প্রভাবশালীরা নাখোশ সাধারণ মানুষ খুশি

0
680
প্রভাবশালীরা নাখোশ সাধারণ মানুষ খুশি

খবর৭১ঃ রাজধানী থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যন্ত সবখানেই এখন আলোচনার শীর্ষে চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এই অভিযানে একশ্রেণির প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নাখোশ হলেও সারাদেশের সাধারণ মানুষ অনেক বেশি খুশি। অভিযানে দেশের মানুষ সমর্থন দিচ্ছে। জনগণের কাছে সরকার ও আওয়ামী লীগ উজ্জ্বল হচ্ছে।

দলের আদর্শিক ও ত্যাগী নেতারাও এ ব্যাপারে সন্তোষ প্রকাশ করে অভিযান অব্যাহত রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের দল থেকে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন। তবে এই অভিযান আরো বিস্তৃত হবে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার স্পষ্ট ঘোষণা, ‘ছাত্রলীগের পর যুবলীগকে ধরেছি, একে একে সকলকে ধরব।’

দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে জিজ্ঞাসাবাদে অনেক গডফাদারের নাম চলে এসেছে। তালিকায় অনেক মন্ত্রী-এমপি ও প্রভাবশালী রাজনীতিকের নাম এসেছে। এই গডফাদারদের ধরার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলতে চান আইনশৃৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা। আগামী ১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরছেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে গডফাদারদের ধরার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।

মন্ত্রিসভার এক জন সদস্য ও তিন জন সংসদ সদস্য গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, দুর্নীতিতে জড়িত নন এমন মন্ত্রী-এমপির সংখ্যা শতকরা দুই ভাগের বেশি খুঁজে পাওয়া যাবে না। এ অবস্থায় সর্বস্তরে অভিযান চালালে অনেকে ধরা পড়বেন এটাই স্বাভাবিক। এতে দলের সাংগঠনিক শক্তি হ্রাস পাবে। বিষয়টি দলের হাইকমান্ডকে বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এদিকে অপরাধ নির্মূল এবং দলের শুদ্ধি অভিযানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদক্ষেপ ও জিরো টলারেন্স নীতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে স্বাগত জানাচ্ছে সারাদেশের সাধারণ মানুষ। দুই বিভাগের ১০ জন সাধারণ মানুষ ইত্তেফাকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, দলের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত অল্পসংখ্যক নেতার কারণে পুরো আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি এখন প্রশ্নের মুখে। তবে চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে সরকার ও দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে। তারা আরো বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে চালানো এই কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অনেক চাপ ও হুমকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিবেচনায় নিতে হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে একটা শুদ্ধি অভিযানের প্রয়োজন অবশ্যম্ভাবী ছিল, সেটা দেশের আপামর জনসাধারণ স্বীকার করে, আন্তরিকভাবেই প্রত্যাশাও করে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একজন নেতা জানান, দলের নাম ভাঙিয়ে কিছু লোকের অপকর্মের কারণে সরকার ও আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছিল। এদের অপকর্মের দায় বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের ওপর এসে পড়ে। এই অভিযানে কাউকে ছাড়া হচ্ছে না, সে দলের হোক আর দলের ছত্রছায়ায় থেকে করুক। ফলে এই অভিযান জনগণ ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে। এতে জনগণের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার সরকার ও আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি বাড়ছে।

গতকাল কথা হচ্ছিল রাজধানীর একটি মহল্লায় ফুটপাতের এক চায়ের দোকানে। সেখানে উপস্থিত সাধারণ মানুষের কাছে জানতে চাইলাম, এলাকার অবস্থা কী? সবাই জানালেন ঠান্ডা। বললাম, কেমন ঠান্ডা? বললেন, দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজদের কেউ আর প্রকাশ্যে নেই। জানতে চাইলাম, কোথায় গেছে? সবাই বললেন, কে জানে এখন কই থাকে কেউ বলতে পারে না।

দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ায় চার শতাধিক নেতাকর্মী দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। ছয় শতাধিক নেতাকর্মী আছেন আত্মগোপনে। চট্টগ্রাম বিভাগের আওয়ামী লীগের তৃণমূলের একজন নেতা বলেন, দলের নাম ভাঙিয়ে যারা এত দিন অপরাধ করত, তারা এখন টেনশন ও পেরেশানির মধ্যে রয়েছে।

সিলেট বিভাগের এক উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের সুশৃঙ্খল বাংলাদেশ গড়তে সন্ত্রাস, দুর্নীতি, লুটপাট, মাদক ও জুয়ার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানকে সাধুবাদ জানাই।’

খুলনা বিভাগের জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘অনুপ্রবেশকারীদের দাপটে ত্যাগী ও দলের পুরোনো নেতাকর্মীরা হুমকিতে থাকেন। অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা তৃণমূলের নেতাকর্মীরা চাই না কেউ আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে অপকর্ম করুক। আমি এই শুদ্ধি অভিযানকে স্বাগত জানাই।’

আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে দলের যেসব নেতাকর্মী চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, অন্যায়, অপকর্ম, অনিয়ম, দুর্নীতি ও শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে সরকার। তবে বিভিন্ন সেক্টরে দাপুটে, বিতর্কিত এবং আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন তাদের অধিকাংশই পর্দার আড়ালে চলে গেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, টার্গেটে এবার সরকারদলীয় সুবিধাভোগী বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা, পরিবহন চাঁদাবাজ, স্কুল ও কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, কোচিং ব্যবসায়ী, নদী দখলদার, ভূমিদস্যু, বনখেকো, মিথ্যা ঘোষণার অবৈধ মালামাল আমদানিকারকসহ বিভিন্ন শ্রেণির দুর্নীতিবাজরা রয়েছে। শিগগির তাদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করা হবে। সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, রাজউক, শিক্ষা ও বিদ্যুত্ ভবনের ঠিকাদারিতে যারা অনৈতিক প্রভাব রাখতেন, তারাও আছেন নজরদারিতে। এছাড়া আয়ের উত্স না থেকেও অবৈধ সম্পদ অর্জন, সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে ইতিমধ্যে সমালোচিত হয়েছেন- এমন কেন্দ্র থেকে তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধেও বড়ো ধরনের শুদ্ধি অভিযান চালানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে ঢাকায় পরিবহনে চাঁদাবাজি কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। প্রভাবশালী মালিকপক্ষ সরকারের ছাত্রছায়ায় কৌশল বদলে চাঁদার অঙ্ক জিইয়ে রেখেছে। সরকার এবার পরিবহনের চিহ্নিত চাঁদাবাজদের ছাড় দেবে না। ঢাকায় বিভিন্ন রুটের প্রায় ৬ হাজার বাস, মিনিবাস থেকে প্রতি দিন লাখ লাখ টাকা চাঁদা তোলা হয়। এ চাঁদাবাজির নেপথ্যে সরকার সমর্থক প্রভাবশালী চক্র জড়িত। তাদের তালিকাও সরকারের হাইকমান্ডের কাছে। শুধু বাস মিনিবাস নয়, ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় চলাচলকারী টেম্পো, লেগুনা এমনকি ইজিবাইক ও মোটর চালিত রিকশা থেকেও প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চাঁদা তোলা হচ্ছে। এই চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধেও অভিযান চলবে। অতীতে চাঁদাবাজদের অপতত্পরতা রোধে র্যাব-পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েও তা বাস্তবায়ন করা যায়নি। কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা পরিবহন চাঁদাবাজদের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় র্যাব-পুলিশের সব উদ্যোগ ভেস্তে যায়। রাজধানীর শতাধিক পয়েন্টে এ চাঁদাবাজি এখন অপ্রতিরোধ্য রূপ নিয়েছে। পণ্যবাহী ট্রাক থেকে প্রতিদিন গড়ে এক কোটি টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। যানবাহনের চালক, কন্ডাক্টর ও হেলপাররা জানান, কোনো রুটের যানবাহনই চাঁদামুক্ত নয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here