বেনাপোলে বানিজ্য মেলার নামে চলছে লটারি নামের জুয়াবাজি

0
1116

খবর৭১,শেখ কাজিম উদ্দিন, বেনাপোল : বেনাপোলে গ্রামীন শিল্প ও বানিজ্য মেলার নামে চলছে অবৈধ র‌্যাফেল ড্র নামে জুয়াবাজির রমরমা ব্যবসা। যার রোশানল থেকে বাদ যাচ্ছে না গ্রামের সাদাসিধা নারী-শিশুসহ আবাল-বৃদ্ধ বনিতারা।

প্রত্যক্ষদর্শী, ভুক্তভোগী ও স্বরেজমিন তথ্যে জানাযায়, ৯ জুলাই/১৭. বেনাপোল পৌর সভার আয়োজনে স্থানীয় বলফিল্ড ময়দানে মাসব্যাপী শুরু হয় গ্রামীন শিল্প ও বাণিজ্য মেলা। যার উদ্বোধন করেন যশোর জেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।

সেদিন মিথ্যা ঘোষণায় গ্রামীন শিল্প ও বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন হলেও পরক্ষণে ভোল পাল্টে “মাথাই নস্ট মামা” স্লোগানে শুরু করা হয় “র‌্যাফেল ড্র” তথা “লটারি” নামে সবর্বনাশি জুয়ার ব্যবসা। নাম দেয়া হয়েছে দৈনিক উল্লাস র‌্যাফেল ড্র।

প্রতিদিন ২ শতাধীক ইজি বাইকে চড়ে প্রত্যেক বাইকে চমৎকার বচন ভঙ্গির একেকজন ভাষ্যকর ২০ টাকা মূল্যের নানা রঙের টিকিট বিক্রি করে থাকেন। অনেক ক’রুচিপূর্ণ বচন ভঙ্গিতে ইভটিজিংয়ের ন্যায় ভাষা ব্যবহার করে বিক্রয় করেন লক্ষ লক্ষ টিকিট।

তখন, হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালার পিছনে ছোটার মতো বাইকের পিছনে ছুটতে থাকেন গ্রামের মা-বোনেরা, শিশু-কিশোর ও বয়স্করা। বাদ থাকে না চায়ের দোকানদার, ভ্যান চালক, স্কুল-কলেজ- মাদ্রাসা পড়–য়া শিক্ষার্থীসহ অধিকাংশ নি¤œ আয়ের মানুষ। আকর্ষণীয় পুরস্কার পেতে হবে এমনটি আশা করে এনজি থেকে লোন নিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন অনেকে। এমনও নারী পুরুষ প্রতিদিন ২ শতাধীক টিকিট কেটে খেলার মাঠে বুকফাটা আর্তনাদে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেছেন। কান্নায় সুর দিয়েছেন “ও আল্লা” এখন আমার কি হবে। কিভাবে আমি সমিতির টাকা পরিশোধ করব।

এমনই এক পরিবেশে কথা হয় বেনাপোলের গাতিপাড়া গ্রামের আমেনা খাতুনের সাথে। বলেন, প্রতিদিন শুনছি লটারি কাটলি মটর সাইকেল, শুনার চেনসহ আরো কতোকি জিনিষ বাদজে। তাই একটা-দুটো করে কাটতাম। এখন দেখছি দামি দামি গাড়ি দেচ্ছে। তাই সমিতি থেকে কুড়ি হাজার টাকা তুলে কয়েকদিন ধরে ১০০ টি, ১৫০টি আজ ২৩০ টি টিকিট কাটিচি। এ পর্যন্ত আমার সব টাকা চলে গেলিও একটা কিচু বাদিনি। আমি এখন কি করে সমিতির টাকা দেব সে চিন্তাই করছি।

কথা হয় স্কুল পড়–য়া ২য় শ্রেণীর ছাত্রের সাথে। বলে, আব্বু স্কুলে আসার জন্যি ১০ টাকা করে খাতি দেয়। তা জমিয়ে জমিয়ে আজকে দু’টো টিকিট কাটিছি।

কথা হয় বেনাপোল বাজারে পানের দোকানদার জাহাঙ্গীর আলমের সাথে। বলেন, যদি একটা মটর সাইকেল বেধে যায় তাহলে তা দিয়ে ভাড়া মেরে খাতি পারব। তাই, কয়েক দিন ধরে টিকিট কাটছি কিন্তু এ পর্যন্ত একটিও বাধিনি। এখন আমার দোকানের সকল পুজি লটারির মধ্যি চলেগেছে।

কথা হয় ঘিবা গ্রামের কহিনুর বেগমের সাথে। বলেন, লোভে পড়ে কয়েক দিন যাবত বাড়ির হাঁস, কুকড়োগুলো বিক্রি করে লটারির টিকিট কাটছি। একদিনও কিছু বাধিনি। এখন আর কি বিক্রি করব? একটা ছাগল ছিল তাও বিক্রি করে লটারি কাটিছি। বাড়িওয়ালার কথা না শুনে হাঁস-কুকড়োগুলো সব শেষ করায় স্বামীর মারও খেতে হয়েছে।

দৈনিক উল্লাস লটারি কর্র্তৃপক্ষ সুত্রে জানাযায়, প্রতিদিন দৈনিক উল্লাসের ২ শতাধীক ইজি বাইক বেনাপোল, শার্শা, নাভারণ, জামতলা, বাগ আচড়া, গদখালী, বেনেয়ালী, ঝিকরগাছা, বাকড়া, চৌগাছা, নতুন হাট, পুলের হাট, যশোর, কলারোয়া, সাতক্ষিরা, পাটকেলঘাটা, কালিগঞ্জ, পাইকগাছা, শ্যামনগর, নড়াইল, মাগুরা ও ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জ ও অলিগলিতে। সব মিলিয়ে দৈনিক সর্বনি¤œ দেড় থেকে আড়াই লক্ষ পর্যন্ত টিকিট বিক্রি হয়। প্রতিটি টিকিটের মূল্য ২০ টাকা করে তাতে প্রায় ৪০ লক্ষ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা বিক্রি হয়। যার সিংহভাগ দিতে হয় বেনাপোল পৌর মেয়রসহ প্রশাসনকে। এসাথে মেয়রের অনেক চেলাবেলা সার্বক্ষনিক মনিটরিং করে লাভের গুঢ় খেয়ে যাচ্ছে।

এসময়, র‌্যাফেল ড্রর অনুমতি আছে কি না জিজ্ঞাসা করলে কতৃপক্ষ বলেন, বানিজ্য মেলার অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিন্ত লটারির জন্য অনুমতি পায়নি। তাতে সমস্য নেই, সিস্টেমে চলছি।

এদিকে, র‌্যাফেল ড্রর ৫ম রজনীতে পুলিশ কর্তৃক মেলার মেইন ফটকের সামনের ডেকোরেশন ভাংচুর করার দৃশ্য চোখে পড়ে লটারির টিকিট কেনা দর্শকদের। সেসাথে বন্ধ করে দেওয়া হয় র‌্যাফেল ড্রর খেলা। মুহুর্তে পথে থাকা উল্লাস লটারির ভাড়াকৃত কয়েকটি ইজিবাইক ভাংচুরসহ টিকিটের বাক্স কেড়ে নেয় জনতা। প্রায় ২ঘন্টা যাবত চলে পুলিশের বন্ধ ঘোষণার মহড়া।

এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, গ্রামীন শিল্প ও বানিজ্য মেলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মেলা চলুক তাতে বাধা নেই কিন্তু লটারির কোন অনুমতি নেই। এরা লটারির নামে এলাকার মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দিচ্ছে। সর্বশান্ত হয়ে পড়ছে এলাকাবাসি।

অপরদিকে পুলিশ কর্মকর্তাদের সেকথাটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ২ ঘন্টার ব্যবধানে রাত ১২ টায় আবারো শুরু হয় লটারি কার্যক্রম।

এ ব্যাপারে দৈনিক উল্লাস র‌্যাফেল ড্র’র এমডি বিল্লাল হোসেন বলেন, মেলা করতে প্রচুর অর্থ ব্যয় হয় কিন্তু ভালো প্রতিষ্ঠান তাদের সহায়তায় এগিয়ে না আসায় বাধ্য হয়ে লটারী চালানো হচ্ছে।

এ বিষয়ে শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন, যশোর জেলা প্রশাসন থেকে বেনাপোলে গ্রামীন শিল্প ও বানিজ্য মেলার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তবে, এ বিষয়ে তাঁর দপ্তরে এখনও কোন চিঠি দেয়া হয়নি। অন্যদিকে মেলার মাঠে লটারি কার্যক্রম চলছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
খবর৭১/জি:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here