খবর৭১ঃ
ক্যাসিনো চালানো, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজিসহ সব অভিযোগের তীর এখন যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের দিকে। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি রাজধানীর মতিঝিলসহ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার সরকারি দফতর, ক্লাবসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুবলীগের কিছু নেতার অপকর্মের কথা উল্লেখ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এদের মধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়ার নামও ছিল। এ দু’জনের মধ্যে খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়ার মালিকানাধীন অবৈধ ক্যাসিনোয় অভিযানের পর তাকে গ্রেফতার করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, মতিঝিলসহ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় যেসব ক্লাব রয়েছে, তাতে ক্যাসিনোসহ প্রতিদিন চলতো জুয়া। এসব ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করেন যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সম্রাট। সরকারি বিভিন্ন দফতর ও ভবনের টেন্ডারও তার নিয়ন্ত্রণে। এই এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অবৈধ কার পার্কিং থেকেও প্রতিদিন মোটা অংকের চাঁদা ঢোকে সম্রাটের পকেটে। এ সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করে সম্রাটের লোকজন।
আগে থেকে সম্রাটের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ থাকলেও যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি এলাকায় আরও প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন বলে সূত্রগুলো জানায়।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, দলটির কার্যনির্বাহী সংসদের ওই সভায় যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ দলের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজি-অস্ত্রবাজি-দুর্নীতিসহ নানা অপকর্মের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুবলীগের কিছু নেতার অপকর্মের কথা উল্লেখ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তখন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়ার নামও ওঠে।
এরপর গত বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়ার মালিকানাধীন অবৈধ ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপর তাকেও গ্রেফতার করা হয়। পরদিন শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) গ্রেফতার করা হয় যুবলীগের আরেক কথিত নেতা জি কে শামীমকে।
বিভিন্ন ক্লাব ও অপকর্মের সঙ্গে জড়িত নেতাদের অফিস ও বাসায়ও অভিযান চালাচ্ছে শৃঙ্খলা বাহিনী। খালেদ মাহমুদ ও জি কে শামীমের পাশাপাশি কয়েকটি ক্লাবে অভিযান চালিয়ে দেড় শতাধিক লোককেও আটক করা হয়েছে। যারা গ্রেফতার হয়েছেন, তাদের কাছ থেকেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে। যার মধ্যে ‘গডফাদারদের’ নামও রয়েছে বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের নেতারা সরকারের এই কার্যক্রমকে বলছেন ‘শুদ্ধি অভিযান’। তারা বলছেন, এই অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং আরও অনেকে গ্রেফতার হবে।
শুক্রবারই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের একাধিক অনুষ্ঠানে বলেন, কোনো গডফাদারই ছাড় পাবে না, যে যত বড় নেতাই হোক। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এদিকে, এতদিন যুবলীগের পরিচয়ে গ্রেফতারকৃতরা প্রতাপ দেখিয়ে এলেও এখন তাদের দায়িত্ব নিচ্ছে না সংগঠনটি। খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়াকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং জি কে শামীম যুবলীগের কেউ নন বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সংগঠনের এক কর্মসূচিতে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী স্পষ্ট জানিয়ে দেন, যে-ই গ্রেফতার হবে তাকেই সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হবে।
একাধিক সূত্র জানায়, খালেদ মাহমুদ ভুইয়া গ্রেফতার হওয়ার পর সেই রাতে কাকরাইলে নিজের কার্যালয়ে শতাধিক অনুসারীকে নিয়ে অবস্থান নেন ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। তারা গভীর রাত পর্যন্ত সেখানে সম্রাটের পক্ষে স্লোগানও দেন।
বিষয়টি আওয়ামী লীগ ও সরকারের উচ্চ পর্যায় ভালোভাবে নেয়নি বলে জানা গেছে। কী কারণে সম্রাট সেই রাতে এমন অবস্থান নিয়েছেন, তা নিয়ে নানামুখি আলোচনা তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, এটা সম্রাটের জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে।
তবে বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগ বা যুবলীগের কেউ সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে চাইছেন না।