খবর৭১ঃ সারাদেশে বহির্গমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের আঞ্চলিক অফিসগুলোতে পাসপোর্টের বইয়ের সংকট দেখা দিয়েছে। নতুন পাসপোর্ট বা নবায়ন করা হলে নির্দিষ্ট সময়ের দুই-তিনগুণ বেশি সময় পরে পাসপোর্ট মিলছে। অনেক ক্ষেত্রে এর বেশি সময়ও লাগছে। প্রতিদিন ঢাকা ও আঞ্চলিক অফিসগুলোতে হাজার হাজার আবেদনকারী ধরনা দিয়ে ফেরত যাচ্ছেন।
প্রবাস থেকে এসে অনেকেই নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করে থাকেন। কিন্তু সময়মতো পাসপোর্ট না পেয়ে তারা বিপাকে আছেন। অনেকের ভিসা, টিকিট নষ্ট হচ্ছে। এজন্য শিক্ষার্থী ও রোগীরাও সমস্যা পোহাচ্ছেন তীব্রভাবে। আঞ্চলিক অফিসগুলোতে পাসপোর্টের জন্য ধরনা দিতে দিতে সেখান থেকে পাসপোর্ট গ্রহীতাদের ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। ঢাকার আগারগাঁওয়ে পাসপোর্ট অফিস থেকে তারা পাসপোর্ট বই সংগ্রহ করছেন। আগারগাঁওয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ পাসপোর্ট পেতে ভিড় করছেন।
সামনে চালু হতে যাওয়া ই-পাসপোর্টকে কেন্দ্র করে এমআরপি (মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট) বইয়ের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। জুলাই মাসে ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ার কথা ছিল। এটাকে কেন্দ্র করে এমআরপি বই একটা সময় ধরে মজুত করা হয়েছিল। কিন্তু ই-পাসপোর্ট জুলাইয়ের পরিবর্তে সেপ্টেম্বরে উদ্বোধন করার সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তীতে ই-পাসপোর্ট আগামী ডিসেম্বর মাসে উদ্বোধন হতে পারে বলে জানা গেছে। এ কারণে আগস্ট মাস থেকে সারাদেশে পাসপোর্ট বইয়ের চরম সংকট দেখা দেয়। এসব ব্যাপারে বহির্গমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সোহায়েল খান বলেন, ‘পাসপোর্ট বইয়ের যে সংকট ছিল, সেটা কেটে গেছে। আমরা ২০ লাখ এমআরপি বই জরুরি ভিত্তিতে আমদানি করেছি। ইতিমধ্যে এসব বই ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র বিমানে চলে এসেছে।’
মো. সোহায়েল খান আরো বলেন, সারাদেশে যেসব আঞ্চলিক অফিসে পাসপোর্ট বইয়ের সংকট ছিল, তা-ও কেটে গেছে। এখন আর পাসপোর্ট বইয়ের সংকট নেই বলে তিনি দাবি করেন।
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে মজুত পাসপোর্ট বইয়ের সংখ্যা ৩ লাখ ৯৯২টি এবং লেমিনেশন ফয়েলের সংখ্যা ৩ লাখ ৭৯ হাজার ৭৩০টি। সরবরাহের অপেক্ষায় রয়েছে ২০ লাখ পাসপোর্ট বই এবং ২০ লাখ লেমিনেশন ফয়েল। প্রতি মাসে গড়ে ৪ লাখ পাসপোর্ট ইস্যু হয়। সে অনুযায়ী এই ২০ লাখ পাসপোর্ট বই দিয়ে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস পর্যন্ত চালানো সম্ভব। তার আগেই ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ার কথা। তখন এমআরপি পাসপোর্ট বইয়ে চাপ কমে আসবে বলে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
সিলেটে পাসপোর্টের সংকট
সিলেট অফিস জানায়, প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটে পাসপোর্ট নিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই। মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও আবেদনকারীরা পাসপোর্ট পাচ্ছেন না। অথচ পাসপোর্টের জন্য আবেদনের ২১ দিনের মধ্যে তা পাওয়ার কথা। কবে যে এই সমস্যার সমাধান হবে, তা-ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলতে পারছেন না। প্রতিদিন সিলেট পাসপোর্ট অফিসে শত শত আবেদনকারী ধরনা দিয়ে ফেরত যাচ্ছেন। সিলেট বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের উপসহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম জানান, প্রতিদিন ৩০০-৪০০ আবেদন জমা পড়ে। মাসে গড়ে প্রায় ৯ হাজার আবেদন সিলেট অফিসে জমা পড়ে। সে অনুযায়ী ডেলিভারি দেওয়া যাচ্ছে না।
যশোরে সাধারণ আবেদনের পাসপোর্ট মিলছে না
যশোর অফিস জানায়, জরুরি পাসপোর্টের জন্য টাকা জমা দিয়েও সাত কর্মদিবসে পাসপোর্ট হাতে পান না আবেদনকারীরা। সাধারণ আবেদনকারীদের অবস্থা আরো ভয়ানক। ২১ কর্মদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট পাওয়ার কথা থাকলেও কবে তা পাওয়া যাবে, সে কথা কর্মকর্তারাও বলতে পারেন না।
রাজশাহীতে সহজে পাসপোর্ট মিলছে না
রাজশাহী থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, রাজশাহীতে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সাধারণ আবেদনের পাসপোর্ট দুই মাসেও মিলছে না। জরুরি ভিত্তিতে আবেদন করা পাসপোর্ট পেতে দুই সপ্তাহ থেকে এক মাস পর্যন্ত সময় লাগছে।