হেপাটাইটিস-বি’ তে আক্রান্ত ৫ কোটির বেশি মানুষ

0
1000
হেপাটাইটিস-বি' তে আক্রান্ত ৫ কোটির বেশি মানুষ
হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস। ছবিঃ সংগৃহীত।

খবর৭১ঃ

বাংলাদেশের ৫ থেকে ৬ কোটি মানুষ হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে আক্রান্ত। এর মধ্যে ৮০ লাখ থেকে ১ কোটি মানুষ আক্রান্ত ক্রনিক হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে। যাদের মধ্যে ১০ শতাংশ মানুষ এই রোগের চিকিৎসায় ব্যয় করেছেন প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। বাকি ৯০ শতাংশ মানুষ চিকিৎসাসেবার বাইরে। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রায় ৮০ লাখ থেকে ১ কোটি মানুষ হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস সারফেস এন্টিজেন পজিটিভ হওয়ার কারণে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে, এমনকি কখনো কখনো নিজ দেশেও চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) লিভার বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) বলেন, বৈজ্ঞানিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৯৬৫ সালে এক অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসীর দেহে প্রথম হেপাটাইটিসটি-বি ভাইরাস শনাক্ত হয়। বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ৩৫ কোটি মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত।

বাংলাদেশে ৫ থেকে ৬ কোটি মানুষ হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে আক্রান্ত। এর মধ্যে প্রায় ৮০ লাখ থেকে ১ কোটি মানুষ ক্রনিক হেপাটাইটিস বি-ভাইরাসে আক্রান্ত। এসব মানুষের বেশিরভাগেরই জীবনের কোনো এক সময় লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যানসারের মতো মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। গবেষণার তথ্যানুযায়ী হেপাটাইটিস-বি আক্রান্ত এদেশের ১০ শতাংশ লোকের চিকিৎসাব্যয় প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ হেপাটাইটিস-বি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা।

ডা. মামুন আরও বলেন, হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে আক্রান্ত প্রায় ৭০ ভাগ রোগীর জন্ডিসে আক্রান্ত হওয়ার কোনো ইতিহাস থাকে না। শতকরা ১০ ভাগ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি আর প্রায় ৯০ ভাগ শিশু, যারা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়; তাদের লিভারে স্থায়ী ইনফেকশন দেখা দেয়। একে বলা হয় ক্রনিক হেপাটাইটিস-বি। এসব মানুষই এইচবিএসএজি পজিটিভ হিসেবে পরিচিত। এ ধরনের রোগীদের প্রায়ই কোনো লক্ষণ থাকে না। এরা কখনো কখনো পেটের ডানপাশে ওপরের দিকে ব্যথা, দুর্বলতা কিংবা ক্ষুধামন্দার কথা বলে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিদেশে যাওয়ার সময় রক্ত পরীক্ষা করতে গিয়ে অথবা ভ্যাকসিন নিতে গিয়ে এসব রোগীর হেপাটাইটিস-বি ইনফেকশনের বিষয়টি ধরা পড়ে। বাংলাদেশের প্রায় ৮০ লাখ থেকে ১ কোটি মানুষ হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের সারফেস এন্টিজেন পজিটিভ হওয়ায় তারা মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে, এমনকি কখনো কখনো নিজ দেশেও চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলোÑ এদেশে বেশ কয়েক হাজার মানুষ প্রতিবছর হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসজনিত লিভার সিরোসিস অথবা লিভার ক্যানসারে মৃত্যুবরণ করছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় এই যে, হেপাটাইটিস-বি অনেকাংশেই নিরাময়যোগ্য একটি রোগ হলেও অ্যাডভান্সড লিভার সিরোসিস অথবা লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত রোগীরা প্রায়ই কোনো শারীরিক অসুবিধা অনুভব করেন না। ফলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগ ধরা পরার পর হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস ইনফেকশনের চিকিৎসা করা সম্ভব হলেও রোগীকে আর সেভাবে সাহায্য করা সম্ভব হয় না।

হেপাটাইটিস-বি' তে আক্রান্ত ৫ কোটির বেশি মানুষ

তিনি আরও বলেন, লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগ দেখা দেওয়ার আগে হেপাটাইটিস-বি শনাক্ত করা গেলে রোগ নিরাময়ের সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে বিশ্বে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য কার্যকর ভ্যাকসিন রয়েছে। বাংলাদেশেও তৈরি হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের হেপাটাইটিস-বি ভ্যাকসিন; কিন্তু এর চিকিৎসায় ভ্যাকসিনের কোনো ভূমিকা নেই। হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে আক্রান্ত মায়ের সন্তান, রোগীর স্বামী বা স্ত্রী, স্বাস্থ্যকর্মী এবং থ্যালাসেমিয়া ও অন্যান্য হেমোলাইটিক এনিমিয়ার রোগীদের জন্য হেপাটাইটিস-বির ভ্যাকসিন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশের মতো যেখানে হেপাটাইটিস-বি সংক্রমণের হার বেশি, সেখানে প্রত্যেকেরই উচিত হেপাটাইটিস-বির ভ্যাকসিন নেওয়া। তবে ভ্যাকসিনটি নিতে হবে কোনো ভালো জায়গা থেকে। কারণ ঠিকমতো সংরক্ষণ করা না হলে ভ্যাকসিন কোনো উপকারেই আসে না।

ভাইরাস সংক্রমণ হয় যেভাবেঃ

বাংলাদেশে প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ নতুন করে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। নারী, গর্ভবতী মা এবং নবজাতক শিশুদের ক্ষেত্রে হেপাটাইটিস-বি সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেশি। বিশেষ করে রক্ত আর স্ত্রী সহবাসের মাধ্যমে এই ভাইরাসটি বেশি ছড়ায়। হেপাটাইটিস-বি আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তমাখা সুঁইয়ের খোঁচায়ও ভাইরাসটি সংক্রমণের আশঙ্কা শতকরা ৩০ ভাগ। আর এই ভাইরাস আক্রান্ত মায়ের সন্তানের জন্মের পর আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ৯০ ভাগ। তবে মায়ের দুধের মাধ্যমে হেপাটাইটিস-বি ছড়ায় না। সামাজিক মেলামেশার মাধ্যমে অর্থাৎ হ্যান্ডশেক বা কোলাকুলি কিংবা রোগীর ব্যবহার্য সামগ্রী যেমন গ্লাস, চশমা, তোয়ালে, জামা-কাপড় ইত্যাদির মাধ্যমেও এ ভাইরাস ছড়ায় না।

লেখকঃ ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল, চেয়ারম্যান, লিভার বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here