খবর৭১ঃ ট্রেনের ছাদে ওঠা এখনও বন্ধ হয়নি। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছাদে ভ্রমণ ঠেকাতে ১ সেপ্টেম্বর থেকে বিশেষ অভিযান শুরুর পর ধীরে ধীরে তা কমে আসছে। সেই সঙ্গে বাড়তে শুরু করেছে টিকিট বিক্রি। বুধবার পর্যন্ত ১ হাজার ৫৯৪ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। বাকিদের জরিমানার পর মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, ৪৬৬টি স্টেশনের মধ্যে মাত্র ৬৯ স্টেশনে (প্রায় ১৫ শতাংশ) অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছে। লোকবলের অভাব ও রেলের কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা না থাকায় বাকিগুলোতে অভিযান চালানো যাচ্ছে না। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। সব স্টেশনে অভিযান চালানো গেলে অবৈধ যাত্রী আটক, জরিমানা ও কারাদণ্ডের পরিমাণ বাড়ত।
ছাদে ওঠা ও বিনা টিকিটে ভ্রমণ বন্ধে সাধারণ মানুষের সহযোগিতা চেয়েছেন রেলপথমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন। তিনি বলেন, ট্রেনের ছাদে যাত্রী ওঠা দণ্ডনীয় অপরাধ। আমরা নির্দেশ দিয়েছি, কোনো অবস্থাতেই ছাদে কাউকে চড়তে দেয়া হবে না। এজন্য আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। যা কিছু করা হচ্ছে, তা যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই। আমরা রেলকে আরও যাত্রীবান্ধব করতে চাই। আরও আধুনিক করতে চাই। ছাদ থেকে পড়ে কারও মৃত্যু হোক তা চাই না।
ঢাকা রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ড্যান্ট মো. শহিদুল ইসলাম জানান, ১ সেপ্টেম্বর থেকে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। তবে এর আগে ২৬ আগস্ট থেকেই ঢাকা রেলওয়ে বিভাগে অভিযান শুরু করি আমরা। ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন ট্রেনের ছাদ থেকে ১ হাজার ১৩৪ জনকে আটক করা হয়। জরিমানা করা হয় ৭৭০ জনকে। আদালতে পাঠানো হয় ৫ জনকে। ২৩৯ জনকে রেলওয়ে থানায় সোর্পদ করা হয়েছে। বাকিদের জরিমানাসহ মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
শহিদুল ইসলাম বলেন, ট্রেনের ছাদে ওঠা সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হলে সাধারণ মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন। যাদের জীবনের মায়া আছে তাদের কখনও ছাদে চড়ার কথা নয়। বহু লোক ছাদ থেকে পড়ে মারা গেছেন। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই অভিযান সফল করতে হবে।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ড্যান্ট আশাবুল ইসলাম জানান, অভিযানে ২৪৭ জনকে আটক করা হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে ১৪৪ জনকে। ৭ জনকে কারাদণ্ড দেয়া হয়। বাকিদের জরিমানাসহ মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (পাকশি) কমান্ড্যান্ট মোর্শেদ আলম জানান, এ অঞ্চলে ব্রডগেজ ট্রেনের ছাদে লোকজন খুব একটা চড়েন না। তবে মিটারগেজ ট্রেনের ছাদে অনেকে ওঠেন। অভিযানে ২১৩ জনকে আটক করা হয়েছে। ১১৬ যাত্রীকে জরিমানা ও ১০ যাত্রীকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, লোকবল কম থাকায় সব স্টেশনে অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছে না। মাত্র ১৫ শতাংশ স্টেশনে অভিযান পরিচালনা করা যাচ্ছে। বিশেষ করে রাতের ট্রেনগুলোতে খুব একটা আটকানো যাচ্ছে না। রাতে ছাদে যাত্রীরা যখন শুয়ে থাকেন- দূর থেকে তা চোখে পড়ে না।
আরেক কর্মকর্তা বলেন, ছাদে ওঠা যাত্রীরা যখনই খবর পান সামনের স্টেশনে অভিযান চলছে, তখন তারা চলন্ত অবস্থাতেই জানালা-দরজা বেয়ে ট্রেনের ভেতরে ঢুকে পড়েন। অভিযান চলা স্টেশন পার হতেই এদের একটি অংশ আবার ছাদে ওঠে। এক্ষেত্রে সাধারণ যাত্রীরা যদি প্রতিবাদী হন তাহলে এটি বন্ধ করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, চলন্ত ট্রেনে ছাদে ওঠা যাত্রীদের আটক করা সম্ভব না, কেননা ওই সময় আটক করতে গেলে যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
রেলওয়ে অপারেশন দফতর সূত্র জানায়, অভিযান শুরু হওয়ায় টিকিট বিক্রি বেড়েছে। বেড়েছে স্টেশনে প্রবেশ টিকিট (প্ল্যাটফর্ম টিকিট) বিক্রিও। তবে টিকিট বিক্রির হিসাব চাইলে ওই সূত্র তা দিতে পারেনি। সূত্রের দাবি, ৫ থেকে ৭ শতাংশ বিক্রি বেড়েছে। প্ল্যাটফর্ম টিকিট বিক্রি বেড়েছে ১০ শতাংশ। তার মতে, অভিযান চলমান থাকলে রেলের আয় যেমন বাড়বে, তেমনি যাত্রী নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে।
১৮৯০ সালের রেলওয়ে আইনের ১২৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী, ‘যদি কোনো ব্যক্তি বিপজ্জনক বা বেপরোয়া কার্যের দ্বারা অথবা অবহেলা করে কোনো যাত্রীর জীবন বিপন্ন করেন, তবে তার ১ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা জরিমানা কিংবা উভয় প্রকার দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।’
এক অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, প্রতিদিন ৩৫৮টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করছে। এসব ট্রেনে প্রচুর বিনা টিকিটের যাত্রী চড়ছেন। অভিযান চালানো হলে এদের অনেকেই জরিমানা দিয়ে হেসে হেসে চলে যান। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া যায় না। বরং জরিমানা আদায়কালে অনেক সময় হামলার শিকার হতে হয় সংশ্লিষ্টদের। ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা না থাকায় এমনকি হামলাকারীদের বিরুদ্ধেও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া যায় না। ২০০৭ সালের ২৯ অক্টোবর সংস্থাপন মন্ত্রণালয় এ ক্ষমতা রহিত করে। ফলে দিন দিন বিনা টিকিটের যাত্রী ও ছাদে ওঠা ব্যক্তির উৎপাত বাড়ছে।
জানতে চাইলে রেলওয়ে মহাপরিচালক (ডিজি) শামছুজ্জামান বলেন, রেলের কর্মকর্তারা ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা ফিরে পেলে অভিযানে আরও সফলতা আসত। তিনি বলেন, আমরা সম্প্রতি যে অভিযান শুরু করেছি তা চালু রাখব। এ ক্ষেত্রে আশা করছি প্রয়োজনীয় ম্যাজিস্ট্রেট আমরা পাব। ছাদে ওঠা বন্ধে আরও কঠোর হবে রেলওয়ে এমনটা জানিয়ে ডিজি বলেন, ঈদের সময়ও কাউকে ট্রেনের ছাদে ওঠতে দেয়া হবে না।