খবর৭১ঃ
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা মামলার তদন্ত শেষ হবে নভেম্বরে। ওই মাসেই চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম। সোমবার ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।
আবরার হত্যার নেপথ্য কারণ হিসেবে কী খুঁজে পেল পুলিশ এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আবরার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ১৯ আসামির মধ্যে চারজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আসামিদের জবানবন্দিতে বলা হয়, মূলত শিবির সন্দেহেই আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আসামিদের জবানবন্দিতে হত্যার কারণ হিসেবে এমনটিই বেরিয়ে এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘আগামী নভেম্বরের শুরুর দিকেই আবরার হত্যা মামলার তদন্ত শেষ হবে। নভেম্বর মাসেই আদালতে মামলার চার্জশিট দাখিল করবে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।’
আবরার হত্যার রাতে বুয়েট এলাকায় পুলিশের কোনো টহল টিম ছিল কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার দিন রাত ৩টা পর্যন্ত বুয়েট এলাকায় পুলিশের একটি টিম ছিল। কিন্তু তারা এ সময় কোনো হইচইয়ের শব্দ পাননি।’
প্রসঙ্গত ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় খুন হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করে শনিবার বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ফাহাদ। এর জের ধরে ৬ অক্টোবর রাতে শেরেবাংলা হলের নিজের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে তাকে ডেকে নিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পিটুনির সময় নিহত আবরারকে ‘শিবিরকর্মী’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালায় খুনিরা।
তবে আবরার কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না বলে নিশ্চিত করেছেন তার পরিবারের সদস্যসহ সংশ্লিষ্টরা।
হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ না রাখতে সিসিটিভি ফুটেজ মুছে (ডিলিট) দেয় খুনিরা। তবে পুলিশের আইসিটি বিশেষজ্ঞরা তা উদ্ধারে সক্ষম হন। পুলিশ ও চিকিৎসকরা আবরারকে পিটিয়ে হত্যার প্রমাণ পেয়েছেন।
আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ইতিমধ্যে পুলিশ ১৯ জনকে গ্রেফতার করেছে। ১৩ জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। রোববার পর্যন্ত চারজন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
গ্রেফতার আসামিরা হলেন- বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রাসেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন, অনীক সরকার, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, ইফতি মোশারেফ, বুয়েট ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রবিন, গ্রন্থ ও প্রকাশনা সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ ওরফে মুন্না, ছাত্রলীগের সদস্য মুনতাসির আল জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম ওরফে তানভীর, মোহাজিদুর রহমানকে, শামসুল আরেফিন, মনিরুজ্জামান ও আকাশ হোসেন, মিজানুর রহমান (আবরারের রুমমেট), ছাত্রলীগ নেতা অমিত সাহা এবং হোসেন মোহাম্মদ তোহা।
এদের মধ্যে ১৩ জনকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে ছাত্রলীগ। আর ১৯ জনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।