুতে গেলে তার সৎ ভাই তাকে ফোন করে জানায় সে তার বাবার কাছ থেকে যে ৫০০ টাকা নিয়েছে সেটা তার এখননি লাগবে। এমন কথা শোনার পর সে ক্ষিপ্ত হয়ে বাসা থেকে পাঁচশত টাকা নিয়ে তাদের পুরনো বাসায় গিয়ে তার বাবার মুখের উপর তা ছুড়ে মারে এবং বলে আমিও তোমার ছেলে মামুনও তোমার ছেলে, আমি পাঁচশত টাকা নেওয়াতে এভাবে ফোন দিতে হবে-এই নেও তোমার টাকা। এসময় তার বাবা মোবাইলে ছোট ছেলের এমন আচরণের কথা জানিয়ে মামুন বাদশাকে বাসায় আসতে বলে। এমন খবর পেয়ে মামুন দ্রত বাসায় এসে রবিউলকে চড়-থাপ্পর মারতে থাকে। একপর্যায়ে মামুনের মা মনোয়ারা বলে উঠে এভাবে বলে কিছু হবে না ওকে মেরে ফেলতে পারিস না।

একথা শোনার পর মামুন তার পকেট থেকে একটি টিপ চাকু বের করে রবিউলের বুকে ঢুকিয়ে দেয়। এসময় বুকের বাম দিক থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ দেখে চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকে রবিউল। তার চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় আর মামুন বাদশা ও তার মাকে আটক করে পুলিশে খবর দেয় । পুলিশ আসার বিষয়ে টের পেয়ে কৌশলে পালিয়ে যায় মামুন বাদশা। পরে মামুন বাদশাকে না পেয়ে স্থানীয়দের কাছ থেকে মা মনোয়ারাকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বালিয়াডাঙ্গী থানার এসআই ও এ মামলার আইও রাশেদুজ্জামান হেলাল জানান, খবর পেয়ে দ্রæত ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ এবং স্থানীয়দের কাছ থেকে ঘাতক মামুন বাদশার মা ও মামলার ২ নং আসামী মনোয়ারা বেগমকে থানায় নিয়ে আসে। তবে পুলিশ পৌছানোর আগেই পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় মামুন বাদশা।

তিনি আরও জানান, ঘাতক মামুন বাদশার নামে বালিয়াডাঙ্গী থানায় আরও দুটি মামলা আছে। স¤প্রতি একটি মামলার চার্জশীট দিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন। আসামীকে ধরতে জোর প্রচেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি। এ বিষয়ে কথা বলতে মুঠোফোনে দিনাজপুর পুলিশ সুপার সৈয়দ আবু সায়েম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে অবগত হলাম। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। পুলিশের কনস্টেবল কর্তৃক চাকু মেরে সৎ ভাইকে হত্যা চেষ্টার বিষয়ে জানতে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার মোহা. মনিরুজ্জামান (পিপিএম-সেবা)’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি অবগত আছি।

এ ঘটনায় বালিয়াডাঙ্গী থানায় একটি মামলা হয়েছে। এছাড়াও আসামীকে ধরতে সকল থানায় মেসেজ পাঠানো হয়েছে। উল্লেখ্য, কনস্টেবল মামুন বাদশার উশৃঙ্খল জীবন-যাপন সহ তার মুক্তিযোদ্ধা পিতার আর্থিক ক্ষতি, প্রাণ নাশের হুমকি, সৎ ভাই রবিউলকে মারধর ও সৎ মা আনোয়ারা বেগমকে টিউবওয়েলের হ্যান্ডেল দিয়ে পিটিয়ে হাত ভেঙ্গে দেওয়ায় তার বাবা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা নিজাম উদ্দিন বাদী হয়ে চলতি বছরের মে মাসে বালিয়াডাঙ্গী থানায় মামুন বাদশাকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছেন-যা এখনও আদালতে বিচারাধীন। এছাড়াও চাকুরীকালিন ১ম স্ত্রী থাকাবস্থায় আরও একটি বিয়ে করায় ১ম স্ত্রীর দায়ের করা মালায় কিছুদিন জেলও খেটেছে এই মামুন বাদশা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here