খবর৭১ঃ আজ ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে এক নৃশংস হামলার ১৮তম বার্ষিকী। যুক্তরাষ্ট্রে তথা বিশ্বে একদিনে বড় সন্ত্রাসী হামলা ছিল এটি। হামলায় প্রায় তিন হাজার মানুষ নিহত হয়। কিন্তু সেই যে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের মানুষের মনে সন্ত্রাসের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে তা এখনো কাটেনি। লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের কয়েকটি দেশে যুদ্ধ এখনো চলছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছিল এই নারকীয় হামলা।
যুক্তরাষ্ট্রে বড় পরিবর্তন
২০০১ সালের এই দিনে সন্ত্রাসীরা যাত্রীবাহী চারটি বিমান ছিনতাই করে নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ার বা ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে (স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকাল পৌনে ৯টা) ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দফতর পেন্টাগনে (স্থানীয় সময় পৌনে ১০টা) হামলা চালায়। হামলায় প্রায় এক হাজার কোটি ডলারের সমপরিমাণ সম্পদ ও অবকাঠামো ধ্বংস হয়। সন্ত্রাসীগোষ্ঠী আল-কায়েদাকে দায়ী করা হয় হামলার জন্য। ১১ সেপ্টেম্বর হামলার পর ১২ সেপ্টেম্বর সকাল থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে পরিবর্তন এসেছিল। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ ২০১০ সালে তার ‘ডিসিশন পয়েন্টস’ বইয়ে লিখেছেন, সকাল ৭টায় অফিসে এসেই যুক্তরাষ্ট্রে অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করেছিলাম। বাণিজ্যিক বিমানগুলো নিচেই ছিল। রাজধানী ওয়াশিংটনে সশস্ত্র যানবাহন টহল দিচ্ছিল। পুরো দেশ যেন স্তব্ধ হয়ে পড়েছিল। একটি হামলা সৃষ্টি করেছিল অনেকগুলো সন্ত্রাসবিরোধী সংস্থার।
ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সৃষ্টি হয়। ইউএসএ প্যাট্রিয়ট অ্যাক্ট পাস হয় হামলার পরদিন; যাতে নাগরিকদের ওপর কোনো পরোয়ানা ছাড়াই নজরদারি করা যেতো। সৃষ্টি হয় ইনফরমেশন অ্যাওয়ারনেস অফিস (আইএও)। এর মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নাগরিকদের ইন্টারনেট কার্যক্রম, গাড়ি ক্রয়, ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কেনাকাটার ইতিহাস, বিমানের টিকিট ক্রয়, গাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, ড্রাইভিং লাইসেন্স, কর প্রদান এবং গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিলের তথ্য সম্পর্কেও জানার ক্ষমতা পায়। সমালোচকরা বলেন, এর মাধ্যমে মার্কিনীদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বলতে আর কিছু ছিল না। টুইন টাওয়ার হামলার স্থান পর্যটকদের জন্য দর্শনীয়। নিউইয়র্কে সন্ত্রাসী হামলার স্থলে নির্মিত হয়েছে ‘ন্যাশনাল সেপ্টেম্বর ইলেভেন মেমোরিয়াল অ্যান্ড মিউজিয়াম’।
ভয়ঙ্কর যুদ্ধের শুরু
হামলায় সর্বমোট ২ হাজার ৯৯৬ জন নিহত হন। এর মধ্যে চারটি বিমানে থাকা ১৯ সন্ত্রাসীও ছিল। হামলার প্রতিবাদে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। সেই যুদ্ধ অব্যাহত আছে। ২০১১ সালের ২ মে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন কমান্ডো অভিযানে নিহত হন হামলার পেছনে দায়ী বলে পরিচিত আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন। কিন্তু যারা হামলার পরিকল্পনা করেছিল, অর্থ ও সরঞ্জাম দিয়ে সহায়তা করেছিল তাদের এখনো বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হয়নি। তবে তহবিল দিয়ে সহায়তার অভিযোগে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। মামলাটি বিচারাধীন। কেবল যুদ্ধ নয়, যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় দেশগুলোতে মুসলিম বিদ্বেষও বেড়ে যায়।
যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করে তালেবান আল কায়েদা নেতা লাদেনকে সহায়তা করছে। সেই অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র অক্টোবরে আফগানিস্তানে সামরিক হামলা চালায়। ‘ব্লাড অন আওয়ার হ্যান্ডস : দ্য আমেরিকান ইনভ্যাশন অ্যান্ড ডেস্ট্রাকশন অব ইরাক’ এবং ‘ওবামা অ্যাট ওয়ার’ বইয়ের লেখক ও গবেষক নিকোলাস জে.এস. ডেভিস বিভিন্ন গবেষণার বরাত দিয়ে জানিয়েছেন, গত বছর পর্যন্ত করা হিসাবে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, সোমালিয়া ও ইয়েমেনে ৬০ লাখ মানুষ নিহত হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন যুদ্ধে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ১২ লাখ মানুষ নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে আফগানিস্তানে প্রায় ৮ লাখ ৭৫ হাজার এবং পাকিস্তানে প্রায় ৩ লাখ ২৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। লিবিয়ায় বেসামরিক নাগরিক ও সৈন্যসহ ৭৭ হাজার মানুষের প্রাণ গেছে। ইরাকে শিয়া-সুন্নি বিরোধ দেখা দেয়। সেই যুদ্ধ গিয়ে পড়ে সিরিয়ায় যা এখনো চলছে।
সিরিয়া যুদ্ধে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত এক গবেষণায় বেসামরিক ও সৈন্যসহ ৩ লাখ ৫৪ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। সোমালিয়ায় ২০০৬ সাল থেকে ২০১৭ পর্যন্ত প্রায় ২৪ হাজার মানুষ মারা যায়। এর আগে থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে দেশটিতে প্রায় ৬ লাখ ২৫ হাজার মানুষ নিহত হয়। ইয়েমেনে এক লাখ ২০ হাজার থেকে ২ লাখ ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে যুদ্ধে। এছাড়া মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট ও ন্যাটো বাহিনীর অনেক সৈন্যও মারা গেছেন। সব দেশেই যুদ্ধ এখনো চলছে। ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বারবার সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে যাতে কয়েক লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। নাইন ইলেভেনের ধাক্কা এখনো মানুষকে সহ্য করতে হচ্ছে