শিশুর খিঁচুনি জ্বর

0
1881
শিশুর খিঁচুনি জ্বর
ছবিঃ সংগৃহীত

খবর৭১ঃ

জ্বর হলেই হাত-পা শক্ত হয়ে গিয়ে, চোখ উলটে যাচ্ছে আপনার শিশুটির? কী করবেন তড়কা বা কনভালশন বা খিঁচুনি জ্বর হলে?

কাল থেকে জ্বর হয়ে রয়েছে তিন বছর বয়সী ছোট্ট তিতিরের। কমছে-বাড়ছে কিন্তু একেবারে ছেড়ে যাচ্ছে না। জ্বরের ওষুধ খেয়ে কিছুক্ষণের জন্য শান্তি হলেও, আবার ফিরে আসছে জ্বর। কাল বাবা-মা কারওরই সময় হয়নি, সপ্তাহান্তে ডাক্তারের কাছে যেতেই হবে, এমনটাই পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু এরই মধ্যে বিপত্তি। জ্বরের মধ্যে হঠাত্‌ই প্রচণ্ড খিঁচুনি শুরু হল তিতিরের। ছোট্ট শরীরটা শক্ত হয়ে গেল। চোখ উলটে অজ্ঞান হয়ে গেল। কেঁদে-কেটে একসা বাড়ির সবাই। মেয়েকে বুঝি আর রাখা গেল না। মিনিটদুয়েক পরই অবশ্য জ্ঞান ফিরে এল তিতিরের। ঘ্যানঘ্যান শুরু করল। আধঘণ্টা পর সব স্বাভাবিক। তিতিরের যা হল, ডাক্তাররা তাকে ‘ফিবরাইল কনভালশন বা খিঁচুনি জ্বর’ বলেন। বাংলায় বলে, তড়কা। তবে তড়কা অনেকরকম হয়, অনেক কারণে হয়। আমাদের আলোচনায় যা, তা শুধুই জ্বর থেকে হওয়া কনভালশন বা ‘তড়কা’।

লক্ষণঃ

সাধারণত জ্বরের প্রথম বা দ্বিতীয় দিনই হয় এমন কনভালশন। ছয় মাস থেকে ছয় বছর বয়সী বাচ্চাদের মধ্যেই সাধারণত ব্যাপারটি লক্ষিত হয়। যত কম বয়সে হবে তত বেশিবার হওয়ার সুযোগ থাকে। অনেকে মনে করেন, এর সঙ্গে এপিলেপ্সির সম্পর্ক আছে এবং যাদের কনভালশনের টেন্ডেন্সি থাকে, তাদের মধ্যে পরবর্তী জীবনে এপিলেপ্সি বেশি দেখা যায়। এই ধারণা অনেকাংশেই ভুল। সাধারণত ছয় বছর বয়সের পর আর টিপিক্যাল কনভালশন কোনওরকম প্রভাব ফেলে না। অ্যাটিপিক্যাল কনভালশন দেখলে অবশ্য আমরা অনেকসময় নিউরোলজিস্টের সাহায্য নিতে বলি। দেখতে হয়, ফ্যামিলি হিস্ট্রিও। বাড়িতে কারও আছে কিনা, তা এপিলেপ্সি এবং কনভালশন, দুই ক্ষেত্রেই গুরুত্ত্বপূর্ণ। টিপিক্যাল আর অ্যাটিপিক্যাল কনভালশনের কথা বললাম, লক্ষণটাও জেনে নেওয়া দরকার। অনেকসময় সাধারণ ‘শিভারিং’কেও বাবা-মা ‘তড়কা’ ধরে নিয়ে ডাক্তারের কাছে আসেন।

শিশুর খিঁচুনি জ্বর
ছবিঃ সংগৃহীত

কাঁপুনি কিন্তু ফাইনার, কনভালশন অনেক বেশি ক্রুড। এমনও হয় যে অনেকসময় আমাদের অভিনয় করে বাবা-মাকে জিজ্ঞেস করতে হয়, কী-কী হচ্ছিল। কনভালশনে গা-হাত-পা স্টিফ হয়ে যাবে, চোখ উলটে যাবে, অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে, ডাকাডাকিতে রেসপন্ড করবে না। শিভারিংয়ে শুধুই কাঁপুনি, কথা-টথাও বলতে পারে বাচ্চাটি। তড়কা সন্দেহ করলে, বাবা-মা-রা যেন ছবি তুলে রাখেন। তাতে ডাক্তারদের বুঝতে সুবিধে হয়। ওদিকে অ্যাটিপিক্যাল কনভালশনের ক্ষেত্রে, পুরো শরীরে একসঙ্গে খিঁচুনি না-ই হতে পারে। টিপিক্যাল কনভালশনে জ্বর থাকবেই। অ্যাটিপিক্যালে কোনও নিশ্চয়তা নেই। সাধারণত মিনিট দুয়েক অজ্ঞান থাকার পর কনভালশনের লক্ষণ চলে যায়, সব স্বাভাবিক হয়ে যায়। তা যদি না হয়, সময় পেরিয়ে যেতে থাকে, তাহলে কিন্তু ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতেই হবে।

চিকিৎস্যঃ

কনভালশনের টেন্ডেন্সি থাকলে, জ্বর হলে বাচ্চাকে একটু চোখে-চোখে রাখতে হবে। প্যারাসিটামল খাওয়াতে হবে, সঠিক পরিমাণে জল খাওয়াতে হবে। অনেকে মনে করেন, জ্বর খুব বেশি উঠতে না দিলে কনভালশন হয় না। বা, জ্বর বেশি ওঠার জন্যই নাকি কনভালশন হয়। তা কিন্তু ঠিক নয়। অনেক সময় দেখা যায়, ১০৪ ডিগ্রিতেও কনভালশন হল না, অথচ সেই পেশেন্টেরই ১০০ ডিগ্রিতেই কনভালশন হতে পারে। এখন বেশি কিছু নাকের স্প্রে আছে, যা ব্যবহার করলে কনভালশন ঠিক হয়ে যায়। এখন আরও একটি ওষুধ বেরিয়েছে, যা জ্বরের প্রথম তিনদিন খাইয়ে দিলে উপকার পাওয়া যায়। এবার ধরা যাক, এমন একটা সময় কনভালশন হল, যখন স্প্রেটি কাছে নেই বা রাস্তায় আছে। এমতাবস্থায় কী করণীয়? শিশুটিকে প্রথমেই একটি সুরক্ষিত দিকে নিয়ে গিয়ে পাশ ফিরিয়ে শুইয়ে দিতে হবে। অনেকে জ্বর হলে প্রচুর জামাকাপড় পরান। সেগুলি খুলে দিতে হবে। মনে রাখবেন, দাঁতে দাঁত লেগে গেলে জোর করে তার ভিতরে আঙুল, চামচে ইত্যাদি কিছু ঢোকানোর চেষ্টা করবেন না। পাশ ফিরিয়ে শুইয়ে দেওয়া এই কারণেই যাতে মুখের সিক্রিশন বেরিয়ে যেতে পারে। তারপর সময়টা ওয়াচ করতে হবে যে বাচ্চার কতক্ষণে জ্ঞান ফেরে।

কনভালশনের ‘চিকিত্‌সা’র মূল পয়েন্ট হল, প্যানিক না করা। মাথা ঠান্ডা রাখলেই, ফিবরাইল কনভালশন আর কোনও সমস্যা নয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here