খবর৭১ঃ ঋণ পুনঃতফসিলের বিশেষ নীতিমালার আওতায় নতুন করে আর কোনো আবেদন নিতে পারবে না ব্যাংকগুলো। ওই নীতিমালায় বেঁধে দেওয়া ৯০ দিনের সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে নতুন আবেদন গ্রহণ বন্ধ থাকলেও এ পর্যন্ত জমা হওয়া আবেদনগুলো নিষ্পত্তির বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে।
অর্থাৎ আগামী ১৯ নভেম্বরের মধ্যেই বিশেষ নীতিমালার আওতায় জমা পড়া সব আবেদন ব্যাংকগুলোকে নিষ্পত্তি করতে হবে। এছাড়া আবেদন নিষ্পত্তিকালীন নীতিমালার আওতায় পুনঃতফসিল সুবিধা নেওয়া ঋণগ্রহীতাদের নতুন করে ঋণ না দিতেও নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে।
জানা যায়, বিভিন্ন পক্ষের আপত্তি ও সমালোচনার মধ্যেই গত ১৬ মে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিটসংক্রান্ত ওই বিশেষ নীতিমালা জারি করে। এতে বলা হয়, ঋণখেলাপিরা মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়েই ঋণ পুনঃতফসিল করতে পারবেন। পুনঃতফসিল হওয়া ঋণ পরিশোধে তারা সময় পাবেন টানা ১০ বছর। এ ক্ষেত্রে প্রথম এক বছর কোনো কিস্তি দিতে হবে না।
এ বিষয়ে সার্কুলার জারির পরই তা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের একজন আইনজীবী। ওই রিটের শুনানি শেষে বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ২১ মে ওই নীতিমালার ওপর স্থিতাবস্থা জারি করে রুল দেন। রুলে ওই নীতিমালা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। পরে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন জানায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগ। গত ৮ জুলাই এ আবেদনের শুনানি করে ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের করা নীতিমালার ওপর স্থিতিবস্থা জারি করে হাইকোর্টের আদেশ দুই মাসের জন্য স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। ফলে ওই নীতিমালার মাধ্যমে ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ১০ বছরে খেলাপি ঋণ পরিশোধের যে সুযোগ বাংলাদেশ ব্যাংক দিয়েছে, তার কার্যকারিতা ফিরে আসে। তবে ঋণখেলাপিদের মধ্যে যারা এ বিশেষ সুবিধা নেবেন, এ সময়ে তারা আর নতুন কোনো ঋণ নিতে পারবেন না বলেও আদেশ দেন আপিল বিভাগ।
আপিল বিভাগ হাইকোর্টের জারি করা রুলটি বিচারপতি জেবিএম হাসানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চকে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন।
পরবর্তী সময়ে বিষয়টি হাইকোর্টের বিচারপতি জেবিএম হাসানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে শুনানির জন্য উত্থাপন করা হয়। এ অবস্থায় যারা ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টের সুবিধা নেবেন, তারা আর কোনো ব্যাংক থেকে নতুন ঋণ সুবিধা নিতে পারবেন না মর্মে আপিল বিভাগ দুই মাসের জন্য যে আদেশ দিয়েছিলেন, সেটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তা ২০ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানোর আদেশ দেন হাইকোর্ট। গত রবিবার শেষ দিন হওয়ায় ওই নীতিমালার কার্যকারিতা নতুন করে আরও এক মাস অথবা এ সংক্রান্ত রিট পিটিশন নিষ্পত্তির তারিখ পর্যন্ত বাড়ানো আদেশ দেয় হাইকোর্ট। এতে ওই নীতিমালার আওতায় আরও এক মাস আবেদন করার সুযোগ পেতেন ঋণখেলাপিরা। কিন্তু হাইকোর্টের এই আদেশ দেওয়ার তিন দিনের মাথায় বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক এই সার্কুলার জারি করে।
বিভিন্ন ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঋণ পুনঃতফসিলের নীতিমালার আওতায় গত ২০ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার হাজার আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলোতেই পড়েছে প্রায় চার হাজার আবেদন। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকে এক হাজার ৫০০, জনতা ব্যাংকে ৮০০, বেসিক ব্যাংকে ৫৫০, অগ্রণী ব্যাংকে ৪০০, রূপালী ব্যাংকে ২৫০ এবং বিডিবিএলে ২৫০ জনের আবেদন জমা পড়েছে। এর বাইরে বাংলাদেশ কৃষি ও রাজশাহী কৃষি ব্যাংকেও কিছু আবেদন জমা পড়েছে। এছাড়া বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে আরও পাঁচ শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে বলে জানা গেছে।