খবর৭১ঃ
হরিরামপুর মানিকগঞ্জের একটি উপজেলা। পদ্মার প্রবল ভাঙনে ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে উপজেলাটি। গত অর্ধশত বছরে এই উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের পাঁচটিই হারিয়ে গেছে নদীগর্ভে। ভেঙে গেছে আরো চারটি ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা।
বর্ষার শুরু ও ভাটার সময় প্রতিবছরই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে পদ্মার ভাঙন। চলতি বছর এর শিকার হয়েছে উপজেলার বাহাদুরপুর বাজারসহ রামকৃষ্ণপুর, কাঞ্চনপুর, ধুলশুরা আর গোফিনাথপুর ইউনিয়নের প্রায় এক হাজার বাড়িঘর, বিস্তীর্ণ কৃষিজমি। নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে রামকৃষ্ণপুর, ধুলশুরা গোফিনাথপুর ও ইউনিয়নে। গত এক সপ্তাহে পদ্মা গিলে খেয়েছে ধুলশুরা ইউনিয়নের সৈয়দনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কমলাপুর জামে মসজিদসহ দুই শতাধিক বাড়িঘর। ভাঙাগড়ার এই খেলায় সব হারানো মানুষগুলো বাধ্য হচ্ছে অন্যত্র বসতি গড়তে। অনেকেই খোলা আকাশের নিচে কাটাচ্ছে মানবেতর জীবন।
হরিরামপুর উপজেলায় ইউনিয়ন ১৩টি। এরইমধ্যে পদ্মায় সম্পূর্ণরূপে হারিয়ে গেছে উপজেলার লেছড়াগঞ্জ, সুতালড়ি, আজিমনগর, হারুকান্দি আর কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন। ভেঙে গেছে বয়ড়া, রামকৃষ্ণপুর, গোফিনাথপুর ও ধুলশুড়া ইউনিয়নের অধিকাংশ ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি। সম্প্রতি ভাঙনের শিকার হয়েছে উপজেলার বাহাদুরপুর বাজার ও ধুলশুরা গ্রামের দুই শতাধিক বসতবাড়ি ও কয়েকটি গ্রামীণ সড়ক। নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে রামকৃষ্ণপুর, ধুলশুরা ও গোফিনাথপুর ইউনিয়নে।
গত শুক্রবার নদীতে ভেঙে পড়েছে উপজেলার ৪৫ নম্বর সৈয়দনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কমলাপুর জামে মসজিদসহ অর্ধশত বসতবাড়ি। ভাঙনের মুখে রয়েছে শতবর্ষী ইব্রাহীমপুর ইশ্বরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়। যে কোনো সময় ভেসে যেতে পারে উপজেলার এই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিও।
ধুলশুরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহিদ খান বলেন, ‘সম্প্রতি সৈয়দনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ তার এলাকার দুই শতাধিক বাড়িঘর নদীতে ভেঙে গেছে। এখনো অব্যাহত রয়েছে ভাঙন। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবগত করলেও ভাঙনরোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
পদ্মার ভাঙন থামাও হরিরামপুর বাঁচাও অন্দোলনকর্মী সোহাগ মুন্সী ও মাসুদুর রহমান বলেন, পদ্মার ভাঙনরোধে আমরা ধুলশুড়া ইউনিয়নের মির্জানগর থেকে বাল্লা ইউনিয়নের মালুচি পর্যন্ত একটি বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলাম। দাবির মুখে ২০১৬ সালে ১১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে মির্জানগর থেকে পয়মালী পর্যন্ত ৮ দশমিক ৮ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। পরে বাঁধটি সম্প্রসারণ করার কথা থাকলেও তা আর করা হয়নি। বাঁধটি মালুচি পর্যন্ত করা হলে ভাঙন থেকে রক্ষা পেত হরিরামপুরের পদ্মা পাড়ের মানুষ। ভাঙাগড়ার খেলায় ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে হরিরামপুর উপজেলা। ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
স্থানীয় সমাজকর্মী আবিদ হাসান বলেন, ‘পদ্মার ছোবলে প্রতিবছর গ্রামের পর গ্রাম বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধটির বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বাঁধটি সুরক্ষায় কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। পদ্মার করাল গ্রাসে হারিয়ে যাবে উপজেলা পরিষদ, থানা কমপ্লেক্স, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।’
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবে মওলা মো. মেহদী বলেন, ‘নদীর ভাঙনরোধে ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এটি প্রয়োজনের তুলনায় কম। এই টাকায় ভাঙনপ্রবণ এলাকায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, ‘নদীর ভাঙনরোধে টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে মাওয়ায় পদ্মা সেতু পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটির জরিপ চলছে। বাঁধটি নির্মাণ করা সম্ভব হলে ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে পদ্মা ও যমুনা নদীর তীরবর্তী এলাকা।’