রোগীকে অতিরিক্ত ওষুধ দেয়া ঠেকাতে আসছে মোবাইল কোর্ট

0
769
রোগীকে অতিরিক্ত ওষুধ দেয়া ঠেকাতে আসছে মোবাইল কোর্ট

খবর৭১ঃ প্রেসক্রিপশনে (ব্যবস্থাপত্র) লেখার অস্পষ্টতা এবং রোগীকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ওষুধ দেয়া নিয়ে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। এর মুখে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সারা দেশে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তারা বিষয়টির তদারকি করবে।

ডাক্তারদের অনেকেই ওষুধ কোম্পানিগুলোর স্বার্থ দেখছেন এবং প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি ওষুধ দিয়ে প্রেসক্রিপশন লিখছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, চিকিৎসক এবং রোগীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে অল্প সময়ের মধ্যে তারা একটি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছেন।

প্রেসক্রিপশনে লেখার অস্পষ্টতার বিষয়টি হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছিল দু’বছর আগে। আদালত তখন চিকিৎসকদের স্পষ্ট ও পড়ার উপযোগী করে প্রেসক্রিপশন লিখতে বলার পাশাপাশি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে তা তদারকি করতে বলেছিলেন।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্ণধার ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, কোনো আইন বা নীতিমালা না থাকায় পরিস্থিতি উদ্বেগজনকের দিকেই এগোচ্ছে। অন্য দেশে যেমন ধরেন, ব্রিটেনে রোগীদের জন্য যত প্রেসক্রিপশন লেখা হয়, সেগুলো র‌্যানডম বাছাই করে প্রেসক্রিপশন অডিট করা হয়। এর ভিত্তিতে হেলথ সার্ভিস থেকে ডাক্তারকে প্রতি মাসে চিঠি লিখে ভুল থাকলে তা ধরিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এ কাজটা হয় না। ফলে ওষুধ কোম্পানির স্বার্থকে তারা দেখে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক মালিহা রশিদ বলেন, রোগটা যখন চিহ্নিত করা যায়, তখন ওই রোগের সুনির্দিষ্টভাবে চিকিৎসা করাটাই আমি ভালো মনে করি। এ ছাড়া যারা অভিজ্ঞ ডাক্তার, তাদের প্রেসক্রিপশনের সাইজ অত বড় করার কারণ নেই।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) কর্মকর্তা ডা. জামালউদ্দিন বলেন, প্রয়োজনের বেশি ওষুধ দেয়ার বিষয় এলে নৈতিকতার প্রশ্ন আসে। এসব বিষয়ে কোনো অভিযোগ না এলে তাদের অ্যাসোসিয়েশনের কিছুই করার নেই। তিনি আরও বলেন, অনেক সময় ডাক্তার একটা বা দুইটা ওষুধ লিখলে রোগীরা সন্তুষ্ট হতে চান না। তারা মনে করেন, কী ডাক্তার যে কম ওষুধ দিল। ফলে বেশি ওষুধ লেখা- এটা দুই দিকেই সাইকোলজিক্যাল একটা বিষয়ও থাকে।

জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক মানুষের উদ্বেগের বিষয় তুলে ধরে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব বাবলু কুমার সাহা বলেন, ডাক্তারদের এমন নির্দেশনা আমরা দিয়ে থাকি, যাতে রোগীর ওপর চাপ না হয়। যে ওষুধটি তাকে দেয়ার কথা, সেটিই যেন দেয়া হয়।

এমনকি অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে কথা হচ্ছে, হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন। সে ব্যাপারেও আমরা নির্দেশ দিয়েছি যে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করা যাবে না। কিন্তু এটি মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা আছে কি না, সেই প্রশ্নে বাবলু কুমার সাহা বলেন, এ বিষয়েও মন্ত্রী বুধবার সব জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা দিয়েছেন, যাতে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমেও বিষয়গুলো তদারকি করা হয়।

কোনো আইন বা নীতিমালা না থাকা প্রসঙ্গে বাবলু কুমার সাহা বলেন, স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা নামের একটি আইন প্রক্রিয়াধীন আছে। এটি আমরা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছিলাম। তারা কিছু বিষয়ে সংশোধনীর জন্য ফেরত পাঠিয়েছে। আমরা সেগুলো সংশোধন করে এখন দ্রুত আবার ভেটিংয়ের জন্য পাঠানোর চেষ্টা করছি। এ আইন পাস হলে রোগী ও চিকিৎসক উভয়েরই নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here