মিরপুরের ঝিলপাড় পোড়া বস্তি ঘিরে কোটি টাকার বাণিজ্য

0
908
মিরপুরের ঝিলপাড় পোড়া বস্তি ঘিরে কোটি টাকার বাণিজ্য
পোড়া বস্তিতে নতুন ঘর তৈরি করা হচ্ছে। স্থানীয় নেতারা এসব ঘর থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। ছবিঃ সংগৃহীত।

খবর৭১ঃ এক একটি ঘর ৭ থেকে ৮ হাত। ঘরপ্রতি চাঁদা দিতে হয় ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। ঘর বেশি হলে সেখানেও রয়েছে ঘরের ভাগ। পোড়া বস্তিতে গত ৩ দিন ঘুরে ঠিক এমনই চিত্র দেখা গেছে। গত আগস্ট মাসের শেষের দিকে নগরীর মিরপুরের ঝিলপাড় বস্তিতে আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে আড়াই হাজার ঘর। নিঃস্ব হয়েছে অনেক পরিবার।

সহায়-সম্বলহীন বস্তিবাসী কোথাও পায়নি মাথা গোঁজার ঠাঁই। তারা প্রতিনিয়ত আশায় বুক বেঁধেছেন কিছুদিন পর হয়ত আগের জায়গায় মাথা গুঁজবেন। অবশ্য ১ মাস আগ থেকে পুড়ে যাওয়া বস্তিতে ঘর তুলতে শুরু করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। ওই সময় প্রশাসন বাধা দিলেও তা বেশিদূর এগোয়নি।

বস্তিবাসীর দাবির মুখে তারা পিছু হটে। কিন্তু বাগড়া দিয়েছেন স্থানীয় যুবলীগ নেতারা। তারা বস্তিতে ঘর বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছেন। তাদের চাঁদা দিয়ে ঘর তুলতে হয়। চলমান শুদ্ধি অভিযানে নিজেদের শোধরাতে পারেননি ওই এলাকার কথিত যুবলীগ নেতারা। তারা প্রতিনিয়ত বস্তিবাসীকে ঘর তুলতে বাধা দিচ্ছেন।

ভুক্তভোগীরা জানান, বস্তিতে ঘর তুলতে হলে নগদ টাকার পাশাপাশি যুবলীগ নেতাদের ঘরের ভাগও দিতে হয়। স্থানীয় যুবলীগ নেতা সোহেল রানা (মিল্ক ভিটার কর্মচারী), ওয়াজেদ শিকদার ও মাজেদ বস্তিবাসীকে জিম্মি করে টাকা ও ঘর হাতিয়ে নিচ্ছেন।

সরেজমিন পোড়া বস্তির ৬ নম্বর চলন্তিকা ও ৭ নম্বরের ঝিলপাড় (দেশ ফার্মার পেছনে) গিয়ে দেখা যায় আগুনে পোড়া অংশে নতুন করে তিন শতাধিক ঘর উঠেছে। বাঁশ, টিন ও কাঠের পাটাতন দিয়ে এ সব ঘর বানানো হয়েছে। বেশিরভাগ ঘরই ৭ থেকে ৮ হাত। ৭ নম্বর ঝিলপাড় বস্তিতে দুই শতাধিক নতুন ঘর উঠেছে। কিছু ঘরের কাজ চলছে। এ জন্য ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বাঁশ পুঁতে রাখা হয়েছে।

ঝিলের মাঝ বরাবর নিচু জায়গায় কাঠের ওপর বাঁশের পাটাতন দিয়ে কয়েকটি ঘরের সীমানা দেয়া হয়েছে। উঁচু জায়গায় মাটি ভরাট করে কংক্রিটের ঢালাই ও টিনের বেড়া দিয়ে বড় কক্ষের কয়েকটি ঘর বানানো হয়েছে। বস্তিতে চলাচলের জন্য ৫ ফুট, ৬ ফুট ও ১০ ফুট রাস্তা রাখা হয়েছে। এ জন্য সীমানা দেয়া হয়েছে। ৬ নম্বর চলন্তিকা বস্তিতে চলাচলের জন্য ২৫ ফুট রাস্তা রাখা হয়েছে। রাস্তার সীমানায় ৫০টির মতো ঘর পড়েছে। আগে এখানে ৫ ফুট রাস্তা ছিল।

ঘর হারিয়ে ষাটোর্ধ্ব অজুমান বেগম বলেন, বস্তিতে আমার মাত্র একটি ঘর। তাও সেটি রাস্তার জায়গায় পড়েছে। আমি বিধবা। কী করব। কই থাকব। কেউ কিছু বলে না। কেউ সাহায্য করে না। কেউ সাহায্য নিয়ে এলে তা বাইরের লোক নিয়ে যায়। বস্তির লোক পায় না।

বস্তির বাসিন্দারা জানান, ঘরপ্রতি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা দেয়া লাগে। তারা জানান, যুবলীগ নেতা সোহেল রানা ও ওয়াজেদ শিকদার বস্তির ঘর এবং অবৈধ বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ নিয়ন্ত্রণ করেন। ঘর তুলতে হলে এদের কাছ থেকে বেশি দামে ইট, বালু ও সিমেন্ট কিনতে হয়। এদের কথাই শেষ কথা। বস্তির বাসিন্দা গৃহকর্মী আরজু আক্তার নিয়তি বলেন, বস্তিতে তার ২টি ঘরের জায়গা রয়েছে।

একটি ঘর তুলতে ৭ হাজার টাকা চাঁদা দেয়া লাগছে। টাকা না থাকায় অন্য ঘরটি তোলা হয়নি। সেটি কব্জায় নিতে যুবলীগ নেতারা পাঁয়তারা করছেন। তিনি বলেন, আগুন লাগার পর কত মিডিয়া, কত টিভি চ্যানেল এলো। আর এখন আমাদের কেউ খবর নেয় না। ঘর তুলতে যুবলীগের পোলাপান যে টাকা নেয় তাও প্রচার করে না।

বস্তির বাসিন্দা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সোলেমান মৃধা বলেন, আগুন লাগার পর বস্তির অনেক লোক অন্যত্র চলে গেছেন। এ সুযোগে যুবলীগ নেতারা তাদের ঘর বিক্রি করে দিচ্ছেন। তিনি বলেন, যে সব ঘর উঠেছে সেখানে অবৈধ বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ দিয়ে যুবলীগ নেতা সোহেল রানা ও ওয়াজেদ শিকদার লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এ ব্যাপারে যুবলীগ নেতা সোহেল রানা, ওয়াজেদ শিকদার ও মাজেদ বলেন, বস্তিতে যে যার মতো ঘর ওঠাচ্ছে। আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে।

ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সভাপতি মাঈনুল হোসেন নিখিল বলেন, যুবলীগের নাম ভাঙিয়ে কেউ চাঁদাবাজি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেব। কোনো চাঁদাবাজ যুবলীগে থাকবে না। পল্লবী জোনের এসি এসএম শামীম বলেন, মানবিক কারণে বস্তিবাসীদের আপাতত সেখানে থাকতে দেয়া হয়েছে। ঘর তুলতে থানা পুলিশ কখনও বাধা দেয়নি।

ঘরের জন্য যুবলীগ নেতাদের টাকা দেয়া লাগে এ ধরনের অভিযোগ অবশ্য পাইনি। পেলে ব্যবস্থা নেব। স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা বলেন, আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের আগের জায়গায় থাকতে দেয়া হয়েছে। বস্তিতে চলাচলের জন্য বড় রাস্তাও থাকবে। এদের কথা আমি সব সময় চিন্তা করি। কেউ বস্তি নিয়ে চাঁদাবাজি করলে ব্যবস্থা নেব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here