খবর৭১ঃ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, প্রজ্ঞাপন জারি করেই ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিট কার্যকর করা হবে। সুদের হার কত হবে প্রজ্ঞাপনেই তা উল্লেখ্য করা থাকবে। তবে ঋণখেলাপির এক্সিট প্লান নিয়ে আদালতে বিচারাধীনের বিষয়টি সুরাহা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আশা করি শিগগিরই এর সুরাহা হবে।
রোববার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান ও এমডিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ সব কথা বলেন তিনি। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, আগামীতে ব্যাংকগুলোকে আর নতুন করে কোনো মূলধন দেয়া হবে না। অর্থ উপাজন করেই তাদের বেতন-ভাতা নিতে হবে।
প্রসঙ্গত, গেল সপ্তাহে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংকে নতুন করে চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেয় সরকার।
আগারগাঁও এনইসি সম্মেলন কক্ষে অর্থমন্ত্রী তাদের নিয়ে প্রথম বৈঠক করেন। বৈঠকে নতুন চেয়ারম্যান ও এমডি ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি ব্যাংকের কর্মপরিকল্পনা দাখিল করবেন চেয়ারম্যান ও এমডিগণ। এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মূলত দায়িত্ব পাওয়ার পর ভবিষ্যতে কীভাবে ব্যাংক পরিচালনা করবেন সেটির ওপর একটি কর্মপরিকল্পনায় আমার কাছে দাখিল করবেন তারা।
এ নিয়ে আগামী রোববার পুনরায় তাদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, কর্মপরিকল্পনা পাওয়ার পর আলোচনা ও পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে। আশা করি, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো শীর্ষ পর্যায়ে ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন করে যাদের বসানো হয়েছে তারা প্রত্যেকে পারদর্শী। জীবনের বিশাল একটি সময় ব্যয় করে এ খাতে জ্ঞান অর্জন করেছেন। তারা ভালো করবেন।
ব্রিফিংয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রায় সময় বলা হয় ব্যাংকিং খাতে তারল্যের অভাব। কিন্তু এই মুহূর্তে ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত তারল্য আছে ৯২ হাজার কোটি টাকা। এটি চাইলে বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যবহার করা যাবে।
প্রজ্ঞাপন জারি করে সিঙ্গেল ডিজিটে সুদের হার করা হবে বলেছিলেন, কিন্তু সুদ হার ঠিক করবে বাজার, এ ধরনের উদ্যোগ নিয়ে সরকার অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করবে কিনা জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজার অর্থনীতি অনুসরণ করে আমেরিকা। কিন্তু তাদের অবস্থা দেখেন। সংকটে পড়ে মুদ্রা ছাপিয়ে আবার বাজারে ছাড়ছে। এটি কোনো অর্থনীতিতে পড়ে? বাংলাদেশের সরকার মানুষের জন্য। অর্থনীতি হচ্ছে একটি স্যোশাল সায়েন্স। এর অবস্থা সবখানে আছে। সাধারণ মানুষের যেটি ভালো হবে সরকার তা করবে।
তাহলে কি সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণের সুদ হার কার্যকর করতে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই করা হবে। এখন আদালতে একটি মামলা চলছে। এটি উঠে গেলেই তা করা হবে। প্রজ্ঞাপন জারির সময় নতুন করে সময় দেয়া হবে। আর সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিট বলতে কত হবে সেটিও প্রজ্ঞাপনে ঠিক করে দেয়া হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, খেলাপি ঋণ নিয়ে আমরা সব সময় কথা বলি। আমি বলব, খেলাপি ঋণ কমার সুযোগ নেই। কারণ ঋণ খেলাপি কমাতে যে এক্সিট প্লান দেয়া হয়েছে। সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমানোর জন্যই এক্সিট প্লান করেছিলাম। এখন সেটি আদালতে বিচারাধীন আছে। আর আদালতে বিচারাধীন কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলা যাবে না। আশা করি, খুব শিগগির এর সুরাহা হবে। আর ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের এক্সিট প্লান কার্যকর হলে একটি পরিষ্কার চিত্র পাওয়া যাবে।
ক্ষমতা গ্রহণের পর বলেছিলেন খেলাপি ঋণ এক টাকাও বাড়বে না। কিন্তু এখন বাড়ছে। এটি কি আপনার ব্যর্থতা? এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আপনার দৃষ্টিতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। আমার দৃষ্টিতে বাড়েনি। কারণ খেলাপি ঋণ বাড়বে না আমি বলেছি, একই সঙ্গে আমি একটি এক্সিট প্লানও প্রণয়ন করেছি। কিন্তু সেটি কার্যকর করতে পরিনি। যে কারণে খেলাপি ঋণ কমেনি। আপনি কি মনে করেন এক্সিট প্লান বাস্তবায়ন হলে খেলাপি ঋণ কমবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, অবশ্য সেটি মনে করি।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মপরিকল্পনার মধ্যে সরকারের চাহিদা কী জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়তে দেয়া যাবে না। ব্যাংকগুলোকে কমপক্ষে ১৫ শতাংশ মুনাফা করতে হবে। মুনাফা করেই তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন নিতে হবে। আর ব্যাংকগুলোকে ভবিষ্যতে নতুন করে কোনো মূলধন যোগান দেয়া হবে না। এটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। এ বছর বাজেটে এর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়নি। এ জন্য ব্যাংকগুলোর সম্পদ সঠিকভাবে ব্যবহার করবে।
সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে ব্যাংকের বাইরে রফতানি প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামীতে রফতানির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এমন কয়েকটি রিপোর্ট আমার চোখে পড়ছে। এটি একদম সঠিক কারণ। কারণ ২০০৮ সালে বিশ্ব মন্দাতেও আমাদের রফতানি খাত আক্রান্ত হয়নি। কারণ বাংলাদেশ যে সব পণ্য রফতানি করছে এর চাহিদা সব সময় আছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানুষগুলো এ সব পণ্য ব্যবহার করতেই হবে। ফলে রফতানি হ্রাস পাওয়ার কোনো কারণ নেই। এ ছাড়া দেশের পুজিবাজারেও বিদেশের কোনো অর্থ নেই। যে কারণে রফতানির বাজার ক্ষতির সম্মুখীন নেই।
এ সময় প্রবৃদ্ধি প্রসঙ্গ টেনে অর্থমন্ত্রী বলেন, রোববার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলেছে, চলতি অর্থবছরে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ এবং গত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ। আমি একটি কথা বলতে চাই, বর্তমানে যে সব কার্যক্রম চলছে এটি অব্যাহত থাকলে আগামী বছরগুলোতে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের নিচে নামবে না। কারণ অবকাঠামোগুলোতে যে বিনিয়োগ করা হয়েছে এর ফলাফল এ বছর থেকে পাওয়া শুরু হবে। ফলে জিডিপির প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি হবে। ফলে অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে আগামীতে উদ্বেগের কিছু নেই।